◆সন্দীপ দে◆
টয়লেটে ঢুকে সিরিঞ্জের সাহায্যে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নিতে গিয়ে ধরা পড়লেন পূর্ব মেদিনীপুরের অ্যাথলিট জয়িতা ভৌমিক। ঘটনাটি ঘটেছে বৃহস্পতিবার সাইয়ের মাঠে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপে (অনূর্ধ্ব-১৬ ও অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগ)। এদিন সাইয়ের মাঠে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স চ্যাম্পিয়নশিপের প্রথম দিনেই এমন ঘটনা ঘটেছে। ইভেন্টে নামার বেশ কিছুক্ষণ আগে টয়লেটে যান পূর্বমেদিনীপুরের অনূর্ধ্ব-১৮ বিভাগের অ্যাথলিট জয়িতা ভৌমিক। তাঁর সন্দেহজনক আচরণ লক্ষ্য করে জয়িতাকে জিজ্ঞাসা করা হয়। ওই মুহূর্তে তার ব্যাগ থেকে সিরিঞ্জ পাওয়া যায়। পরে রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তাদের জেরার সময় নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নেওয়ার কথা স্বীকার করেন মহিলা অ্যাথলিট জয়িতা।
এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে রাজ্য আ্যাথলেটিক্স সংস্থার সচিব কমল মৈত্র ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”ঘটনা সত্যি। পূর্ব মেদিনিপুরের এই অ্যাথলিট নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নিতে গিয়ে ধরা পড়েছে। এই চ্যাম্পিয়নশিপ থেকে আমরা তাকে বাতিল করে দিয়েছি। শুধু তাই নয়, আমাদের কমিটি বসে এই অ্যাথলিটকে সাসপেন্ড করবে। নিয়মে যা আছে তাই হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খেলাধূলা জগতে ডোপ করার প্রবণতা মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে। এই বিষয়ে গতকাল রাজ্য সভায় সোচ্চার হয়েছেন ভারতীয় প্রাক্তন অ্যাথলিট পিটি উষা। তিনি সভায় বলেন,ডোপ করা বন্ধ না হলে ভবিষ্যৎ খুব খারাপ হবে। শুধু পিটি উষা নয়,অতীতে আর এক অ্যাথলিট অঞ্জুববি জর্জ অভিযোগ করেছিলেন, কিছু বিদেশি কোচ ভারতে এসে নিষিদ্ধ স্টেরয়েড দিয়ে থাকে। অ্যাথলিটদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে।
একটা জেলার অখ্যাত মহিলা অ্যাথলিট সিরিঞ্জের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ড্রাগ শরীরে নিচ্ছে এটা ভাবতে পারছেন না অনেকেই। পূর্ব মেদিনীপুরের এক ক্রীড়া সংগঠক (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”আমি ভাবতেই পারছি না। বাচ্চা মেয়ে। নিয়ম করে আমাদের এখানে অনুশীলন করে। জয়িতা কি ড্রাগ নিয়েছে আমি জানি না। যেটা শরীরে নিয়েছে সেটা নিষিদ্ধ ঔষধের মধ্যে পড়ছে কিনা জানি না। তবে ওর ব্যাগ থেকে সিরিঞ্জ পাওয়া গিয়েছে শুনেছি। অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এটা আমাদের লজ্জা। কি প্রতিক্রিয়া দেবো বলুন তো?”
অ্যাথলেটিক্সের কোচ ‘দ্রোনাচার্য’ কুন্তল রায় জয়িতার নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নেওয়ার ঘটনায় এতটুকু অবাক হননি। কিছুটা হতাশ হয়ে কুন্তলবাবু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”এটা একটা রোগ। সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। আমাদের এখানে প্রপার ডোপ টেস্ট করার সুযোগ নেই। ভাল ভাবে,নিয়ম করে ডোপ টেস্ট হলে অনেকেই ধরা পড়বে। জয়িতার দূর্ভাগ্য ধরা পড়েছে। এই রোগ বন্ধ করতে হলে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে একা সম্ভব নয়। রাজ্য সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। আমার মনে হয় এই যে পাড়ায় পাড়ায় জিম গজিয়ে উঠছে সেটাই নিষিদ্ধ স্টেরয়েডের রুট। মাসল বৃদ্ধির জন্য তিন মাস, ছয় মাসের প্যাকেজ দেয়। সাংঘাতিক ব্যাপার। নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নেওয়ার ব্যাপারটা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে।”
ভারতের প্রাক্তন বিখ্যাত অ্যাথলিট সোমা বিশ্বাস ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর কাছ থেকেই জয়িতার নিষিদ্ধ স্টেরয়েড নেওয়ার খবরটি শুনে অবাক হয়েছেন। সোমা বলছিলেন,”আপনাদের কাছে প্রথম শুনলাম। যদি সত্যিই হয় তাহলে সত্যিই খুব দূঃখজনক ঘটনা। রাজ্য স্তরের চ্যাম্পিয়নশিপে এমন ঘটতে পারে ভাবতেই পারছি না। অবাক করার মতো ঘটনা। যারা এই সব নিষিদ্ধ ঔষুধ শরীরে নিচ্ছে তারা এই ব্যাপারে অনেক কিছুই জানে না। অজ্ঞতা থেকে এই সব নিষিদ্ধ ঔষুধ নিয়ে থাকে। কোন ঔষুধ কোনটা নিষিদ্ধ আর কোনটা নিষিদ্ধ নয় এই ব্যাপারে অনেকেরই পরিস্কার ধারণা নেই।”
ইনসাইড স্পোর্টসের এই প্রতিনিধি এদিন সাইয়ের মাঠে উপস্থিত ছিল। জয়িতা বা তার কোচকে মিডিয়ার সামনে আনতে চাননি রাজ্য অ্যাথলেটিক্স সংস্থার কর্তারা। তবে তাঁরা জানিয়েছেন,নিজের ভুল স্বীকার করে সংস্থার কাছে একটি নাকি মুচলেকা জমা দিয়েছেন। এক কর্তা জানান, জয়িতার সর্বোচ্চ তিন বছরের নির্বাসন হতে পারে।
এদিন এই চ্যাম্পিয়নশিপে সমস্ত জেলা সহ মোট ৩২ইউনিট অংশ গ্রহণ করছে। মোট প্রতিযোগীর সংখ্যা ৫৭৮ জন। জেলা থেকে যারা এসেছেন তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে যুবভারতীর ডর্মেটরিতে।