সুকৃতি দত্ত, সচিব সিআরএ
◆সন্দীপ দে◆
২৪ দিন পর বিতর্কিত রেফারি তন্ময় ধর ও ম্যাচ কমিশনার উদয়ন হালদারকে ডেকে জরুরি সভা করলেন সিআরএ (ক্যালকাটা রেফারিজ অ্যাসোসিয়েশন) সচিব সুকৃতি দত্ত। মঙ্গলবার বিকেল চারটের সময় সিআরএ তাঁবুতেই বৈঠক শুরু হয়। এদিনই এবারের লিগে মহমেডান ম্যাচের লাল কার্ড বিতর্কে অভিযুক্ত রেফারি তন্ময় ধর ও সেই ম্যাচ কমিশনার উদয়ন হালদার উপস্থিত ছিলেন। এই সভায় সুকৃতি দত্ত ছাড়াও ছিলেন ভোলা দত্ত, সুব্রত সরকার, গোপিনাথ পাইন সহ আরও ছয় প্রাক্তন রেফারি। প্রথমে উদয়ন হালদারকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তন্ময় ধরকে আলাদা করে পুরো ঘটনা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এই ব্যাপারে ইনসাইড স্পোর্টসের পক্ষ থেকে তন্ময় ধর ও উদয়ন হালদারকে প্রশ্ন করলে তারা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁরা বলেন,”আমরা এই ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।”
আইএফএ সচিব যে ভাবে রেফারিদের সমালোচনা করেছিলেন তার জন্য রেফারির একটা বড় অংশ ক্ষুব্দ হয়েছেন। যদিও সুকৃতিবাবু কোনও প্রতিবাদ করেননি। ২৫ অক্টোবর ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে তিনি বলেছিলেন,”আগামী সাতদিনের মধ্যেই কি করছি জানতে পারবেন।” আট দিনের মাথায় তিনি সভা ডাকলেন ঠিকই কিন্তু সিআরএ আছে সেই পুরনো সিআরএতেই।
প্রশ্ন : আপনারা আইএফএ কে প্রতিবাদ পত্র পাঠাচ্ছেন? কি সিদ্ধান্ত নিলেন?
সুকৃতি দত্ত : আমরা চিঠি পাঠিয়েছি। কি চিঠি পাঠিয়েছি সেটা আপনাকে বলা যাবে না।
প্রশ্ন : আপনিই তো বলেছিলেন, “সাতদিনের মধ্যে জানতে পারবেন!”
সুকৃতি দত্ত : আইএফএ সচিব আপনাদের ও একটি সংবাদপত্রে যা বলেছেন তার পর আর কি বলব?
প্রশ্ন : জয়দীপ মুখার্জি দাবি করেছেন, আপনারা লিখিত ভাবে জানিয়েছেন কিছু রেফারি আছে যারা বাংলার ম্যাচ খেলাতে নারাজ। অথচ আইএফএ সচিবকে বহু রেফারি ফোন করে বলেছেন তাদের ম্যাচ পোস্টিং দেওয়া হয় না।
সুকৃতি দত্ত : আমরা আইএফএকে এই মর্মে চিঠি দিয়েছি ঠিকই। কিন্তু আমরা পোস্টিং দিই না সেটা মনে হয় ঠিক নয়।
প্রশ্ন : তাহলে আপনি আইএফএ সচিবকে বলছেন না কেন যে,এটা ঠিক নয়।
সুকৃতি দত্ত : দেখুন ভাই,আমরা আইএফএ-এর অধিনে। তারা অনেক কিছুই করবে আপনাদের মাধ্যমে জানতে পেরেছি। নতূন করে কি বলব? আমাদের বলে তাই ম্যাচ খেলায়।
প্রশ্ন: সিআরএ সচিব হিসেবে আপনারও তো একটা দায়িত্ব থাকে।
সুকৃতি দত্ত : ওই যে বললাম, আমরা আইএফএ-এর অধিনে। যতটুকু বলার তা আমরা বলি তো।
প্রশ্ন : আইএফএ সচিব বলেছেন,তিনি কখনই সিআরএ-এর বিরুদ্ধে নয়। সচিব পদে বসার পর প্রথম বকেয়া টাকা মিটিয়েছেন আপনাদের।
সুকৃতি দত্ত : বকেয়া মিটিয়েছে ঠিকই কিন্তু দুই লক্ষ টাকা আমাদের ছাড়ও দিতে হয়েছে। রেফারিদের ফিস কিন্তু বাড়ানো হয়নি।
প্রশ্ন : আইএফএ তো এবার বোর্ড তৈরি করবে।
সুকৃতি দত্ত : ভাল তো। বোর্ড তো আগেই ছিল। টেকনিক্যাল লোক নিয়ে বোর্ড করলে ভাল হয়। না হলে সমস্যা হবে।
প্রশ্ন : আপনি একজন প্রাক্তন রেফারি। তন্ময় ধরের সিদ্ধান্ত কি ঠিক ছিল? প্রদীপ নাগ বলেছেন, যারা বিচার করেছেন তাদের মধ্যে কোনও টেকনিক্যাল ব্যক্তি ছিল না।
সুকৃতি দত্ত : ঠিক কথা। দেখুন,একটা সাইডের ভিসুয়াল দেখে সব কিছু স্পষ্ট হয়?
প্রশ্ন : তাহলে তন্ময় ধরের সিদ্ধান্তকে আপনি সমর্থন করছেন? যদি সমর্থনই করেন তাহলে অলিখিত ভাবে রেফারি তন্ময় ধরকে ফ্রিজ করে দেওয়া হল কেন?
সুকৃতি দত্ত: শুনুন,এভাবে সব কথা আমরা বলতে পারি না। আইএফএ চিঠি পাঠিয়েছিল। তন্ময়ের ব্যাপারে। আমরাও তার উত্তর দিয়েছি। তারপরও একটা চিঠি পাঠিয়েছি। তার উত্তর এখনও পাইনি। আমরা রেফারিদের পাশেই আছি।
প্রশ্ন : আইএফএ থেকে বলা হচ্ছে তন্ময় প্রথম ফেসবুকে বিষয়টা তুলে ধরেছে। কিন্তু তার আগে মহমেডান ক্লাবের অফিসিয়াল বেলাল আহমেদ ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে পোষ্ট করেন। ক্লাবকর্তা এটা করতে পারেন?
সুকৃতি দত্ত : আমিও শুনেছি,দেখেওছি। ম্যাচ শেষ হওয়ার কিছুক্ষনের মধ্যেই বিতর্কিত সিদ্ধান্তর ছবি,ভিডিও পোষ্ট করেন বেলাল। এটা ঠিক নয়। (পাশে বসে থাকা গোপিনাথ পাইন বলে ওঠেন, “ইউনাইটেডের নবাবও একই জিনিস করেছে। এটা ঠিক করেনি”। )
প্রশ্ন : বেলাল আহমেদ,নবাব ভট্টাচার্য পোষ্ট করে ঠিক করেননি। কিন্তু রেফারি প্রতীক মন্ডলও কর্তাদের বিরুদ্ধে পোষ্ট করেছিলেন। আপনারা কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন?
সুকৃতি দত্ত : ঠিকই। আমরা কথা বলেছি। ভবিষ্যতে যাতে এমন কিছু আর না হয় সেই ব্যাপারে বলা হয়েছে।
রেফারিদের কাজটাই ‘থ্যাঙ্কলেস জব’। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রেফারি ক্যান্টিনে দাঁড়িয়ে এক প্রাক্তন ফিফা রেফারি (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলছিলেন,”আমাদের সংস্থার কর্তাদের জন্যই এসব হয়। আগে তো ক্লাব কর্তারা চাপ দিত। এখন তো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরাও এই বৃত্তে ঢুকে পড়েছে। হাতে কলম নিয়ে লেখা যায় অনেক কিছু। মুখে বাঁশি নিয়ে মাঠে নামলে বুঝতে পারবেন।”
অতীতেও দেখা গিয়েছে তিন প্রধান কর্তারা রেফারিদের উপর প্রভাব খাটিয়ে গিয়েছেন। অভিযোগ,এখনও নাকি তাই হয়। তবে এবার তো আইএফএ সচিব প্রকাশ্যে সিআরএ-এর ‘ঝুঁটি’ ধরে টেনে বুঝিয়ে দিয়েছেন সিআরএ-এর কোনও ক্ষমতায় নেই।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর “উলঙ্গ রাজা” কথা মনে পড়ছে বার বার। সবাই দেখছে যে, রাজা উলঙ্গ, তবুও সবাই হাততালি দিচ্ছে।
সবাই চেঁচিয়ে বলছে; শাবাশ, শাবাশ! শুধু ভয়ডরহীন একটি শিশু রাস্তায় হাঁটতে থাকা উলঙ্গ রাজাকে বলে উঠল, -“রাজা তোর কাপড় কোথায়?”সিআরএতে “উলঙ্গ রাজা”-র সেই ‘শিশু’ আজও জন্মাল না।