◆শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভায় আইএফএ সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস,সচিব অনির্বান দত্ত ও সভাপতি অজিত ব্যানার্জি◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : লিগ না খেলায় ভুল স্বীকার করে, ক্ষমা চেয়ে এবং স্পনসর দিয়ে শাস্তি মুকুব এটিকে মোহনবাগানের। সোমবার আইএফএ-এর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির সভায় উপস্থিত ছিলেন এটিকে মোহনবাগানের সিইও বিনয় চোপড়া। আইএফএ সচিব ও সভাপতির দাবি, বিনয় চোপড়া ওই সভায় নাকি ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চেয়েছেন। ভবিষ্যতে আইএফএ-এর সব টুর্নামেন্টে অংশ নেবে। পাশাপাশি বাংলার ফুটবলের স্বার্থে নার্সারি লিগকে স্পনসর করবে এটিকে মোহনবাগান। সভায় মৌখিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছেন সেটাই আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে লিখিত ভাবে (মুচলেকা) আইইএফএতে জমা করবে।
এটিকে মোহনবাগানের সিইও বিনয় চোপড়া এদিন বৈঠক শেষে সংবাদ মাধ্যমের সামনে বিবৃতি দেননি। সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় আইএফএ থেকে বেড়োনোর সময় শুধু বলে গেলেন,”আমাদের মিডিয়া ম্যানেজার ঘন্টা খানেকের মধ্যে প্রেস বিবৃতি আপনাদের পাঠিয়ে দেবে।” কিন্তু রাত সাড়ে বারোটা পযর্ন্ত এটিকে মোহনবাগানের তরফ থেকে কোনও প্রেস বিবৃতি আসেনি।
এটিকে মোহনবাগানের মুচলেকা দিয়ে বেঁচে যাওয়ার ঘটনায় আইএফএ-র ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে। আইএফএ-এর বিরুদ্ধে বহু বছর ধরে অভিযোগ আছে যে, তারা কখনও মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গলের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নিতে পারে না। অতীতে প্রদ্যোৎ দত্ত একবার দোর্দন্ডপ্রতাপ মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবকে সাসপেন্ড করে দিয়েছিলেন। ওটাই আইএফএর শেষ কড়া পদক্ষেপ ছিল। প্রদ্যোৎবাবুর মৃত্যুর পরবর্তীকালে দুই প্রধানকে কখনও ঘাঁটাতে সাহস দেখাতে পারেননি কোনও সচিবই।
আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলছেন,”এটিকে মোহনবাগান ক্ষমা চেয়েছে। এবার থেকে সব টুর্নামেন্টে খেলবে। সেই সঙ্গে নার্সারি লিগকে সাপোর্ট করবে। এটা ফুটবলের জয়।”
আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জির কথায়,”আমরা ফুটবলের উন্নয়ন চাই। যা কিছু হচ্ছে ফুটবলের ভালর জন্যই হচ্ছে।”
আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত বললেন,”সন্তান যদি ভুল কাজ করার পর বাবা-মায়ের কাছে ক্ষমা চায় তাহলে বাবা-মা তারপরেও সেই সন্তানকে চাবুক মারবে? এটিকে মোহনবাগান ক্ষমা চাইছে এটাই তো বড় ব্যাপার। আইএফএ-এর জয়, ফুটবলের জয়।”
এটিকে মোহনবাগান আইএফএ-এর কাছে ক্ষমা চাইছে,এটা অবশ্যই রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থার কাছে অবশ্যই বড় জয়। কিন্তু তার পরও একাধিক প্রশ্ন উঠছে। মুচলেকা দিয়ে আর স্পনসরের টাকা দিলেই শাস্তি মুকুব? ময়দানের অনেক ছোট ক্লাব কর্তারাও ব্যাপারটা মানতে পারছেন না। নূন্যতম শাস্তি দেওয়া যেত না? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
১) আইএফএ-এর সংবিধানে আছে কোনও ক্লাব পরপর দুই বছর লিগ না খেললে, সেই ক্লাবের অ্যাফিলিয়েশন বাতিল হয়ে যাবে। এটিকে মোহনবাগান এই অপরাধটাই করেছে। তারপরও মুচলেকা দিয়ে বেঁচে গেল। এটা কি বড় ক্লাব বলে এমনটা ঘটল? নূন্যতম শাস্তি পাবে না? কিসের এত ভয় আইএফএ-র?
২) এটিকে মোহনবাগান না হয়ে যদি কোনও ছোট ক্লাবের ক্ষেত্রে এমনটা হত, তাহলে আইএফএ কি ছেড়ে দিত?
৩) এই ঘটনার পর ভবিষ্যতে যে কোনও ক্লাব লিগ না খেলে, পরে মুচলেকা দিয়ে ক্ষমা চেয়ে নেবে। তখন কি করবে আইএফএ?
৪) আইএফএ-এর যে পাঁচ সদস্যর শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি আছে তাদের মধ্যে মাঠের প্রবীন কর্তা বাবলু কোলে ও সমর পাল আছেন। যাদের যথেষ্ট গ্রহণযোগ্যতা আছে। বাকি তিনজন একেবারেই ‘নাদান।’ এরা কিভাবে কমিটিতে এলেন? শৃঙ্খলারক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে বাবলু কোলে, সমর পালদের মতো বাকি তিনজন অভিজ্ঞ ব্যক্তি থাকবে না কেন? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি একটা প্রহসন মাত্র?
৫) শৃঙ্খলাহীন কাজ করার পরেও যদি মুচলেকা দিয়ে বাঁচা যায়, তাহলে আইন,সংবিধান এবং শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি রাখার প্রয়োজন আছে?
৬) আইএফএ সচিব,সভাপতি,চেয়ারম্যান এটিকে মোহনবাগানের ‘ক্ষমা’ চাওয়ার ঘটনা সামনে এনে আইএএফের দুর্বল প্রশাসনকে আড়াল করছেন না কি?
আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত বলছেন,’মোহনবাগান না খেললে মাঠে দর্শক হবে না। স্পনসর আসবে না।’ কিন্তু গত দুই বছর এটিকে মোহনবাগান ছাড়াই লিগ হয়েছে। এসএনইউ স্পনসরও ছিল। মাঠে দর্শক আগের মতো হবে কি? দুই প্রধান দল আইএসএলে অংশ নেওয়ায় ভবিষ্যতে কোনও দিনই এক নম্বর দল কলকাতা লিগে খেলাবে না। ভবিষ্যতে তারকাহীন কলকাতা লিগ হবে। রিজার্ভ দল বা অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলবে। বাংলার ফুটবলে অতীতের সেই উন্মাদনা আদৌ ফিরে আসবে কিনা বলা শক্ত।
আইএফএ-এর এই সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তা শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বললেন,”আইএফএ-এর কাজের ক্ষমতা কতটা আছে সেটা তাদের কাজেই বুঝে নিতে হবে।”
শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্তর বক্তব্যর অর্থ বোঝার জন্য বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই। আইএফএ আছে সেই আইএফএতেই।