ইউনাইটেড স্পোর্টস – ৩ (সুব্রত মুর্মূ ২৫/৩৮)
বিএসএস – ১ (দীপক রজক ২০)
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১৫ সেপ্টেম্বর : শিশির ঘোষের পর বাংলার ফুটবলে উঠে এসেছিলেন একাধিক স্ট্রাইকার। কিন্তু প্রতিষ্ঠিত হতে পেরেছিলেন সঞ্জয় মাঝি,দীপেন্দু বিশ্বাস, রহিম নবি (শুরুটা স্ট্রাইকার,পরে একটু নিচে নেমে এমনকি উইংয়েও খেলেছেন),অসীম বিশ্বাস। এঁরা শিশির ঘোষকে ছুঁতে না পারলেও বাংলার ফুটবলে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন। তারপর? বাঙালি স্ট্রাইকারের তীব্র অভাব। বিদেশিদের ভিড়ে আরও যেন হারিয়ে গেল সঞ্জয়,দীপেন্দু,অসীমদের উত্তরসূরীরা।

বাঙালি ভুলে গিয়েছিল বুক চিতিয়ে গোল করতে। বাঙালি ভুলে গিয়েছিল বিদেশিদের সঙ্গে টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যেতে। যারা এখন টিভির পর্দায় বিদেশি ফুটবল দেখে কলকাতার ফুটবল দেখে নাক সিটকোয়,তারাও ভুলে গিয়েছিল বাঙালি (পড়ুন স্ট্রাইকার) ফুটবল খেলে। রাজ্যের ফুটবল যখন বিপন্ন তখন যেন সুব্রত “সব গাছ পেরিয়ে,উঁকি মারে আকাশে”। ক্রমশ আরও উপরে ওঠার লক্ষ্যে শালবনীর টিলাখুলা গ্রামের সুব্রত মুর্মূ।

বিপক্ষের দুজন ডিফেন্ডারের মাঝখান দিয়ে এক ঝটকায় বেরিয়ে বাঁ পায়ের বিশাক্ত ইনসাইড শট,বল জালে। তারপরেই মুষ্ঠিবদ্ধ হাত নিয়ে শূন্যে লাফ দিয়ে উঠলেন সুব্রত। এ গোল শুধু ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে গোল করা নয়, এ যেন হারিয়ে যাওয়া বাঙালি স্ট্রাইকারদের ফিরে আসার মূহুর্ত। তার হাতে যেন বাংলার ফুটবলের অদৃশ্য বিজয় পতাকা। হ্যাঁ, বলতে দ্বিধা নেই, সুব্রত মুর্মূ যেন বাঙালি স্ট্রাইকারদের আত্মতৃপ্তির অনুশীলন।
আজ, কল্যাণী স্টেডিয়ামে কলকাতা লিগের ম্যাচে শক্ত প্রতিপক্ষ বিএসএস। ম্যাচের ২০ মিনিটের মাথায় দীপক রজক গোল করে এগিয়ে দিয়েছিলেন বিএসএসকে। পিছিয়ে পড়েও ফিরে আসা যায়। প্রমাণ দিলেন সুব্রত। ম্যাচের ২৫ ও ৩৮ মিনিটে পরপর দুটি অসাধারণ গোল করে একাই ইউনাইটেডকে এগিয়ে নিয়ে গেলেন।

এদিনের ম্যাচে ইউনাইটেডের থেকে বল পজিশন, কর্ণার অনেক বেশি ছিল বিএসএসের। কিন্তু ফুটবলে গোলটাই তো আসল। সুব্রত ৯০ মিনিটে চারটি শট নিয়েছেন। গোল করেছেন দুটি। আর দিলীপ ওঁরাও ম্যাচে একটি শট নিয়েছেন, গোল করেছেন একটা (ম্যাচের ৭৬ মিনিট)। ফলাফল? ৩-১ গোলে বিএসএসকে হারাল ইউনাইটেড স্পোর্টস।
আলোকেশ কুন্ডু-নবাব ভট্টাচার্যর দলে এক ঝাঁক বাঙালি আছে। কোনও একজনের উপর নির্ভর করে বেগুনি দলকে খেলতে দেখা যাচ্ছে না। কোনও ম্যাচে জগন্নাথ,তন্ময় খেলে দিচ্ছেন তো অন্য ম্যাচে তফাৎ গড়ে দিচ্ছেন বাসুদেব, তারক, প্রল্হাদরা। তবু যেন সুব্রত একটু যেন আলাদা।
এখনও পযর্ন্ত তিনটি ম্যাচ খেলে তিনটি গোল করে ফেললেন। তার মধ্যে একটি প্রতিশ্রুতিমান ফুটবলার ও একটি ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার পেয়ে গেলেন। শান্ত, সাদামাঠা চেহারার সুব্রতর পায়ে বল পড়লেই যেন জেদি,ডাকাবুকো এক বাঙালি স্ট্রাইকার। ইউনাটেড স্পোর্টসের হাত ধরে বাংলার ফুটবলে কী তবে এক তারকার জন্ম হল? উত্তর ভবিষ্যৎ বলবে।