▪সন্দীপ দে ▪
এবারের আইএফএ শিল্ডের ক্রীড়াসূচী ঘোষনা করা হবে আগামী ১৮ নভেম্বর। কিন্তু তার আগে এই শিল্ড আয়োজনকে ঘিরে উঠছে একাধিক প্রশ্ন। শুক্রবার শিল্ড নিয়ে সচিব জয়দীপ মুখার্জি অংশগ্রহণকারী দল গুলিকে নিয়ে বৈঠক করলেন। সব থেকে বড় প্রশ্ন হল, শিল্ডে খেলার জন্য নতুন করে ফুটবলার সই করাতে হলে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারকে সিআরএস করাতে হবে। কিন্তু নিয়ম যদি মানতেই হয় তাহলে তো আগামী জানুয়ারি মাসের আগে সিআরএস করার সুযোগই নেই। গত অক্টোবর মাসে উইন্ডো শেষ হয়ে গিয়েছে। এই উইন্ডো খুলবে ২০২১ জানুয়ারি মাসে (এখন ট্রানসফার উইনডো বন্ধ। তাই নতুন করে প্লেয়ার নেওয়ার নিয়ম নেই। কিন্তু গত ২০ অক্টোবরের আগে যদি কোনও ফুটবলারের রিলিজ থাকে তাহলে এখন সই করাতে পারবে) অথচ শিল্ডে খেলতে প্রায় বেশির ভাগ ক্লাবকে কয়েকজন ফুটবলারকে নতুন করে নিতেই হবে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ফুটবলারকে সিআরএস করানোটা বাধ্যতামূলক। তাহলে উপায়? অভিযোগ, শুক্রবারের বৈঠকে এআইএফএফের প্রতিনিধি নাকি বলেই দিয়েছেন যে, গত উইন্ডোর মধ্যে যে ফুটবলারদের নথিভুক্ত করেছে এমন ভাবে দেখিয়ে দিয়ে শিল্ডের জন্য ফুটবলার নিতে পারে ক্লাব গুলি। অর্থাৎ ব্যাক ডেটে? একেবারে নিয়ম বহির্ভূত। রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থার একটা সরকারি বৈঠকে এই কথা কি করে বলতে পারেন এআইএফএফ প্রতিনিধি? তাও আবার আইএফএ সচিবের সামনে। সচিব জয়দীপের নীরবতা কি প্রমাণ করে? তিনি কেন চুপ করে শুনে সমর্থন করলেন? প্রশ্ন উঠছে।
শুক্রবারের এই বৈঠকে উপস্থিত তিন ক্লাব কর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে একই কথা বলেন। তাঁদের কথায়, এআইএফএফ প্রতিনিধি বৈঠকের আলোচনায় জানিয়েছে, নতুন ফুটবলার তারা নিতে পারে। ঘটনা সত্যি। সবাইকে নিয়েই চলতে হবে। ফুটবল বন্ধ আছে। মাঠে ফুটবল ফিরে আসুক, সবাই চাই।
আপনারা প্রতিবাদ করলেন না?
” কি হবে প্রতিবাদ করে? সিআরএস নিয়ে ফেডারেশনের ছেলেটি কেন এ কথা বললো, বুঝতে পারছো না? এটা একটা অলিখিত আন্ডারস্ট্যানডিং। যেটা ঘটেছে তা অন্যায়। আবার এটাও ঠিক, ফুটবল শুরু হওয়া দরকার।” বলছিলেন প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্লাবের এক সিনিয়র কর্তা। কিন্তু একজন ফেডারেশনের প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত কর্তাটি বৈঠকে এই ধরনের কথা বলতে পারেন? দায়িত্বহীনতার পরিচয়। যতোই “অফ দ্য রেকর্ড” বলে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, পুরো বিষয়টাই অন্যায়, অবিবেচকের কাজ। শিল্ডের এই বৈঠকে যে সমস্ত ক্লাব কর্তারা ছিলেন তারা কেন প্রতিবাদ করতে পারলেন না? যে তিন কর্তা আমাদের কাছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শর্ত দিয়ে মুখ খুলছেন, তাঁরাও কিন্তু সেই বৈঠকে “হীরক রাজার দেশ”-র মন্ত্রীসভার সদস্যদের মতো “ঠিক, ঠিক” বলে গিয়েছেন।
সিআরএস নিয়ম মেনে শিল্ড হলে তো ইস্টবেঙ্গলের আবেদনও মানা যেত। মোহনবাগানকেও পাওয়া যেত। তাহলে শিল্ডের ওজন বেড়ে যেত।
গতবারের লিগ জয়ী পিয়ারলেস কর্তা অশোক দাশগুপ্তকে ফোন করে কোনও প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। তবে সাদার্ন সমিতির শীর্ষকর্তা সৌরভ পাল বলেন,”এমন ঘটনা নিয়ে কিছু বলার নেই। আমাদের দল শিল্ডে খেলার অপেক্ষায় আছে। আইএফএ আজ শিল্ডে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক দলকে এক লক্ষ টাকা করে চেক দিয়েছে। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। তার মধ্যে দিয়েও আই লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলা হয়েছে। আশাকরি শিল্ডও সুষ্ঠুভাবে হবে।”
সৌরভবাবুর কথার রেশ ধরেই বলা যায়, সিআরএস বিতর্ক ছাড়াও শিল্ডে ফুটবলারদের করোনায় নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। সদ্য শেষ হওয়া আইলিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের খেলার আগে ফুটবলারদের বায়োবাবোলের ব্যবস্থা ছিল। অর্থাৎ ঝুঁকিপূর্ণ বলেই ফুটবলারদের নিরাপত্তার কথা ভেবেই কিন্তু বায়োবাবোলের ব্যবস্থা করেছিল এআইএফএফ। তাহলে আইএফএ শিল্ড করার ক্ষেত্রে একই নিয়ম কেন মানা হবে না? যেখানে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সেখানে এত অবহেলা কেন? আই লিগের সময় ফেডারেশন একটা সার্কুলার পাঠিয়েছিল যে, রাজ্য সরকার অনুমতি দিলে বা নিয়ম বিধি বেঁধে দিলে সেই নিয়ম মেনে খেলা করতে হবে। শিল্ডে কোনও বায়ো বাবোলের ব্যবস্থা থাকছে না। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে ক্লাব গুলোকে নিজের দায়িত্বে করোনা টেস্ট করাতে হবে। পরের ধাপে টেস্ট করাবে আইএফএ। এখন যদি কোনও ফুটবলারের কোনও ক্ষতি হয়ে যায়, তার দায় কে নেবে? আইএফএ দায়িত্ব নেবে? জয়দীপরা কি রাজ্য সরকারের কোনও গাইড লাইন নিয়েছেন? আইএফএর এক কর্তা বলছিলেন, “করোনা নিয়ে চাপ তো আছে। টেনশনে আছি। টুর্নামেন্টে কিছু হয়ে না যায়। “ইনসাইড স্পোর্টস”ও চায়, ফুটবল ফিরে আসুক। কিন্তু সঠিক নিয়ম নীতি মেনে।
মাঠ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। আইএফএ জানিয়েছে, কল্যাণী, রবীন্দ্র সরোবর, হাওড়া ও মহমেডান মাঠে শিল্ডের ম্যাচ হবে। সেমিফাইনাল ও ফাইনাল হবে যুবভারতীতে। অথচ মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল মাঠে খেলা হবে না কেন? বৈঠকে দাবি করেছিলেন, খিদিরপুর ক্লাবের কর্তা অমিতাভ বিশ্বাস। কিন্তু দুই প্রধানের মাঠে শিল্ড হচ্ছে না। কেন দুই প্রধান মাঠে শিল্ডের ম্যাচ করতে পারবেন না? ব্যাখ্যা করতে পারবেন জয়দীপ?
প্রিমিয়ার ডিভিশনের এক কর্তা (জয়দীপ ঘনিষ্ট) বলছিলেন, “সন্দীপ, সিআরএস, বায়োবাবোল নিয়ে না লিখে, ক্লাবগুলিকে ১ লক্ষ টাকা দিয়েছে আই এফএ, সেটা লেখো।” পরে জানা যায়, এই এক লক্ষ টাকা হল ক্লাবগুলির বকেয়া টাকার একটা অংশ পেমেন্ট মাত্র। শিল্ড খেলার জন্য বাড়তি এই টাকা নয়।
শুক্রবারের ঘটনার প্রতিক্রিয়া আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জির কাছ থেকে পাওয়া যায়নি। তিনি আবার বেশ কিছু রিপোর্টার কে ফোনে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাতে পছন্দ করেন না। তাঁর কাজে ব্যাঘাত হয়। গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় এই প্রতিবেদককে জয়দীপ ফোনে জানিয়েছিলেন, প্রতিক্রিয়া কখনও নিতে হলে আইএফএতে গিয়ে তাঁর চেম্বারে পৌঁছতে হবে। ডিজিটাল যুগে সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে সিন্ধু, সানিয়া বা কুশল দাস থেকে জয় শাহ ফোনে প্রতিক্রিয়া দিতে পারেন। সেখানে জয়দীপ বিরক্ত হন (তিন সাংবাদিক ছাড়া)। আইএফএর ইতিহাসে যা আগে কখনও হয়নি। লজ্জাও বটে।
সরকারি খবর দেওয়ার ক্ষেত্রে বিভাজন নয়, সমবন্টনে বিশ্বাস করতেন বিশ্বনাথ দত্ত, প্রদ্যোৎ দত্ত, রঞ্জিত গুপ্ত, সুব্রত দত্ত, উৎপল গাঙ্গুলিরা।
শুক্রবারের সন্ধ্যায় ফোন করে “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর পাঠকদের কাছে আইএফএ সচিবের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারল না। তবে আমরা কথা দিচ্ছি, আগের মতোই আমরা সঠিক খবর পরিবেশন করার ধারাবাহিকতা বজায় রাখব।
উল্লেখ্য, এবারের শিল্ডে ১২ দল অংশ নিচ্ছে। মহমেডান, খিদিরপুরপুর,জর্জ টেলিগ্রাফ, পিয়ারলেস, এরিয়ান, ইউনাইটেড স্পোর্টস, সাদার্ন সমিতি ও বিএসএস ছাড়াও আই লিগের ইন্ডিয়ান অ্যারোজ, গোকুলম ও সুদেবা এবারের শিল্ডে অংশ নিচ্ছে। ইস্টবেঙ্গল না খেললে তার পরবর্তী দল হিসেবে কালীঘাট এম এস বা রেনবোকে নেওয়া হতে পারে। কারণ এই দুটি ক্লাব শিল্ড খেলতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।