◆সন্দীপ দে◆
আইএফএ-এর পক্ষ থেকে আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল যে, এবারের কলকাতা লিগে অবনমন থাকছে না। গত সোমবার প্রিমিয়ার এ ডিভিশনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিক সম্মেলনে অবনমন না থাকার কথা স্বীকারও করেছিলেন আইএফএ সভাপতি ও সচিব। শুধু তাই নয়, প্রিমিয়ার ‘এ’ ডিভিশনের বৈঠক শেষে উপস্থিত ১৩টি ক্লাবের কর্তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় ৬ পাতার মডালিটিস। নিজেদের মতামত দুদিনের মধ্যে জানাতে বলা হয়। এই ৬ পাতার প্রথম পাতায় একটা জায়গায় উল্লেখ আছে ২০২১-২০২২ মরসুমের প্রিমিয়ার এ ডিভিশনে অবনমন থাকছে না (“No relegation will be applicable for this particular season 2021-2022 premier division A”)। ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সবই ঠিক ছিল,কিন্তু মঙ্গলবার প্রিমিয়ার এ ডিভিশনের ক্লাবগুলোকে লিগের মডালিটিস হার্ড কপিটাই মেল করে পাঠানো হয়। ৬ পাতার মডালিটিসের সব এক থাকলেও একটি জায়গায় বদল করে ফেলেছে আইএফএ। আর তাই নিয়ে ক্লাব কর্তারা চরম বিভ্রান্তে। কি এমন বদল ঘটিয়ে ফেলেছে আইএফএ? মেল কপিতে লেখা হয়েছে নিচের দলটি অবনমনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে আইএফএ (“Relegation of bottom team shall be decided by IFA”)।
লিগে এবার অবনমন থাকবে না বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠক ও লটারি করে গ্রুপ তৈরি করার পর এই মর্মে চিঠিও ধরিয়ে দেওয়া হল। তাহলে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে অবনমন থাকা, না থাকার বিষয়টা কেন বদলে ফেলল আইএফএ?
লিগ শেষে নিচের দলের অবনমন হবে কিনা তা ঠিক করবে আইএফএ। তারমানে অবনমন নেই, এটা বলা যাচ্ছে না। আইএফএ-এর দুই রকম বয়ান নিয়ে ময়দানে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। প্রিমিয়ার ‘এ’ ক্লাবের অধিকাংশ কর্তারা বিভ্রান্ত। অবনমন থাকছে কিনা কর্তারা বুঝতে পারছেন না। সেটা জানতেই আজ, বুধবার আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জিকে ইতিমধ্যে চিঠি দিয়েছেন টালিগঞ্জ অগ্রগামী, রেলওয়ে এফসি। পিয়ারলেস, কাস্টমস, মহমেডান স্পোর্টিং সহ একাধিক ক্লাব চিঠি দিতে চলেছে।
টালিগঞ্জ অগ্রগামীর অন্যতম কর্তা শুভঙ্কর ঘোষদস্তিদার ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানালেন,”প্রথম যখন লিগ নিয়ে মিটিং হয় তখনই বলা হয়েছিল অবনমন থাকবে না। কারণ করোনার কারণে কোনও দলই ভাল দল করতে পারবে না। ছোট করে হলেও লিগটা হলে সবাই অল্প বিস্তর উপকৃত হবে। কিন্তু মঙ্গলবার আইএফএ-এর মেলটা দেখে অবাক হলাম। তাও আবার বলা হচ্ছে নিচের টিমের অবনমনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে আইএফএ। গভর্নিং বডির সদস্যরা ছাড়া সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। কি যে হচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমরা আজ সকালেই আইএফএকে চিঠি দিয়ে জানতে চেয়েছি।”
মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কর্তা কামারউদ্দিন জানান,”এই ধরনের মেল এসেছে শুনেছি। সত্যিই কনফিউসিং। আমাদেরও চিঠি পাঠাতে হবে।” রেলওয়ে এফসির ফুটবল বিভাগের অন্যতম কর্তা রাজু দত্ত ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে বলছিলেন,” আমি মঙ্গলবারই আইএফএ-এর মেল পেয়েছি। সব জিনিসের স্বচ্ছতা থাকা দরকার। লিগ শেষ হওয়ার পর যদি কোনও ছোট দল নিচে থাকে, তাহলে তাকে অবনমন করিয়ে দেবে না তার কি নিশ্চয়তা আছে? অথচ শুরু থেকে বলা হচ্ছিল অবনমন নেই। আর্থিক সমস্যা সব ক্লাবের। তিন প্রধান ছাড়া কেউ ভাল দল গড়তে পারবে না। অবনমন থাকলে সমস্যা হবে ছোট দলের। আমরা আইএফএকে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি। আগে ওরা জানাক কি করতে চাইছে। তারপর আমরা সিদ্ধান্ত নেব।”
পিয়ারলেসের কর্তা অশোক দাশগুপ্ত বলেন,”মেলের পাঠানো কপির একটা লাইনটা আমাদের বিভ্রান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে। মিটিংয়ে বলা হয়েছিল লিগ কাম নকআউট খেলা হবে। ছোট করেও হলেও মাঠে বলটা নামুক। সেক্ষেত্রে অবনমন থাকবে না। এটা তো পুরো লিগ হচ্ছে না। তাহলে অবনমনের প্রশ্ন আসছে কি করে। সবাই রাজিও হয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। অথচ মেল করে অন্যরকম বলা হচ্ছে। আশাকরি আইএফএ-এর সুষ্ঠুভাবে একটা সিদ্ধান্ত নেবে।” জয়দীপ মুখার্জির ক্লাব বিএসএসের সচিব সন্দীপন ব্যানার্জি জানান,”আইএফএ থেকে একটা মেল এসেছে। কিন্তু লিঙ্কটা খুলছে না। আমি জয়দীপের সঙ্গে কথা বলব।”
অবনমন নিয়ে কেন এমন জটিলতা? আইএফএ-এর একটা সূত্র থেকে জানা গেল, প্রথমত, লিগ না খেললে ইস্টবেঙ্গল যাতে শাস্তি না পায় তারজন্য অবনমনটাই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তটা ময়দানের বিভিন্ন মহল ব্যাপারটা ভালভাবে নিচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, সোমবার প্রিমিয়ার এ ডিভিশনের বৈঠক থেকে সচিব জয়দীপ মুখার্জি কেন ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকারকে ফোন করে লিগ খেলার ব্যাপারে জানতে চাইলেন? ফুটবল সংক্রান্ত নিয়ে যাবতীয় রাইটস যেখানে শ্রীসিমেন্টের সেখানে দেবব্রত সরকার কে? তাঁর মতামতের কি মূল্য আছে? কিছুদিন আগে ইস্টবেঙ্গল সচিব কল্যাণ মজুমদার চিঠি দিয়ে আইএফএকে জানিয়ে দিয়েছেন, এবার থেকে ফুটবল নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে শ্রীসিমেন্টের সিইও শিবাজি সমাদ্দারের সঙ্গে । তারপরও জয়দীপ বৈঠক থেকে শিবাজি সমাদ্দারকে ফোন না করে কেন দেবব্রত সরকারকে করলেন?
তৃতীয়ত, শোনা যাচ্ছে লিগ না খেললে ইস্টবেঙ্গলের কোনও শাস্তি হবে না- এই ব্যাপারটা নাকি মোহনবাগান মানতে পারছেন না। প্রিমিয়ারের এক ক্লাব কর্তা বলছিলেন,”আরে মিটিংয়ে এক কথা বলছেন। পরে তা বদলে ফেলছেন। কিছু বলার নেই।”
এই বিভ্রান্তি নিয়ে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি জানান,”আমরা সোমবার যে হার্ড কপি দিয়েছি সেটা ড্রাফট মডালিটি। পরে আমরা মেল করে একটু বদলেছি ঠিকই। কিন্তু এটা চূড়ান্ত নয়। যে কারণে আমরা প্রত্যেক ক্লাবকে তাদের মতামত জানানোর জন্য দুদিনের মধ্যে চিঠি দিতে বলেছি।”
কিন্তু “Relegation of the bottom team shall be decided by IFA” – এই লাইনটাতেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। এই লাইন কেন? জবাবে জয়দীপ মুখার্জি পরিস্কার জানিয়ে দেন,”আমি আবার বলছি এটা চূড়ান্ত নয়। যারা লিগে অংশ নেবে তাদের অবনমনের আওতায় পড়বে না। কিন্তু যারা খেলবে না তাদের বিরুদ্ধে সংবিধান অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। আমরা খুব শীঘ্রই একটা মিটিং ডাকবো। সেখানেই সব পরিস্কার হয়ে যাবে।”