◆হরিদেবপুরের অজেয় সংঘতি ক্লাবের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত◆
◆সন্দীপ দে◆
এক মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। না, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনির্বান আইএফএ সচিব নয়, তিনি হলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একদা কাছের মানুষ, দাদা প্রদ্যোৎ দত্তর সেই ছোট্ট ছেলে জয়।
২০১১ সালে বামফ্রন্টকে হারিয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর রাইটার্স বিল্ডিংয়ে প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করেছিলেন মমতা। সেই সাংবাদিক সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করেছিলেন,”আজ আপনার কার কথা বেশি করে মনে পড়ছে?” উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “আজ আমার প্রদ্যোৎদার কথা খুব মনে পড়ছে। আজ তিনি বেঁচে থাকলে প্রদ্যোৎদা খুব খুশি হতেন। ওনাকে খুব মিস করছি।” দীর্ঘ ১১ বছর পর মমতার মুখে ফের উঠে এল আইএফএ-এর দোর্দন্ডপ্রতাপ সচিব প্রদ্যোৎ দত্তর কত স্মৃতি। এর কারণ অবশ্যই আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত।
সোমবার হরিদেবপুরের ৬২ বছরের অজেয় সংঘতি ক্লাবের দুর্গা পূজার উদ্বোধনে এসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সচিব প্রদ্যোৎ দত্তর ছেলে জয় ওরফে আনির্বান দত্ত। হরিদেবপুরের অজেয় সংঘতি ক্লাবে এসে মুখ্যমন্ত্রী জানতে পারেন তাঁর প্রিয় প্রয়াত দাদা প্রদ্যোৎ দত্তর ছেলেও এসেছেন। খোঁছ নিলেন অনির্বানের। মুখ্যমন্ত্রীকে সামনে পেয়ে শ্রদ্ধার সঙ্গে প্রণাম করে আর্শীবাদ নিয়ে নিলেন অনির্বান।
মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন পুজো উদ্বোধন করতে। কিন্তু অনির্বানকে দেখে একদা প্রিয় তাঁর প্রদ্যোৎদার স্মৃতির কথা শোনালেন মমতা। তিনি তখনও অগ্নি কন্যা হননি। তবে রাজনীতির জগতে মমতা কঠিন লড়াই করে তীব্র গতিতে উঠে আসছেন। সেই সময় সব রকম ভাবে মমতার পাশে ছিলেন প্রয়াত প্রদ্যোৎ দত্ত। দাদা হিসেবে ছোট বোনকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। সেই অতীতকে ভুলে যাননি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। হরিদেবপুরের অজেয় সংঘতি ক্লাবের মঞ্চে উঠে মমতা বলছিলেন,” প্রদ্যোৎদা আমার দাদার মতো। আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তাঁর বাড়িতে আমার নিয়মিত যাতায়াত ছিল। রবীন্দ্র সরোবর বাঁচানোর জন্য যে সবুজ বাঁচাও আন্দোলন করেছিলাম তা প্রদ্যোৎদা আমার পাশে না থাকলে সম্ভব হত না। প্রদ্যোৎদার সঙ্গে কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তাঁর স্নেহ কখনও ভুলতে পারবো না।”
প্রদ্যোৎ দত্ত দিল্লিতে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছিলেন। তখন অনির্বান, অনিন্দ এবং প্রদ্যোৎ দত্তর স্ত্রী দিল্লি গিয়ে উঠেছিলেন তৎকালীন এমপি মমতার ফ্ল্যাটে। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন মমতা বলছিলেন,”প্রদ্যোৎদা অসুস্থ। দিল্লির আমার ফ্ল্যাটে বৌদিরা উঠেছিলেন। আমার আজও মনে পরে যাচ্ছে আমার ঠাকুরের কাছে সিঁথির সিঁদুরের কৌটো ফেলে রেখে গিয়েছিলন বৌদি।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজও প্রদ্যোৎ দত্তকে ভুলতে পারেননি। তা দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন প্রদ্যোৎ দত্তর জৈষ্ঠ পুত্র ও আইএফএ-এর বর্তমান সচিব অনির্বান দত্ত। মঞ্চেই মমতার সঙ্গে কথাও হয় অনির্বানের। কি কথা হল? প্রশ্ন করলে অনির্বান বলেন, “আমি সেই ছোট বেলা থেকে উনাকে দেখে আসছি। খুবই স্নেহ করতেন। পুরনো দিনের কথা হচ্ছিল।” এরপর মঞ্চে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অনির্বান বলেন,” বাংলার শ্রেষ্ঠ পুজো হল দুর্গোৎসব। তেমনি বাংলার শ্রেষ্ঠ খেলা ফুটবল। পুজোর ব্যস্ততার মধ্যেও যেভাবে কলকাতা ফুটবল লিগ করতে পারছি তার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে আমার কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।”
এদিকে, এআইএফএফের ফুটসল কমিটি সদস্য পদ থেকে সোমবার পদত্যাগ করেছেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত।