লক্ষ্মণের ছোঁয়ায় নতুন রূপে তমলুকে তাম্রলিপ্ত কাপ

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : বাম জমানায় হলদিয়ার ‘বেতাজ বাদশা’ ছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। হলদিয়ায় তিনিই ছিলেন শেষ কথা। রাজনীতি বাদ দিলে তিনি ছিলেন ফুটবল প্রেমী। সুব্রত দত্ত যখন আইএফএ-এর সচিব ছিলেন তখন বাংলার ফুটবলে একটি সংগঠিত আবাসিক ফুটবল ক‍্যাম্প শুরু হয়েছিল হলদিয়ায়। সুব্রতবাবুর আবেদনে সেই ফুটবল ক‍্যাম্পকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন লক্ষ্মণ শেঠ। কোনও রকম কার্পন‍্য করেননি। হলদিয়া স্টেডিয়ামে ফুটবলারদের অনুশীলন। ফুটবলারদের জন‍্য আলাদা থাকা-খাওয়ার সুব‍্যবস্থা নজর কেড়েছিল বাংলার ফুটবল মহলে। সেই ক‍্যাম্পে কোচিং করিয়ে গিয়েছেন মহম্মদ হাবিব,জহর দাস,সুজিতরা। এই ক‍্যাম্প থেকে উঠে এসেছিল বেশ কিছু প্রতিভা। প্রদ‍্যোৎ দত্তর প্রচেষ্টায় ‘হরলিকস ফুটবল ক‍্যাম্প (হাওড়া ইউনিয়ন মাঠে) – এর পর আইএফএ-এর এই ফুটবল ক‍্যাম্পটাই ছিল বাংলার একমাত্র আবাসিক ফুটবল ক‍্যাম্প।

একদা হলদিয়ায় আইএফএ-র ফুটবল অ‍্যাকাডেমির হস্টেল (ফাইল ছবি)

সফলভাবেই এই ক‍্যাম্প চলেছে বছরের পর বছর। পরবর্তীকালে রাজনীতির পালাবদলে লক্ষ্মণ শেঠের ক্ষমতাটাই চলে যায় শুভেন্দু অধিকারীর হাতে। তিনি এই ফুটবল ক‍্যাম্পটিকে লক্ষ্মণের মতো ভালভাবে দেখাশোনা করেননি। পরে আইএফএ-এর তৎকালীন সচিব উৎপল গাঙ্গুলি ফুটবল ক‍্যাম্পটি হলদিয়া থেকে বারাসতে নিয়ে এলেও চালু রাখতে পারেননি।

হলদিয়া স্টেডিয়ামে আইএফএ অ‍্যাকাডেমির ফলক (ফাইল ছবি)

গত ১১ বছরে লক্ষ্মণ শেঠ একাধিক রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু ফুটবল প্রেমটা একই আছে। ফুটবলের হাত ধরে সমাজের ফের মূল স্রোতে ফিরছেন হলদিয়ার একদা বেতাজ বাদশা লক্ষ্মণ শেঠ। নিজের কলেজ আইকেয়ারের পৃষ্ঠপোষকতায় পূর্বমেদিনীপুরের তমলুক শহরে নতুন রূপে শুরু করতে চলেছেন ‘তাম্রলিপ্ত ফুটবল কাপ’। চ‍্যাম্পিয়ন ও রানার্স দলকে যথাক্রমে ৪ লক্ষ ও ৩ লক্ষ টাকার পুরস্কার মূল‍্য দেওয়া হচ্ছে। টুর্নামেন্টটা বড় ভাবে করতেই বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে রীতিমতো সাংবাদিক সম্মেলন করে নিজের ফুটবল সংগঠনে ফেরার বার্তা দিয়ে গেলেন।

তাম্রলিপ্ত কাপের সাংবাদিক সম্মেলনে লক্ষ্মণ শেঠ। বৃহস্পতিবার কলকাতা ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবে।

লক্ষ্মণ শেঠের কথায়,”সুব্রতবাবু (দত্ত) আমার বিশেষ পরিচিত ও বন্ধু। তাঁর পরামর্শে হলদিয়ায় শুরু করেছিলাম আইএফএ-র ফুটবল অ‍্যাকাডেমি। দারুন চলছিল। কিন্তু রাজনীতির পালাবদলের পর অ‍্যাকাডেমিটা বন্ধ হয়ে যায়। আমি একটা সময় নিজে ফুটবল খেলেছি। ফুটবলটাকে এখনও ভালবাসি। তমলুকের ফুটবল উন্মাদনা ফেরাতে আমরা নতুন করে তাম্রলিপ্ত কাপ করতে চলেছি। অনেক লক্ষ‍্য নিয়ে এগোতে চাইছি।”

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯ মে থেকে ১৬ দলীয় এই ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু হবে তমলুক রাখাল মেমোরিয়াল ক্লাবের মাঠে। ফাইনাল ১৯ জুন। গোয়া,পঞ্জাব,বিএসএফ থেকে কলকাতার ইউনাইটেড স্পোর্টস,রেলওয়ে এফসি,কাস্টমস দল এই টুর্নামেন্টে অংশ নিতে চলেছে। রহিম নবি,মেহেতাব থেকে হীরা মন্ডল, অসীম বিশ্বাস সহ এক ঝাঁক ফুটবলারদের উপস্থিতিতে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন হবে।

প্রসঙ্গত,২০০৭ সালে বন্দর নগর তাম্রলিপ্ত নামেই এই টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল শালগেছিয়া খেলা ঘর। শুরু একাধিক স্পনসর নিয়ে জাঁক জমক ভাবে শুরু হলেও পরবর্তীকালে ঝিমিয়ে পড়ে তাম্রলিপ্ত কাপ। বর্তমানে আর্থিক মন্দার বাজারে লক্ষ্মণের ছোঁয়ায় ফের প্রাণ ফিরে পেতে চলেছে তমলুক শহরের একদা জনপ্রিয় “তাম্রলিপ্ত কাপ”।
ফুটবলকে সামনে রেখে আপনার লক্ষ‍্য কি? উত্তরে লক্ষ্মণবাবু বললেন,”তমলুক থেকে ফুটবলার উঠে আসুক। ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক ব‍্যানার্জি নিজের ফুটবল টিম করে কলকাতা লিগে খেলবে। খুব ভাল উদ‍্যোগ। আমরাও চাই কলকাতা লিগে খেলতে। সুব্রত দত্তকে ফোনে আমার ইচ্ছের কথা জানিয়েছি। তিনি দেখা করতে বলেছেন। আমরা টুর্নামেন্ট শেষ করেই সুব্রত দত্তর সঙ্গে আলোচনায় বসব।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here