◆বেনিয়াটোলার অভিযুক্ত ফুটবলার আইএফএ দফতরে বসে◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ফুটবলারের বয়স ভাঁড়ানোর অভিযোগে শাস্তি পেতে পারে বেনিয়াটোলা ক্লাব। পরিস্থিতি যে দিকে যাচ্ছে তাতে অনুমান করা যাচ্ছে বেনিয়াটোলার শাস্তি হতে পারে।
এই বছর কলকাতা ফুটবল লিগে প্রথম বয়স ভিত্তিক লিগ শুরু হয়েছে। বয়স ভিত্তিক লিগ বা কোনও টুর্নামেন্ট মানেই ফুটবলারের বয়স ভাঁড়িয়ে খেলার চল আছেই। এই কুঅভ্যাস বন্ধ করতে প্রথম থেকেই কড়া পদক্ষেপ করার বার্তা সব ক্লাবকে কাগজে-কলমে আগেই জানিয়ে দিয়েছিল আইএফএ। এবারের বয়স ভাঁড়ানোর প্রথম অভিযোগ করে পঞ্চম ডিভিশনের ‘এ’ গ্রুপের সাউথ ফোক ক্লাব ও দর্জিপাড়া মিলন সংঘ। বেনিয়াটোলা ক্লাবের আট ফুটবলারের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করা হয়। প্রসঙ্গত, পঞ্চম ডিভিশনের ‘এ’ গ্রুপের ফুটবলারদের বয়স হতে হবে অনূর্ধ্ব-১৭ বছর। অভিযোগ, বেনিয়াটোলা ক্লাব কর্তারা নাকি লিগের শুরু থেকেই বেশ কয়েকজন ১৭ বছরের বেশি বয়সের ফুটবলারদের খেলিয়ে যাচ্ছেন। যে আট ফুটবলার অভিযুক্ত তাদের আজ,বৃহস্পতিবার আইএফএ অফিসে তলব করা হয়। অভিযুক্ত ফুটবলারদের নিয়ে আইএফএ-এর স্ট্যান্ডিং মেডিক্যাল কমিটির সদস্যরা জরুরি বৈঠক করেন। এই বৈঠকে ছিলেন কমিটির ৪ জন চিকিৎসক যাঁরা এই কমিটির সদস্য। এঁরা হলেন কমিটির চেয়ারম্যান প্রতীম রায় (চিকিৎসক), হিমাদ্রি রায় চৌধুরী(চিকিৎসক), সপ্তর্ষী বসু (চিকিৎসক), সৌরভ সাহা (চিকিৎসক)। এছাড়াও কমিটির আরও দুই সদস্য চন্দন লৌহা এবং দীপেন্দু কুমার রায় সভায় উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ও সচিব অনির্বান দত্ত। তবে বেনিয়াটোলার অভিযুক্ত আট ফুটবলারের মধ্যে সাত ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন। বাকি এক ফুটবলার আইএফএতে আসেইনি।
সভায় অভিযুক্ত ফুটবলারদের আলাদা আলাদা করে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পাশাপাশি তাদের শরীর পরীক্ষাও করেন চার চিকিৎসক। এই ব্যাপারে আইএফএ সভাপতি ও সচিবকে জিজ্ঞাসা করলে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে একটি সূত্রের খবর, প্রাথমিক পরীক্ষা নিরীক্ষার পর চারজন ফুটবলার অভিযোগ থেকে কার্যত মুক্ত হতে চলেছে। কিন্তু উপস্থিত বাকি তিন ফুটবলার যে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলেছে তার যথেষ্ট প্রমাণ চিকিৎসকরা নাকি পেয়েছেন। এই তিন অভিযুক্ত ফুটবলারকে শরীরের নিদিষ্ট হাড়ের ডিজিটাল এক্সরে করার নির্দেশ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। সূত্রটি জানাচ্ছে, বড় ধরনের অঘটন না ঘটলে এই তিন অভিযুক্ত ফুটবলার যে বয়স ভাঁড়িয়ে খেলেছে তা প্রমাণ হওয়াটা নাকি শুধু সময়ের অপেক্ষা। বেনিয়াটোলার কর্তারা আরও সমস্যায় পড়েছে তা হল অভিযুক্ত এক ফুটবলার সভাতেই আসেনি।
বেনিয়াটোলার অন্যতম কর্তা শুভঙ্কর ঘোষকে সভায় হাজির থেকে মেডিক্যাল কমিটির কাছে কৈয়ফিয়ত দিতে হয়েছে। সভা থেকে বেড়িয়ে আসার পর শুভঙ্করবাবুকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন,”কমিটির সামনে আমার বক্তব্য বলেছি। জানি না কি হবে।” তারপরেই সহসচিবের ঘরে গিয়ে দীর্ঘক্ষণ একা বসেছিলেন শুভঙ্করবাবু। জানা যায়, দল গড়ে সিআরএসের সময় কলকাতা শহরেই ছিলেন না শুভঙ্কর ঘোষ। তাঁর অবর্তমানে বেনিয়াটোলার অন্য এক কর্তা বেশ কয়েকজন বেশি বয়সের ফুটবলারকে সই করিয়ে খেলিয়েছেন বলে এমনটাই অভিযোগ উঠছে।
এদিনের সভায় হাজির ছিলেন দর্জিপাড়া ক্লাবের কর্তা করুনা চক্রবর্তী ও সাউথ ফোক ক্লাবের স্বপন বসু। তাঁরাও নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন বলে জানা গিয়েছে। দর্জিপাড়া ক্লাবের কর্তা করুনা কান্ত চক্রবর্তী ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”বয়স ভিত্তিক লিগ শুরু করে ভাল পদক্ষেপ করেছে আইএফএ। কিন্তু নিয়ম মেনে বেনিয়াটোলা খেলছে না। শুরু থেকেই বেশি বয়সের ফুটবলার খেলিয়ে যাচ্ছে। এটা অন্যায়। এই অন্যায় বন্ধ না হলে বয়স ভিত্তিক লিগ করে কোনও লাভ হবে না। অভিযুক্ত ৩ ফুটবলারের মেডিক্যাল টেস্টের খরচ বহন করতে আমরা রাজি। আশা করছি আমাদের অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হবে।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, চিকিৎসকদের নির্দেশ মতে তিন অভিযুক্ত ফুটবলারের হাড়ের ডিজিটাল এক্সরে করার খরচ বহন করতে হবে অভিযোগকারীদের (সাউথ ফোক ও দর্জিপাড়া)। যদি অভিযোগ প্রমাণ হয় তাহলে সেই খরচের পুরো টাকাটা বেনিয়াটোলা ক্লাবকে দিতে হবে। সেই সঙ্গে অভিযোগ করার পর অভিযুক্ত ফুটবলার যতগুলি ম্যাচে খেলেছে ততগুলি ম্যাচের পয়েন্ট কাটা যাবে। পাশাপাশি হতে পারে জরিমানাও।
বেনিয়াটোলার এক কর্তা চাইছেন না মেডিক্যাল টেস্ট হোক। কারণ বয়স ভাঁড়ানো প্রমাণ হলে মেডিক্যাল টেস্টের টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নাকি তাঁদের নেই। এই আশঙ্কায় চিন্তিত তাঁরা। এই ক্লাবের এক কর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ) বলছেন ফুটবলারদের সাসপেন্ড করা হোক। কিন্তু পাল্টা যুক্তিও আছে। ক্লাব কর্তারা জেনে বুঝে বেশি বয়সের ফুটবলারদের খেলিয়েছেন। কড়া শাস্তি হওয়া দরকার ক্লাব কর্তা অর্থাৎ বেনিয়াটোলা ক্লাবের। শুধু ফুটবলাররা শাস্তি পাবে কেন? সব মিলিয়ে চাপে বেনিয়াটোলা ক্লাব কর্তারা। মেডিক্যাল টেস্টের রিপোর্ট কি বলছে সেটার জন্যই অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।