নবাবের হাত ধরে ভারতীয় ফুটবলে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ শুরু

0

◆সন্দীপ দে◆

নিজেদের ক্লাবের খুদে ফুটবলারদের জন‍্য অত‍্যাধনিক ইকুইপমেন্ট কেনার জন‍্য সাধারণ মানুষের কাছে আর্থিক সাহায‍্য চেয়ে আবেদন করলেন ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের অন‍্যতম কর্তা নবাব (সিদ্ধার্থ) ভট্টাচার্য। তবে আর্থিক সাহায‍্য চাওয়াটা বিল বই ছাপিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে নয়। ‘মিল‍্যাপ’ বলে এক সংস্থার মাধ‍্যমে স্বচ্ছতার সঙ্গে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। পুরোটাই অন লাইন ট্রানজাকশন। যার নাম “ক্রাউড ফান্ডিং”। এখন বিদেশে ছোট,বড় অনেক সংস্থা, ক্লাব আছে, যারা ‘মিল‍্যাপ’-এর মতো একাধিক সংস্থার মাধ‍্যমে আর্থিক সাহায‍্য নিয়ে চলছে। শিক্ষা,মেডিক‍্যাল,স্পোর্টস নিয়ে বেশি কাজ করে সংস্থাগুলি। প্রসঙ্গত, ইউনাইটেড স্পোর্টসের অন‍্যতম কর্তা নবাব ভট্টাচার্যর হাত ধরে এই প্রথম ভারতীয় ফুটবলে “ক্রাউড ফান্ডিং” শুরু হল।

ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাবের সচিব অলোকেশ কুন্ডু

ক্লাবের জন‍্য টাকা তুলতে নবাব যে পন্থা অবলম্বন করলেন, আজ থেকে ২৬ বছর আগে এই কাজটাই করেছিলেন ইউনাইটেড স্পোর্টসের সচিব অলোকেশ কুন্ডু। সালটা ছিল ১৯৯৫। তখন ক্লাবের নাম ছিল এভাররেডি অ‍্যাসোসিয়েশন। ক্লাবের ফুটবল দল গড়তে টাকার দরকার। স্পনসর নেই। তাই বন্ধুদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার জন‍্য বিল বই ছাপিয়ে ছিলেন অলোকেশ কুন্ডু। তাঁর ঘনিষ্ঠ রেলওয়ে এফ সির ফুটবলার অমিত দত্তকে কিছু বিল বই দিয়েছিলেন। অমিত কিছু টাকা তুলে দিয়েছিলেন। সেদিন টাকা পাওয়ার পর অলোকেশ বিলবইয়ের পাতা গুলি দেখছিলেন, প্রায় সবই কুড়ি-পঁচিশ টাকা,দু-চারটে পঞ্চাশ টাকা। একটা পাতায় ২০০ টাকা দেখে অলোকেশের চোখ আটকে গিয়েছিল। আজ থেকে ২৬ বছর আগে ২০০ টাকার যথেষ্ট মূল‍্য ছিল। সেই বিল বই পাতায় ২০০ টাকার ডোনারের নামটাও লেখা ছিল-সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য। যাকে ময়দান নবাব ভট্টাচার্য নামেই চেনে। এই ক্লাবের সঙ্গে সেই শুরু নবাবের।

‘মিল‍্যাপ’-এর অ‍্যাকাউন্টে ইউনাইটেড স্পোর্টসে জমা পড়া অর্থ

নবাব ক্লাবের ফুটবলারদের জন‍্য আজ যা শুরু করলেন অলোকেশ কুন্ডু তা শুরু করেছিলেন ২৬ বছর আগে। তবে এবার নবাব শুরু করলেন পেশাদারিত্বের সঙ্গে,নেট দুনিয়ার মাধ‍্যমে। এখানে ক্লাবের কোনও ব‍্যাঙ্ক অ‍্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়া হয়নি। ‘মিল‍্যাপ’-এর অ‍্যাপে একটি লিঙ্ক আছে। সেই লিঙ্কে গিয়ে আপনিও টাকা ট্রান্সফার করতে করতে পারবেন।

কত টাকা দিতে পারবেন এই মিল‍্যাপে? সর্বনিম্ন ১০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। নবাব ভট্টাচার্য বলছিলেন,”এক একটা প্রজেক্টের উপর মিল‍্যাপ টাকার জন‍্য ডোনারদের আহ্বান করে। আমাদের খুদে ফুটবলারদের নিয়ে একটা ক‍্যাম্প আছে। সেই ক‍্যাম্পের ফুটবলারদের জন‍্য অত‍্যাধনিক ইকুইপমেন্ট প্রয়োজন। সেই প্রজেক্ট জমা দেওয়ার পর মিল‍্যাপ খতিয়ে দেখার পর অনলাইনে টাকা তোলার ছাড়পত্র দিয়েছে। আমাদের প্রজেক্টে উল্লেখ আছে ২ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। এই টাকা উঠে গেলে ‘মিল‍্যাপ’ আর টাকা নেবে না। এটাই সিস্টেম।”

কিন্তু আপনারা নিজেরাই তো ইউনাইটেড স্পোর্টসের অ‍্যাকাউন্টের নম্বর দিয়ে আর্থিক সাহায‍্য পেতে পারতেন। হঠাৎ ‘মিল‍্যাপ’ সংস্থার মাধ‍্যমে কেন টাকা তুলছেন? এই সংস্থার গ্রহণযোগ্যতা কতটা?

ইউনাইটেড স্পোর্টসের ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ নিয়ে ব্রিটিশ হাইকমিশনের টুইট

প্রশ্নের জবাবে নবাব ভট্টাচার্য ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানান,” ক্লাবের নামে দিলে অনেকে অনেক প্রশ্ন তুলতে পারে। কে,কত টাকা দিচ্ছে তার সঠিক হিসাব রাখাটাও সমস‍্যা। আর ‘মিল‍্যাপ’ – এর স্বচ্ছতা,গ্রহণযোগ‍্যতা অনেক বেশি। বিদেশে এমন একাধিক সংস্থা আছে। যাদের হাত ধরে এডুকেশন, মেডিক্যাল, স্পোর্টস জগতে বহু ছোট-বড় সংস্থা আর্থিক সাহায‍্য চেয়ে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করেছে। সেই সংস্থাগুলি ভাল চলছেও। আমার কথা বিশ্বাস করতে হবে না। ‘মিল‍্যাপ’ কি? তা আপনারা গুগলে সার্চ করলেই সব জানতে পারবেন। এই ধরনের কনসেপ্টটা আমাকে প্রথম দিয়েছিলেন আমেরিকার প্রবাসী বাঙালি দেবাশিস চৌধুরী। উনি ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। দেবাশিসবাবুই আমাকে প্রথম এই ‘মিল‍্যাপ’ ও ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর কথা বলেছিলেন। সাহায্য করেছেন আর এক প্রবাসী বাঙালি সঞ্জয় চৌধুরী। পুরো ব‍্যাপারটা করতে খুব সাহায‍্য করেছেন ক্লাব সদস‍্য অর্ণব ভৌমিক।”

গুগলে আমরা সার্চ করে দেখেছি, ‘মিল‍্যাপ’ ছাড়াও ‘কেটো’, ‘উইসব‍েরি’, ‘ক্রাউডএরা’, ‘গো ফান্ড মি’-এর মতো সংস্থা আছে। বিদেশে এই সব সংস্থার মাধ‍্যমেই সামাজিক কাজে,সোসাল মিডিয়ার মাধ‍্যমে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হয়। নবাব ভট্টাচার্যদের এই ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ ‘মিল‍্যাপ’ অন লাইনে ওপেন করেছে বুধবার সন্ধ‍্যায়। আজ,শুক্রবার সকালে এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত ‘মিল‍্যাপ’-র ইউনাইটেড স্পোর্টস অ‍্যাকাউন্টে জমা পড়েছে ৯৫ হাজার টাকা। নবাব নিজে এই মিল‍্যাপের মাধ‍্যমে অর্থ সংগ্রহ করার জন‍্য ফেসবুক, হোয়াটসঅ‍্যাপে বার্তা পাঠিয়েছিলেন। যাতে তাঁদের শুভানুধ‍্যায়ীরা জানতে পারেন।

শুধু অলোকেশ কুন্ডু,নবাব ভট্টাচার্যদের ইউনাইটেড স্পোর্টস ক্লাব নয়, খেলা ধূলার জগতে যে কেউ এই ভাবে অর্থ সংগ্রহ করতে পারে। জেলা, কলকাতায় অনেক ছোট ক্লাব, সংস্থা আছে। তারাও এভাবে নির্দিষ্ট প্রজেক্ট জমা দিয়ে অর্থ সংগ্রহ করতে পারেন। অর্থের জোগানের পাশাপাশি সাপোর্টারের বেসটাও তৈরি হবে। কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবও এই ‘ক্রাউড ফান্ডিং’ করলে বেশি সাফল‍্য পাবে। কারণ তাদের সদস‍্য-সমর্থক অনেক বেশি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here