ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : সদস্যরা সংক্ষেপে বলে ‘ড্যাক’ আর আমরা বলি ডালহৌসী অ্যাথলেটিক ক্লাব। ভিক্টোরিয়া ক্লাবের ঠিক পাশেই ডালহৌসী অ্যাথলেটিক ক্লাবের গেটটা ছোট,কিন্তু ঐতিহ্য আকাশ ছোঁয়া। ১৪২ বছরের ডালহৌসী এবার যেন নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া।
কলকাতা প্রথম ডিভিশনের এই ডালহৌসী অ্যাথলেটিক ক্লাব লিগ শুরু করার আগে ক্রীড়া জগতের এক ঝাঁক সেলিব্রিটিদের নিয়ে নতুন মরসুমের জন্য জার্সি উন্মোচন করলেন ‘ড্যাক’-এর কর্তারা। কে ছিলেন না! ‘অর্জুন’ পুরস্কারপ্রাপ্ত সুব্রত ভট্টাচার্য থেকে বর্তমান খেলোয়াড় কিয়ান নাসিরি,অরিন্দম ভট্টাচার্য,হীরা মন্ডল। ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ-এর চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত,সচিব অনির্বান দত্ত,মোহনবাগান ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত। ছিলেন সেনকো গোল্ড অ্যান্ড ডায়মন্ডসের কর্ণধার শুভঙ্কর সেন। শনিবারের ঐতিহ্যবাহী ডালহৌসী অ্যাথলেটিক ক্লাবের জার্সি উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুটি খামতি চোখে পড়ল। এক, যারা জার্সি গায়ে ফুটবল লিগ খেলবে তাদের ক্লাবে দেখা গেল না। দেখা গেল না ফুটবল দলের কোচ সুপ্রিয় দাশগুপ্তকে। তবে এই খামতি দিয়ে ডালহৌসি ক্লাব কর্তাদের ফুটবলের প্রতি ভালবাসা,আন্তরিকতাকে ছোট করার কোনও জায়গা নেই।
ডালহৌসী ক্লাবের সচিব লাল্টু দাস ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান বলেই ফুটবলারদের রাখতে পারিনি। আমারা এবার প্রিমিয়ারে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে দল গড়েছি। আমরা লিগের ফুটবল ছাড়াও কর্পোরেট জগতের দল নিয়ে ফাইভ -এ-সাইড ফুটবল টুর্নামেন্ট করব। একই সঙ্গে কলকাতার বিভিন্ন ক্লাব নিয়ে ফুটসল করব।”
এই ক্লাবের ঐতিহ্য আছে। কিন্তু ভবিষ্যত কি? জেলা থেকে ফুটবলার তুলে আনতে হবে। যা একটা সময় খিদিরপুর,ভবানীপুর,বালি প্রতিভা,এরিয়ানরা করে এসেছে। বক্তব্য রাখতে গিয়ে উদাহরণ তুলে ধরে এমনটাই বলছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য।
সুব্রত বলছিলেন,”ডারহৌসী ক্লাবে আমি খেলিনি ঠিকই তবে এই ক্লাবের ইতিহাস,ঐতিহ্য বিরাট।”
সত্যিই বিরাট ইতিহাস। ১৪২ বছরের ডালহৌসী কলকাতা ফুটবল লিগ জিতেছে ৪ বার (১৯১০.১৯২১.১৯২৮.১৯২৯)।
ডালহৌসী সাহেবদের ক্লাব ছিল। আর সেই কারণেই এই ক্লাবে আছে বিরাট দুটি লন টেনিস কোর্ট। আছে ক্রিকেট টিমও। এই ক্লাবেই ইন্ডোর গেমে আছে বিলিয়র্ডস, ডার্ট,ব্যাডমিন্টন খেলার চল। আর আছে সুন্দর গোছানো বার।
কলকাতার পুরনো ক্লাব কোনটা? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাচ্ছে পুরনো ক্লাব হল সিসিএফসি। ১৮৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত। ঠিক সেই সময় আজকের মহাকরণের উল্টোদিকে লালদীঘির ধারে আড্ডা মারতেন কিছু ইংরেজ যুবক। তাদের কাছে ফুটবল খেলা ছিল একটা বিনোদন মাত্র। ১৮৭৮ সালে সেই ইংরেজ যুবকরা তৈরি করেছিল ডালহৌসী ইনস্টিটিউট। দুই বছর পর,১৮৮০ সালে ক্লাবটি ভাগ হয়ে গেল। ডালহৌসী ইনস্টিটিউট চলে গেল ঝাউতলা রোডে। আর মেও রোডের মুখে তৈরি হয়েছিল ডালহৌসী অ্যাথলেটিক ক্লাব।
সাম্প্রতিক অতীতে ক্লাবের অন্যতম কর্তা দীপঙ্কর হাজরা নিজেদের ক্রিকেটকে একটা উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিলেন। অপর কর্তা তপন চাকিরও ভূমিকা ছিল। এঁরা একটা সময় ডালহৌসীর মুখ হলেও তাঁরা ক্রিকেটকেই বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর্তাও বদল হয়। এখন সচিব প্রাক্তন মোহনবাগানের ফুটবলার লাল্টু দাস। তিনি ফুটবলটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে মরিয়া। কতটা সফল হবেন লাল্টু? সময় বলবে। কারণ,সুব্রত ভট্টাচার্যর কথাটা এখনও কানে বাজছে,”ডালহৌসীর ঐতিহ্য আছে, ভবিষ্যত কি? উত্তর? সময় বলবে।