ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : বহুদিন পর অন্য মেজাজে আইএফএ চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত। আজ,বৃহস্পতিবার আইএফএ-এর গর্ভনিং বডির সভার শুরু থেকেই সহ সচিব নজরুল ইসলামকে ধুয়ে দিলেন সুব্রত দত্ত। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ বরদাস্থ করবেন না। প্রসঙ্গত, অভিযোগ উঠেছে, একজন অফিস বেয়ারার্স হয়ে চিঠি দিয়ে আইএফএতে বিভাজনের চেষ্টা করেছিলেন নজরুল। শুধু তাই নয় বেশ কিছুদিন ধরেই আইএফএতে চলছে ‘ওরা-আমরা’-র লড়াই। কিন্তু সহসচিব নজরুলের কিছু কার্যকারিতা দেখে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষেপে গিয়েছেন সুব্রত দত্ত।
এদিনের গর্ভনিং বডির সভার শুরুতে ‘স্টেপ আউট’ করে খেলতে থাকেন চেয়ারম্যান। সহসচিব নজরুলকে ইঙ্গিত করে সুব্রতবাবু বলতে থাকেন,”২১ সেপ্টেম্বর স্পনসর ঘোষণার দিন আমি বক্তব্য রাখতে গিয়ে
SNU কর্ণধার আইএফএর পেট্রন হওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু সিদ্ধান্ত নেবে গর্ভনিং বডি। কিন্তু সহসচিব নজরুল ইসলাম আইএফএকে চিঠি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পেট্রন করার প্রস্তাব দিয়েছেন। একজন অফিস বেয়ারার্স হয়ে এই ভাবে চিঠি দেওয়া ঠিক নয়। আইএফএ অফিসে সচিবের ঘরের পাশেই তো তার ঘর। চিঠি না দিয়ে সচিব,সভাপতি বা আমার সঙ্গে কথা বলতেই পারতো। নানান ইস্যু নিয়ে বার বার তিনি চিঠি দিচ্ছেন। নজরুল বারবার কেন চিঠি দিচ্ছেন জানি না। উনার হয়তো একটা অভিসন্ধি আছে। একটা কথা মনে করিয়ে দিচ্ছি,কেউ যদি অ্যাসোসিয়েশনের ভাবমূর্তি খারাপ করার চেষ্টা করে, অ্যাসোসিয়েশনের ক্ষতি করতে চায়লে সহ্য করা হবে না। এটা ঠিক কাজ নয়। চিঠি দেওয়ার আগে নিজেকে শিক্ষিত করা প্রয়োজন। এরকম নোংরা রাজনীতি না করাই ভাল। এভাবে করতে থাকলে অনাস্থা প্রস্তাব এনে তাকে সরিয়ে দেওয়া হবে। উনি কিভাবে সহসচিব হয়েছেন তা আমি জানি। আমি তা বলতে চাই না। কাদা ছোড়াছুড়ি করতে চাই না। আইএফএ-পদে থেকে এই সব কাজ করা যায় না। প্রতিষ্ঠান বিরোধী কাজ একদম সহ্য করব না। সে যেই হোক। আজ ওর জন্য স্পনসর হারাতে বসেছিল আইএফএ।”
সুব্রত দত্তর কড়া বার্তাকে সমর্থন করেন সভাপতি,সচিব সহ গভর্নিং বডির সকল উপস্থিত সদস্যরা। আত্মপক্ষ সমর্থনে সহসচিব নজরুল ইসলামকে বক্তব্য রাখার সুযোগ দেওয়া হয়। তখন নজরুল বলেন, “আইএফএ-সহ সচিব হয়েও আমাদের নতুন স্পনসর সম্পর্কে কিছুই জানানো হয়নি। তাই সেদিন কোনও অফিসবেয়ার্সও যায়নি।” তখন সচিব অনির্বান দত্ত বলেন, “সবাইকে মেল করে জানানো হয়েছিল।” অনির্বানের কথা শেষ না হতেই সুব্রত দত্ত বলতে থাকেন,”কে বলেছে সেদিন অফিস বেয়ার্সরা যাননি। সচিব, আমি,সভাপতিরা কি অফিস বেয়ারার্স নয়? আর এই জানানোর ব্যাপারে সংবিধান মেনে চলতে হলে সহসচিবদের সব কিছু জানাতেই হবে তার কোনও উল্লেখ নেই। সচিব যদি মনে করেন সহসচিবদের না জানাতেই পারেন।” সুব্রত দত্তর বক্তব্যকে মাথা নেড়ে সমর্থন করেন সভাপতি অজিত ব্যানার্জি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই নজরুলের ক্লাব চাঁদনি স্পোর্টিং অবনমন নিয়ে আইএফএকে চিঠি দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, সিটি সিভিল কোর্টে মামলাও করেন। কথায় কথায় চিঠি দেওয়া, মামলা করার ঘটনা ঘটিয়ে বাংলা ফুটবলের রাজ্য নিয়ামক সংস্থার ভাবমূর্তি খারাপ করেছেন। খেলাধূলার জগতে আইএফএ সম্পর্কে একটা খারাপ বার্তা পৌঁছে গিয়েছে। ক্রমশ তা আরও খারাপের দিকে চলে যাচ্ছিল দেখেই সচিব,সভাপতি ও চেয়ারম্যান – এক কাট্টা হয়ে কড়া বার্তা দিয়ে দিলেন।
মামলার বিষয় নিয়ে সভার সদস্যদের অনুমতি নিয়ে আইনজীবী অপূর্ব কামার ঘোষকে ডেকে নেন সচিব ও সভাপতি। তিনি মামলার বিষয়টা বুঝিয়ে দেন। অপূর্ববাবু সভায় বলেন, চাঁদনি স্পোর্টিং ক্লাব যে মামলাটি করেছে তা প্রিমিয়ার ডিভিশনের ‘এ’ গ্রুপের অবনমন না থাকা নিয়ে মামলাটি করা হয়েছে। নিচের ডিভিশনের অবনমন নিয়ে এই মামলায় উল্লেখ নেই। নজরুল চাঁদনি স্পোর্টিং এর সচিব এবং তিনি আইএফএ-এর সহসচিব। তাহলে কি করে তিনি মামলা করলেন? এই নিয়ে সভার সদস্যরাও নিন্দে করেন। খিদিরপুর ক্লাবের কর্তা অমিতাভ বিশ্বাস বলতে থাকেন,”এসব করলে পদ থেকে সরে গিয়ে করুক।” স্বপন ব্যানার্জি বলেন,”প্রতিষ্ঠান আগে। ব্যক্তি পরে। আগে আমাদের প্রতিষ্ঠানের কথা ভাবতে হবে।”
এদিকে,এদিনের গভর্নিং বডির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এবারের লিগে অবনমন থাকছে না। তবে সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ও সচিব অনির্বান দত্ত পরিস্কার করে জানিয়ে দেন, চাঁদনি স্পোর্টিং ক্লাবের মামলার কারণে অবনমন বন্ধ হচ্ছে তা কিন্তু নয়। কারণ এই মামলার মধ্যে নিচের ডিভিশনের অবনমনের উল্লেখ নেই। সভার সদ্যরা অনুরোধ করেন, গত দুই বছর পূর্নাঙ্গ লিগ হয়নি। এবছর দেরি করে লিগ শুরু হয়েছে। শেষও হচ্ছে দেরি করে। দল চালাতে অনেক সমস্যা। তাই এই বছর অবনমন বন্ধের আবেদন বিবেচনা করুক আইএফএ। পরে সর্ব সম্মতিক্রমে এই বছর অবনমন বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে লিগে প্রোমোশন থাকছে। চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত বলেন, সামনের বছর এই রকম অনুরোধ করলে কিন্তু অবনমন বন্ধ রাখা যাবে না। তখন সভার সদস্যরা একমত হলে তা মিনিটসেও লেখা হয়।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, SNU কর্ণধার সত্যম রায়চৌধুরীকে আইএফএ-এর পেট্রন হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হবে। সভার শেষে সুব্রত দত্তকে প্রশ্ন করা হয়,তিনি বক্তব্য রাখার সময় নজরুলের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেছিলেন,”ওর জন্য স্পনসর চলে যেতে বসেছিল”। আপনার এই কথার অর্থ কি? SNU স্পনসর হিসেবে থেকে যাচ্ছে? পাশে দাঁড়িয়ে থাকা সভাপতি অজিত ব্যানার্জিকে দেখিয়ে সুব্রতবাবু বলেন,”এই ব্যাপারে উনি বলবেন।” তখন অজিতবাবু বলেন,”আমরা অনেক কষ্টে SNU কে এনেছিলাম। আসলে কেউ কেউ সত্যম রায়চৌধুরীকে কিছু ভুল বার্তা দিয়েছেন। যার ফলে তিনি বিরক্ত। আমরা কথা বলেছি। আবার আমরা বসবো। থেকে যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছি। আলোচনা চলছে।”