‘ইনসাইড স্পোর্টস’-র উদ‍্যোগ,৪ কোচকে ‘ক্রীড়া গুরু’-র সম্মান

0

ফুটবল কোচ মুরারি শূর

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২৭ সেপ্টেম্বর, কলকাতা : একটা সময় পাড়ায় পাড়ায় দেখা যেত “দাদা’দের। সেই ‘দাদা’রা – যারা পাড়ার ছেলেদের হাত ধরে ফুটবল মাঠে নিয়ে যেতেন। নিজের পাড়া ছাড়িয়েও বিভিন্ন গ্রামে পৌঁছে যেতেন ওঁরা। লক্ষ‍্য ভাল খেলোয়াড় তুলে আনা। স‍্যার দুখীরাম মজুমদার, অচ‍্যুৎ ব‍্যানার্জি, খোকন বসু মল্লিক, ভূতনাথ বিশ্বাস, ল‍্যাংচা মিত্র, পটা গুপ্ত, শচীন হালদার — কত নাম যে আছে,তালিকাটা দীর্ঘ। যারা বছরের পর বছর নিঃশব্দে খেলোয়াড় তৈরি করে গিয়েছেন,তাঁরাই হলেন খেলোয়াড় তৈরির কারিগর। এবং অবশ‍্যই ‘উপেক্ষিত দ্রোণাচার্য’ও।
যাদের নাম উল্লেখ করলাম,তারা প্রয়াত হয়েছেন অনেক আগেই। এঁদের পরেও কিছু কোচ এখনও আছেন,যারা এখনও আমাদের মধ‍্যে আছেন। তাদেরকেই “ক্রীড়াগুরু”-র সম্মান জানাতে চলেছে “ইনসাইড স্পোর্টস”। আগামীকাল, মঙ্গলবার (২৮ সেপ্টেম্বর ) কলকাতা প্রেস ক্লাবে ক্রীড়া জগতের গুনিজনদের সংবর্ধনা জানাবে “ইনসাইড স্পোর্টস”। প্রসঙ্গত, এবছর প্রথম এই পুরস্কার দেওয়া শুরু করছে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’। একই সঙ্গে প্রকাশিত হবে “ইনসাইড স্পোর্টস”-র শারদীয়া সংখ‍্যাও। এবার থেকে প্রতি বছরই এই পুরস্কার ও শারদীয়া সংখ‍্যা প্রকাশ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে।

প্রিয় ছাত্র সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে কোচ দেবু মিত্র(ফাইল ছবি)

জেলা ও কলকাতা নিয়ে এই বছর চার কোচকে “ক্রীড়া গুরু”-র সম্মানে সম্মানিত করা হচ্ছে। এঁরা হলেন মুরারি শূর, দীপক গড়গড়ি, দূর্গাপদ গাঙ্গুলি এবং দেবনারায়ণ (দেবু) মিত্রকে।

শ‍্যামনগরের মুরারি শূর। তাঁর হাত ধরেই ফুটবলের অ,আ,ক,খ শিখেছেন ‘অর্জুন’ পুরস্কার প্রাপ্ত সুব্রত ভট্টাচার্য, রহিম নবিরা। মুরারি বাবুর হাত ধরেই উঠে এসেছেন এক ঝাঁক বাঙালি ফুটবলার। যারা আজ সুপ্রতিষ্ঠিত।

দীপক গড়গড়ি। হুগলি জেলা ফুটবলের ‘উপেক্ষিত দ্রোণাচার্য’। লেলিনের মাঠে এখনও পাওয়া যায় ৭৬ বছরের কোচ দীপক গড়গড়িকে। বিনা পারিশ্রমিকে বছরের পর বছর খুদে ফুটবলারদের তালিম দিয়ে আসছেন। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে ফুটবলারদের প্র‍্যাকটিশের পর টিফিনের ব‍্যবস্থা করতেন দীপকবাবু। তাঁর হাত ধরেও উঠে এসেছে বহু ফুটবলার। দীপকবাবুর সেরা আবিস্কার বাংলার অন‍্যতম সেরা স্ট্রাইকার শিশির ঘোষ।

ফুটবল কোচ দীপক গড়গড়ি

মুর্শিদাবাদ জেলার প্রবীণ কোচ দুর্গাপদ গাঙ্গুলিকেও আমরা ‘ক্রীড়াগুরু’-র সম্মান জানাতে চলেছি। হয়তো তাঁর হাত ধরে কোনও তারকা ফুটবলার উঠে আসেনি কিন্তু মুর্শিদাবাদ জেলার অসংখ‍্য ফুটবলার দুর্গাবাবুর হাতে তৈরি। মুর্শিদাবাদ ফুটবলের ইতিহাস লিখতে হলে দুর্গাপদ গাঙ্গুলির নাম বাদ দিয়ে লেখা যাবে না। ৮৪ বছরের দূর্গাপদ গাঙ্গুলি এই মুহূর্তে বহরমপুরে নিজের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে বিছানায়। আমরা কয়েকদিনের মধ‍্যেই ‘ক্রীড়া গুরু’-র সম্মান তাঁর কাছে পৌঁছে দেব।

মঙ্গলবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে বাংলার এক ক্রিকেট কোচকেও ‘ক্রীড়া গুরু’-র সম্মান তুলে দেওয়া হবে। তিনি হলেন দেবনারায়ণ মিত্র। এই নামের সঙ্গে ময়দানের অনেকেই পরিচিত নয়। এটা তাঁর পোশাকি নাম। ময়দানে তাঁকে চেনে,জানে দেবু মিত্র নামেই।
১৯৭৮ সালে ‘স‍্যার দুখীরাম মজুমদার’ নামে বিবেকানন্দ পার্কে একটি ফুটবল কোচিং ক‍্যাম্প শুরু করেন অচ‍্যুৎ ব‍্যানার্জি। আটের দশকের শুরুতেই সেই কোচিং ক‍্যাম্প স্থানান্তরিত হয় এরিয়ান ক্লাবে। সেই সময় এরিয়ানের গ‍্যালারির নিচে ক্রিকেট কোচিং সেন্টার শুরু করেন বাংলার হয়ে প্রথম রনজি জয়ী দলের সদস‍্য কমল ভট্টাচার্য। তখন কোচ ছিলেন দেবু মিত্র ও অশোক মুস্তাফি। একদিন চন্ডী গাঙ্গুলি সেই কোচিং সেন্টারে গিয়ে নিজের দুই ছেলে স্নেহাশিস গাঙ্গুলি ও সৌরভ গাঙ্গুলিকে দেবু মিত্রর হাতে তুলে দেন। পরে এই দেবু মিত্রর তত্বাবধানেই সৌরভ প্রথম ইংল‍্যান্ডের মাইনর কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে যান। তাঁর হাত ধরেই উঠে এসেছেন স্নেহাশিস,সৌরভ,শরদিন্দুর মতো বহু ক্রিকেটার। সৌরাষ্ট্র দলের কোচ হয়ে রনজি চ‍্যাম্পিয়ন করেছেন। আজ চেতেশ্বর পূজারা,রবীন্দ্র জাদেজা তারকা হওয়ার বড় অবদান আছে কলকাতার কোচ দেবু মিত্রর।

এই চার কোচকে ‘ক্রীড়া গুরু’-র সম্মান প্রদানের পাশাপাশি আরও ক্রীড়া ব‍্যক্তিত্বদের পুরস্কৃত করতে চলেছে “ইনসাইড স্পোর্টস”। বিভিন্ন বিভাগে যারা পুরস্কৃত হচ্ছেন তাঁরা হলেন, অলিম্পিয়ান প্রণতি নায়েক,উজালা কুমারী সিং, প্রবীর ভট্টাচার্য,বিধান মল্লিক, চিত্ত রঞ্জন দাস, কমল মৈত্র, গৌতম গোস্বামী, কল‍্যাণ মজুমদার, স্নেহাশিস গাঙ্গুলি,অভিষেক ডালমিয়া, শিশির ঘোষ,সুব্রত ভট্টাচার্য এবং সুব্রত দত্ত। বিশেষ ভাবে সম্মান জানানো হবে চিকিৎসক শুভাশিস মিত্রকে। এঁরা কোন ক‍্যাটাগড়িতে সম্মানিত হচ্ছেন, তা আগামীকাল (মঙ্গলবার) কলকাতা প্রেস ক্লাবেই আনুষ্ঠানিক ভাবে ঘোষণা করবে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here