◆সন্দীপ দে◆
অতীতে ফুটবলের প্রসার ও প্রচারের জন্য আইএফএ-এর কোনও সচিব সেই ভাবে কিছুই করেননি। জেলা তথা বাংলা ফুটবলের জন্য যা কিছু করছেন তা বর্তমান সচিব জয়দীপ মুখার্জিই করছেন! অতীতে মুষ্টিমেয় কয়েকটা জেলাতেই সীমাবদ্ধ ছিল আইএফএ।
আপনি,যদি আইএফএ-এর উইকিপিডিয়ায় সার্চ করে ‘HISTORY’তে কলামের পঞ্চম প্যারাগ্রাফে চোখ রাখেন তাহলে উপরের উল্লেখ করা তথ্যই জানতে পারবেন। প্রাক্তন সচিবদের নাম উল্লেখ নেই। তাঁদের এড়িয়ে গিয়ে শুধু নাম আছে বর্তমান সচিব জয়দীপ মুখার্জির। আইএফএ-এর উইকিপিডিয়ায় উল্লেখ আছে যে,আইএফএ প্রতিষ্ঠার পর খেলাধূলার প্রসার ও প্রচারের ক্ষেত্রে কলকাতা ও দক্ষিনবঙ্গের কয়েকটা জেলায় সীমাবদ্ধ ছিল। উত্তরবঙ্গে নগন্য প্রচেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু আইএফএ-এর বর্তমান সচিব পদে বসার পর জয়দীপ মুখার্জি জেলা ফুটবল নিয়ে নানান পরিকল্পনা নিচ্ছেন। যে,”উত্তরবঙ্গ কাপ”,”কল্যাণী কাপ”,ফুটসল করে প্রতিভার খোঁজ করছেন জয়দীপ।
একে বারে ভুল তথ্য,বিকৃত তথ্য। তরুন প্রজন্মদের কাছে আইএফএ-র ইতিহাস সম্পর্কে ভুল তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। এখন ডিজিটালের যুগ চলছে। সবাই এখন “গুগল”-এর উপর নির্ভর করে গোটা বিশ্বকে জানতে পারছে। হাতে একটা অ্যানড্রয়েট মোবাইল ফোন থাকলেই বিশ্ব আপনার হাতের মুঠোয়। যার ফলে কোনও কিছু সম্পর্কে জানতে হলে আর লাইব্রেরী না গেলেও চলবে। উইকিপিডিয়ায় গেলেই সব তথ্য উঠে আসবে। আর এখানেই সমস্যা তৈরি হয়েছে। জেলার ফুটবল নিয়ে আইএফএ-এর ভুমিকা নিয়ে যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে তাতে রাজ্য নিয়ামক সংস্থার একাধিক সচিবকে ব্রাত্য করে রাখা হয়েছে। বিশ্বনাথ দত্ত,প্রদ্যোৎ দত্ত, রঞ্জিত গুপ্ত, সুব্রত দত্তদের ভূমিকার কথা উল্লেখ নেই। শুধুই জয়দীপ মুখার্জির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল,উইকিপিডিয়ার রিসার্চ টিম কার সঙ্গে কথা বলে মারাত্মক ভুল তথ্য উল্লেখ করেছে? এই উইকিপিডিয়া গিয়ে সংশ্লিস্ট সংস্থার কর্তারা কি নিজের মতো করে এডিট করতে পারেন? যদি পারেন তাহলে আইএফএ-এর কোন কর্তা সংস্থার ইতিহাস বিকৃত করলেন? “ইনসাইড স্পোর্টস”এই সব প্রশ্নর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবে। তার আগে সংক্ষেপে জানিয়ে রাখি,এই জেলা ফুটবলকে এগিয়ে নিয়ে আসার জন্য ইতিবাচক ভূমিকা নিয়েছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত, প্রদ্যোৎ দত্ত,রঞ্জিত গুপ্ত,সুব্রত দত্ত।
বিশ্বনাথ দত্ত — তিনিই প্রথম ওয়েস্টবেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশন তৈরি করেছিলেন। জেলা ক্রীড়া সংস্থাগুলিকে আইএফএ এবং সিএবির অনুমোদন দিয়েছিলেন। জেলা দল যাতে আইএফএ শিল্ডে খেলার সুযোগ পায় তার ব্যবস্থা করেছিলেন।
প্রদ্যোৎ দত্ত — জেলায় জেলায় আন্তঃমহকুমা ফুটবল টুর্নামেন্ট করে আলোরণ ফেলে দিয়েছিলেন। তাছাড়া,শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছে প্রদ্যোৎবাবুর জন্যই।
রঞ্জিত গুপ্ত — জেলার বিভিন্ন মহকুমায় ফুটবল প্রসারের কাজে সফল হয়েছিলেন। প্রদ্যোৎবাবুর আন্তঃমহকুমা ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু রেখেছিলেন।
সুব্রত দত্ত — সমস্ত জেলায় স্কুল ফুটবল শুরু করে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। তাছাড়া,দলবদলের আগে জেলার ফুটবলার ও কলকাতার ক্লাব কর্তাদের জন্য সল্টলেকের সাইয়ের মাঠে “ফুটবল বাজার” চালু করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছিলেন।
আমরা জেলা ও কলকাতার বেশ কিছু কর্তা ও প্রাক্তন খেলোয়ারদের সঙ্গে এই ব্যাপারে কথা বলেছি। তবে জায়গার অভাবে এই সম্পর্কে আপাতত চার জনের বক্তব্য তুলে ধরছি।
আইএফএ-প্রাক্তন সচিব, চেয়ারম্যান ও বিশ্বনাথ দত্তর পুত্র সুব্রত দত্ত ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”বাবা বলতেন, যদি জেলা ফুটবলের উন্নতি না হয় তাহলে বাংলার ফুটবল এগোবে না। তাই বাবাই প্রথম জেলাকে প্রথম গুরুত্ব দিয়ে সমস্ত সংস্থাগুলিকে অনুমোদন দিয়েছিলেন। বাবা চেয়েছিলেন,জেলার দলও আইএফএ শিল্ডে খেলুক। তার জন্য জেলায় শিল্ডের ক্লাস্টার পর্যায়ে খেলা শুরু করেছিলেন। আমার শ্রদ্ধেয় প্রয়াত কাকা প্রদ্যোদ দত্ত জেলা ফুটবলের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল আন্তঃমহকুমা ফুটবল। এই টুর্নামেন্ট থেকে বহু প্রতিভাবান ফুটবলার উঠে এসেছে। রঞ্জিত গুপ্তও জেলা ফুটবলের জন্য ভাল কাজ করেছেন। আমি যখন সচিব ছিলাম তখন জেলায় জেলায় স্কুল ফুটবল চালু করেছিলাম। জেলার ফুটবলারদের জন্য কলকাতায় শুরু করেছিলাম “ফুটবল বাজার”।
নদীয়া জেলার অন্যতম সফল ক্রীড়া সংগঠক ৭৮ বছরের প্রবীণ নীলিমেশ রায় চৌধুরি বলছিলেন,”জেলা তথা বাংলা ফুটবলের অগ্রগতির জন্য নানান পরিকল্পনা করেছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত। পরে তাঁর ভাই প্রদ্যোৎ দত্ত ও পুত্র সুব্রত দত্ত জেলায় অনেক কাজ করেছেন। তারপর প্রায় এক যুগ ধরে আর কেউ জেলা নিয়ে ভাবেননি। তবে জয়দীপ আবার জেলা নিয়ে ভাবছে দেখে ভাল লাগছে।”
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার প্রাক্তন সচিব গৌতম গোস্বামী সফল ক্রীড়া সংগঠক। তিনি বলছিলেন,”জেলার ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য অনেক কিছু করেছেন বিশ্বনাথ দত্ত,প্রদ্যোৎ দত্ত,রঞ্জিত গুপ্ত এবং সুব্রত দত্ত। জেলাকে বাংলার খেলাধূলার মূল স্রোতে নিয়ে এসেছেন বিশ্বনাথবাবু। প্রদ্যোৎবাবুর মহকুমা ফুটবল বা সুব্রতবাবুর স্কুল ফুটবল বাংলার ক্রীড়া জগত সমৃদ্ধ হয়েছে। রঞ্জিতদাও খুব ভাল কাজ করেছেন। নতুন প্রজন্ম এঁদের নাম ও তাঁদের কাজ সম্পর্কে জানেনা। আইএফএ-এর উচিত তথ্যগুলি যেন সঠিক ভাবে তুলে ধরা। আশাকরি জয়দীপ বিষয়টায় নজর দেবে।”
প্রাক্তন ফুটবলার ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনের সভাপতি তনুময় বসু দায়ি করেছেন প্রাক্তন সচিব উৎপল গাঙ্গুলিকে। তনুময় বাবুর কথায়,”যে চার প্রাক্তন সচিবের কাজের কথা উঠছে তাতে কোনও সন্দেহ নেই। সমস্যা হয়েছে উৎপল গাঙ্গুলি সচিব পদে বসার পর। প্রায় ১২ বছর জেলার ফুটবলকে গুরুত্বই দেননি। সেই জায়গা থেকে জয়দীপ নতুন করে পরিকল্পনা করছে। আশাকরছি জেলার ফুটবল আবার প্রাণ ফিরে পাবে।”
জয়দীপ মুখার্জি একটা চেষ্টা করছে তবে তথ্য ঘেঁটে এবং ক্রীড়াবক্তিত্বদের সঙ্গে কথা বলার পর এটা পরিস্কার জেলা তথা বাংলার ফুটবলে শুধু জয়দীপ মুখার্জি ভাবছেন,কাজ করছেন এই তথ্য ঠিক নয়,বরং তথ্য বিকৃত করা হয়েছে। তবে এই ভুল অনিচ্ছাকৃত কিনা এখনও স্পষ্ট নয়।