◆আইএফএ-এর কনফারেন্স রুমে খুদে ফুটবলাররা◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : নার্সারি লিগ খেলার দাবি জানিয়ে IFA অফিসে বিক্ষোভে সামিল সুন্দরবনের পাটনখালির খুদে ফুটবলাররা। শুধু নার্সারি লিগ খেলায় নয়, দত্তক দল হিসেবে যে সব সুযোগ সুবিধা পাওয়ার কথা সেই সুবিধা পাওয়ার দাবি জানাতে একঝাঁক খুদে ফুটবলরারা শুক্রবার একটা নাগাদ IFA অফিসে হাজির।
সুন্দরবনের এই কোচিং ক্যাম্পের সচিব সজল দেবের দাবি,”২০০৬ সালে IFA -এর তৎকালীন সচিব সুব্রত দত্ত আমাদের গ্রামের এই দলটিকে দত্তক নিয়েছিলেন। দত্তক নেওয়ার ফলে কোচেদের মাইনে, বল,বুট, জার্সি,টিফিন বাবদ সব খরচই বহন করবে আইএফএ। গভর্নিং বডির সভায় তা পাশও হয়ে যায়। সেই সঙ্গে নার্সারি লিগে খেলারও সুযোগ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় IFA। সুব্রতবাবুর সময় কিছু টাকা পেয়েছিলাম। পরে উৎপল গাঙ্গুলি, জয়দীপ মুখার্জির সময়েও নার্সারি লিগে খেলার প্রতিশ্রুতি দিয়েও আমাদের নার্সারি লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। আর অনুদানও পাচ্ছি না।”
কিন্তু উৎপল গাঙ্গুলির সময় তো আপনারা নাকি নিয়মিত অনুদান পেয়েছেন। এটা কি সত্যি? জবাবে সজল দেব বলেন,”সেটা পেয়েছি। কিন্তু জয়দীপ মুখার্জি সচিব হওয়ার পর থেকে অনুদান পাইনি। তবে লকডাউনের সময় একবার জয়দীপ মুখার্জি আমাদের এলাকায় এসে ক্যাম্পের ছেলেদের সাহায্য করে গিয়েছেন।”
২০০৬ সালের পর এখন ২০২৩ সাল। এই সতেরো বছরে এভাবে বিক্ষোভ দেখাননি। তাহলে হঠাৎ এখন কেন বিক্ষোভ? এতদিন চুপ করে ছিলেন কেন? উত্তরে সজল বলেন,”কে বলেছে আমরা আসিনি। উৎফলবাবুর সময়ও একবার এসেছিলাম। আর প্রতিবছরই তো নার্সারি লিগের কথা বলে থাকি।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সজল যে চিঠি (২০০৬ সাল) দেখালেন তাতে IFA এর দত্তক দল হিসেবে কি কি পাবেন তার কোনও উল্লেখ নেই। কত বছরের জন্য তাদের দলকে দত্তক নেওয়া হল সেটাও উল্লেখ নেই।
এই গরমে হাতে প্ল্যাকার্ড, কাঁসর-ঘন্টা, বাঁশি নিয়ে খুদে ফুটবলাররা IFA অফিসে পৌঁছে নিচেই বসেছিল গ্রাম থেকে আসা ফুটবলাররা। IFA সচিব অনির্বান দত্ত অফিস পৌঁছে দেখেন গরমের মধ্যে নিচে কোনওরকমে বসে আছে ফুটফলাররা। তাই দেখে সঙ্গে সঙ্গে IFA অফিসের কনফারেন্স রুমের এসি চালিয়ে খুদে ফুটবলারদের বসার জন্য বলেন সচিব অনির্বান দত্ত। জলের বোতল দেওয়া হয়। কিছুক্ষণের মধ্যে IFA সচিব খুদে ফুটবলারদের জন্য বিরিয়ানি খাওয়ান। সচিবের এমন ‘ গান্ধীগিরি’ মনোভাব দেখে আপ্লুত খুদে ফুটবলাররা।
পরে আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত এই কোচিং ক্যাম্পের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার শেষে অনির্বান দত্ত জানান,” ওনাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। দেখুন, দত্তক নেওয়ার চিঠি দেখলাম। কিন্তু কোথাও বিস্তারিত কিছু লেখা নেই। কি কি দেওয়া হবে, আর দিলেও কত বছর দেওয়া হবে,কতজন কোচ থাকবে, কোনও কিছুই উল্লেখ নেই। তবু উৎপলবাবুর সময় সামান্য হলেও অনুদান পেয়ে এসেছে। এই বিষয়ে নিয়ে ওনাদের আর একবার আবেদন করতে বলেছি। তারপর আমরা গভর্নিং বডিতে আলোচনা করব। পাশাপাশি তারা নার্সারি লিগে খেলার দাবি জানিয়েছেন। সেটা এখনই সম্ভব নয়। কারণ, আইএফএ-অ্যাফিলেটেড ইউনিট না হলে নার্সারি লিগ খেলার সুযোগ নেই। তবে আমরা ওদের বলেছি ছেলেগুলি যদি নার্সারি লিগ খেলতে চাই, তাহলে কলকাতার কয়েকটা ক্লাবের হয়ে খেলার সুযোগ করে দিতে পারব। আমরা সাধ্যমত পাশে থাকার চেষ্টা করব। এই ক্যাম্পের কর্তারা আমার কাছে আগেও এসেছিল। ওদের ৫০টা বলও দিয়েছি। দেখা যাক কতদুর কি করা যায়। যা হবে নিয়ম মেনেই হবে।”
আমরা তো দেখলাম, খুদে ফুটবলারদের এসি রুমে বসিয়ে বিরিয়ানি খাওয়ালেন। এটা কি IFA সচিবের ‘গান্ধীগিরি’? জবাবে অনির্বান দত্ত বলেন,”ছেলেগুলো সেই সকালে বেরিয়েছে। আমি কি তাদের লাঞ্চ করাতে পারি না? এটা নিয়ে আপনি গান্ধীগিরির কি দেখলেন? ফুটবলকে ভালবাসি। এটা খুব সাধারণ ব্যাপার।”