ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : মন্দারমনির সমুদ্র সৈকতে CSJC (ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্টস ক্লাব) জমকলো অনুষ্ঠানে সম্মানিত হলেন দেশের এক ঝাঁক খেলোয়াড়,কোচেরা। বুধবার সন্ধ্যায় মন্দারমনির বেনিয়ান ট্রি-র রিসর্টে হয়ে গেল CSJC -এর বার্ষিক পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। CSJC এর ইতিহাসে এই প্রথম কলকাতার বাইরে এই অনুষ্ঠান হল।
বুধবার দুপুরেই প্রবল বৃষ্টির মধ্যে মন্দারমনি পৌঁছে গিয়েছিলেন প্যারা অলিম্পিকে পদক জয়ী দীপা মালিক, ‘৯০-এ বিলিয়ার্ডসে বিশ্বসেরার খেতাব পাওয়া পঙ্কজ কোঠারি, সৌরভ কোঠারি থেকে প্রনতি দাস, টুম্পা দেবনাথ, রিমো সাহা, জুয়েল সরকাররা।
২০২৩ সালের সেরা পারফরমেন্সের বিচারে বর্ষসেরার স্বীকৃতি যারা পেলেন তাঁরা হলেন,
▪প্রনতি দাস (জিমন্যাস্ট),
▪রিমো সাহা ( সাঁতারু )
▪মুকেশ কুমার (ক্রিকেট/পুরুষ বিভাগ)
▪রিচা ঘোষ (ক্রিকেট/মহিলা বিভাগ)
▪ডেভিড লালহলাসাঙ্গা (ফুটবল)
▪নীলাশ সাহা (দাবা)
▪অঙ্কুর ভট্টাচার্য ও পয়মন্তী বৈশ্য (টিটি)
▪মেহুলি ঘোষ, স্বর্ণালী রায় (শ্যুটিং)
▪সোনিয়া বৈশ্য (অ্যাথলেটিক্স)
▪ শেখ শরিফ (ভলিবল)
▪টুম্পা দেবনাথ (জিমন্যাস্ট কোচ,বিশেষ পুরস্কার )। লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মানে সম্মানিত হলেন দীপা মালিক ও পঙ্কজ কোঠারি।
তবে এদিনের সেরা আকর্ষণ ছিল ২০১৬ রিও প্যারা অলিম্পিকে রুপোর পদক জয়ী দীপা মালিক। CSJC -এর লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান নেওয়ার পর হুইল চেয়ারে বসে দীপা শোনালেন এই বাংলায় তাঁর বেড়ে ওঠার ঘটনা, রোগাক্রান্ত হওয়ার পর তাঁর কঠিন লড়াই করার ঘটনা। ক্রিকেট খেলতে এবং বাইক চালাতে পছন্দ করা দীপা ছোটবেলায় রোগাক্রান্ত হয়ে হাঁটার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু হার না মানা মনোভাব কে পুঁজি করে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। চল্লিশ বছরে জ্যাভলিনে হাতেখড়ি। দুই বছরের মধ্যে বিশ্বের দুনম্বর হিসেবে উঠে এসেছিলেন শটপুটে সাফল্যের কারনে।
‘পদ্মশ্রী’ দীপা জানিয়েছেন কলকাতা তার ছোটবেলার শহর। এই শহরের ঝালমুড়ি,ফুচকার স্বাদ আজও ভুলতে পারেননি। বাবা সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন, সেই সুবাদে উত্তরবঙ্গের হাসিমারা, শিলিগুড়ি,জলপাইগুড়িতে থাকার অভিজ্ঞতা আজও তাজা। কলকাতায় দীপার প্রথম স্কুল। সল্টলেক কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ে স্কুল জীবন শুরু হওয়া যা আরও দীর্ঘায়ত হয়েছিল এই শহরেই। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে প্রথম রকব্যাণ্ড সঙ্গীত শোনা বা প্রথম হলিউডের সিনেমা দেখা কলকাতায়। নিজের দিদির বিয়ে হয়েছে বাঙালি পরিবারে। পাঞ্জাবী পরিবারের কন্যার, বাঙালি পরিবারের রীতিনীতিতে অভ্যস্ত হওয়ার গল্পের কথা শোনালেন।
ছোটবেলা থেকে ঠাকুমার প্রশয় ছিল দীপা মালিকের সমস্ত কাজে। পরবর্তী জীবনে স্বামী এবং সন্তানরা সমর্থনের হাত বাড়ালেও দীপা ভুলতে পারেন না ঠাকুমার প্রথম সমর্থনের কথা। তাই লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মান দীপা উৎসর্গ করলেন ঠাকুমাকে। তাঁর হাত ধরেই প্যারা স্পোর্টসে সাফল্যের আলো। তাই আজও ঠাকুমাকে ভুলতে পারেননি দীপা।
এদিন, CSJC অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অলিম্পিয়ান জয়দীপ কর্মকার, প্রাক্তন ফুটবলার দীপেন্দু বিশ্বাস, আইএফএ-এর সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস, প্রাক্তন সচিব জয়দীপ মুখার্জি, CSJC -এর সভাপতি সুভেন রাহা এবং বেনিয়ান ট্রি গ্রুপের কর্ণধার প্রবীর রায় চৌধুরী। CSJC ঝলমলে অনুষ্ঠান দেখে আইএফএ সহসভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাব আধিকারিকদের কাছে এক অন্য প্রস্তাব রাখেন। “ক্যালকাটা স্পোর্টস জার্নালিস্ট ক্লাব খুব ভাল কাজ করছে। শুনলাম, এই প্রথম কলকাতার বাইরে CSJC -এর এত ভাল অনুষ্ঠান হচ্ছে। ক্লাবের যারা আছেন তাদের কাছে আমার প্রস্তাব, CSJC শুধু কলকাতা কেন্দ্রিক কেন? এই ক্রীড়া সাংবাদিক ক্লাবের গতিবিধি গোটা বাংলা জুড়ে হোক।”
এদিকে, আজ, বৃহস্পতিবার সকালে মন্দারমনির বেনিয়ান ট্রি রিসর্টে নতুন করে গড়ে উঠল স্পোর্টস মিউজিয়াম। বেনিয়ান ট্রি ও CSJC- এর যৌথ উদ্যোগে এই স্পোর্টস মিউজিয়ামের উদ্বোধন করেন পদ্মশ্রী দীপা মালিক।