◆সন্দীপ দে◆
CAB পরিচালিত ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ঘিরে বালুরঘাটে চূড়ান্ত অব্যবস্থা। এমনই অভিযোগ উঠছে। এই ঘটনায় প্রচন্ড বিরক্ত প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া দলের ক্রিকেটার থেকে কর্তারা। শুধু তাই নয়,পিচ কভারও ব্যবহার করা হয়নি। যা ক্রিকেটের নিয়ম বিরুদ্ধ কাজ। ক্রিকেটারদের থাকা খাওয়ার অব্যবস্থার পাশাপাশি দক্ষিণ দিনাজপুর ক্রীড়া সংস্থার (বালুরঘাট) জগমোহন ডালমিয়া ইন্ডোর ক্রিকেট কোচিং সেন্টারেও বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ঘটনাও খেলতে আসা ক্রিকেটার,কর্তাদের অবাক করেছে বলে জানা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,CAB পরিচালিত ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টি-২০ ক্রিকেট প্রতিযোগিতার আসর বসেছে মুর্শিদাবাদের বহরমপুর শহর ও দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাট শহরে। বহরমপুর সুষ্ঠুভাবে টুর্নামেন্ট পরিচালনা করলেও বালুরঘাটে একাধিক সমস্যা দেখা দিয়েছে।
CAB – এর খরচেই এই টুর্নামেন্ট হচ্ছে। এই টুর্নামেন্টে CAB প্রত্যেক দিন, প্রতি ক্রিকেটারের জন্য হোটেল বাবদ ১ হাজার টাকা এবং খাওয়ার জন্য ৫০০ টাকা বরাদ্দ করেছে। তারপরেও কেন থাকা খাওয়ার সমস্যা হল? ঠিক কি কি অভিযোগ উঠছে? বালুরঘাটে খেলতে যাওয়া একাধিক ক্রিকেটার ও কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে যে সব অভিযোগ উঠছে তা এই রকম –
১) ক্রিকেটারদের থাকা খাওয়ার সমস্যা। মূলো-আলুর ঝোল,একটা ভাজা,ডিম,ডাল, ভাত দেওয়া হচ্ছে। কখনও সোয়াবিনের তরকারি এবং কখনও সখনও মাছ বা মাংস দেওয়া হলেও তা নাকি ভাল মানের নয়।
২) এমনও হয়েছে রাতে শবজি ডাল,ডিমের সঙ্গে চারটে রুটি দেওয়া হচ্ছে। চারটের বেশি রুটি দেওয়া হচ্ছে না। এমনটাই অভিযোগ উঠছে।
৩) হুগলি জেলার ক্রিকেট দল যখন বালুরঘাটে পৌঁছয় তখন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা হোটেলের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু একটা ঘরে ৬ জন ক্রিকেটারকে থাকতে হয়েছে। হুগলি প্রতিবাদ করায় পরের দিন একটা লজের ব্যবস্থা করেন জেলার কর্তারা। হুগলির এক কর্তা (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,যে লজে রাখা হয়েছে সেখানে গরম জলের ব্যবস্থায় নেই।
এই ব্যাপারে বালুরঘাটে খেলতে যাওয়া উত্তর ২৪ পরগনা জেলা দলের ম্যানেজার দেবদাস ব্যানার্জি বালুরঘাট থেকে ফোনে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”আমাদের প্রথমে স্টেডিয়ামের নিচে রেখেছিল। পরে আপত্তি করায় আমাদের একটি হোটেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আবার গরম জল পাওয়া যাচ্ছে না। শীতে গরম জলটাও ঠিক ভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। খাবারের ব্যাপারে একটা কথায় বলব,নট আপ টু দ্য মার্ক।”
হুগলির এক কর্তা বলছিলেন,”ভবিষ্যতে আর কখনও বালুরঘাটে টিম নিয়ে আসবো না। তিক্ত অভিজ্ঞতা হল। এখন ভালই ভালই বাড়ি ফিরতে পারলে বাঁচি।”
আপনারা কি সিএবিকে জানিয়েছেন? দেবদাসবাবু জানান,”ইন্দুভুষন রায় জেনেছেন। তবে সিএবিকে এখনও লিখিত ভাবে না জানানো হলেও মৌখিক ভাবে অব্যবস্থার খবর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।”এই ব্যাপারে হুগলির কর্তাটিও বলেন, সিএবির কাছে খবর গেছে। আমরা কারও বিরুদ্ধে নই। কিন্তু খেলার জন্য প্রাথমিক সুবিধাটা তো দেবে।” এই কর্তাটি আরও জানান, তিনি যখন সন্ধ্যার পর স্টেডিয়ামে যান তখন জেলা ক্রীড়া সংস্থার কোনও কর্তা ছিলেন না। তখন এক শীর্ষকর্তাকে ফোন করলে জেলার সেই কর্তাটি হুগলির কর্তাকে বলেন,ওখানে আজ কিছু হবে না। বিয়ের অনুষ্ঠান আছে। একটা কাজ করুন,স্টেডিয়ামে অপেক্ষা করুন। আমি যাচ্ছি। বিয়ের অনুষ্ঠানে দুজনে একসঙ্গে গিয়ে খেয়ে নেব। এমন প্রস্তাব পেয়ে হুগলির কর্তাটি প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে বলতে থাকেন,’মানে কি? আমি বিনা নিমন্ত্রণে কেন খেতে যাব? আমি যাব না।’ওইদিন স্টেডিয়ামের জগমোহন ডালমিয়া ইন্ডোর ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে বিয়ে বাড়ি ভাড়া দিয়েছিলেন জেলার কর্তারা। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রত্যেক জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে জগমোহন ডালমিয়ার নামে ক্রিকেট কোচিং সেন্টার গড়ে তোলার জন্য আর্থিক অনুদান দিয়েছিল সিএবি। সেই কোচিং সেন্টারে এখন বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেয় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্তারা।
এমন অভিযোগ বিষয় নিয়ে সিএবি সচিব নরেশ ওঝার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই প্রতিবেদককে নরেশবাবু বলেন,”বালুরঘাটে টুর্নামেন্টের অব্যবস্থা নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে তা আপনার কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আমরা গুরুত্ব দিয়েই খোঁজ নেব। আপনাকে এখনই এর বেশি কিছু বলতে পারব না।”
সিএবির সহসভাপতি অমলেন্দু বিশ্বাসও বলেন,”লিখিতভাবে এখনও পযর্ন্ত কোনও দল অভিযোগ করেনি। লিখিতভাবে অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টা খতিয়ে দেখব।”
বালুরঘাটে গতকাল রাতে (বৃহস্পতিবার) পৌঁছে গিয়েছেন টুর্নামেন্ট অবজার্ভার অতনু ঘোষ। পিচ কভার নিয়ে তিনি জানান,”আমার আসার আগে এখানে আর একজন অভজার্ভার ছিলেন। গতকাল রাতে পৌঁছেছি। আজ সকালে বালুরঘাট স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখি পিচ কভার ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু আমি শুনেছি আগে একদিনের জন্যও পিচ কভার ব্যবহার করা হয়নি। এই বিষয় ছাড়া মূল মাঠ এবং গ্রাউন্ডসম্যান ঠিক আছে।”
বালুরঘাটে সিএবি পরিচালিত এই টুর্নামন্ট আয়োজনের দায়িত্বে থাকা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব অমিতাভ (দুলু) ঘোষকে ফোন করলে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে জানান,”দেখুন বিয়ে বাড়ি ভাড়া দেওয়া নতুন নয়। অতীতেও হয়েছে। আর ক্রিকেটারদের খাবার নিয়ে যে অভিযোগ উঠছে সেটাও ঠিক নয়।” কিন্তু একাধিক ক্রিকেটার ও কর্তারা অভিযোগ করছেন তো! উত্তরে অমিতাভবাবু তখন বলেন, ইন্দুভুষন রায় তো আছেন। উনি তো বলছেন ঠিক আছে। আর পিচ কভার নিয়ে যা বলছেন সেটা তো টেকনিক্যাল ব্যাপার। অবজার্ভাররা ব্যাপারটা দেখছেন। দেখুন আমাদের এত ভাল মাঠ আছে। তাই নিয়ে লিখুন। খেলা নিয়ে লিখুন।”
কিন্তু খেলতে গিয়ে যদি ক্রিকেটারদের থাকা খাওয়ার সমস্যা হয়, তাহলে তার দায়িত্ব তো জেলার ক্রীড়া সংস্থার সচিব হিসেবে আপনার উপর দায় বর্তায়। আপনি বলছেন অবজার্ভাররা টেকনিক্যাল ব্যাপারটা দেখছেন। তারমানে ধরে নিতে হবে অবজার্ভাররা পিচ কভার ব্যবহার করেননি? এই প্রশ্নের উত্তর অমিতাভ ঘোষ দিতে পারেননি। প্রসঙ্গত, অতনু ঘোষের আগে অবজার্ভার ছিলেন শৈবাল বাগচি। এই তথ্য অমিতাভবাবুই দিলেন। কিন্তু শৈবাল বাগচির সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এদিকে বহরমপুরে সিএবি পরিচালিত ইন্টার ডিস্ট্রিক্ট টি-২০ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট সুষ্ঠুভাবেই হচ্ছে। এই মুহূর্তে বহরমপুরে আছেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার শরদীন্দু মুখার্জি। তিনি বহরমপুর থেকে ফোনে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,”বহরমপুরের আয়োজন আমাকে মুগ্ধ করেছে। ক্রিকেটারদের থাকা,খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে। একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন মুর্শিদাবাদের কর্তারা। জেলার ক্রিকেটকে একটা জায়গায় নিয়ে যেতে ওঁরা যেন প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জেলার কর্তাদের আন্তরিক প্রচেষ্টা আমার ভাল লেগেছে।”
সিএবি ট্যালেন্ট হান্ট কমিটির সদস্য হলেন শরদীন্দু মুখার্জি ও ইন্দুভুষন রায়। সেই কারণেই এই দুই প্রাক্তন ক্রিকেটার বহরমপুর ও বালুরঘাটে আছেন। জেলার প্রতিভাবান ক্রিকেটারদের তুলে আনাই হল তাঁদের মূল লক্ষ্য।