সন্দীপ দে▪কল্যাণী
আর কবে? হ্যাঁ, বাংলা দল নিয়ে আর কবে সচেতন হবেন CAB কর্তারা? পরিস্কার করে বলতে গেলে, CAB কর্তাদের অপেশাদার মনোভাব, অবহেলার কারণে রনজি ম্যাচ থেকে কাঙ্খিত পয়েন্ট থেকে বঞ্চিত হল বাংলা সিনিয়র ক্রিকেট দল। পাশাপাশি কল্যাণীতে CAB – র ‘বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র মাঠ নিয়েই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। যার দায় পড়ছে CAB কর্তাদের উপর।
গত ১৮ অক্টোবর কল্যাণীর ‘বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি’র মাঠে বাংলা -বিহারের রনজি ম্যাচ ছিল। কিন্তু ম্যাচের আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় পরপর চার দিনে একটা বলও খেলা হল না। সাম্প্রতিক কালে রনজিতে এমন ঘটনা কবে ঘটেছে মনে করা যাচ্ছে না। একদিনের বৃষ্টির কারণে ম্যাচের চারটে দিন মাঠ শুকনো করানো গেল না! ভাবাই যায় না। আজ,সোমবার আম্পায়াররা শেষ চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। ফলে মাত্র এক পয়েন্ট নিয়েই কলকাতা ফিরতে হল লক্ষ্মী,অনুষ্টুপ, ঋদ্ধিমানদের। প্রসঙ্গত, এই গ্রুপে বিহার হল সব থেকে দুর্বল দল। এই বিহারের বিরুদ্ধে ৭ পয়েন্ট নেওয়ার লক্ষ্যে ছিল বাংলা দল। যাতে নক আউট পর্বে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সুবিধা হত। কিন্তু সেটা হল না। চোখে মুখে হতাশা ঝড়ে পড়ছিল কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লার। তিনি বলেন,”খেলাই হল না। খারাপ তো লাগছেই। কি আর বলব?” অনুষ্টুপ মজুমদারের কথায়,”খেলা হলে ভাল হত। কিন্তু হল না। কিছু বলার নেই।” অপ্রত্যাশিত ঘটনায় বিরক্তির কারণ বাংলার ক্রিকেটাররা মুখে না বললেও বোঝা যায়, বুঝে নিতে হয়।
![](https://insidesports.in/wp-content/uploads/2024/10/IMG_20241021_204825.jpg)
রনজির হোম ম্যাচে বাংলা দল এমন অসহযোগিতার মুখে পড়তে হল CAB কর্তাদের অপেশাদার মনোভাবের জন্য। CAB কর্তাদের ভূমিকায় উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
(১) ম্যাচ শুরুর দুই দিন আগেই বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনার কথা ঘোষণা করেছিলেন আবহাওয়াবিদরা। তারপরও কেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি?
২) কল্যাণীর এই ক্রিকেট মাঠে পিচ কভার থাকলেও পুরো মাঠ ঢাকার কোনও ব্যবস্থা নেই কেন?
(৩) এমন নয় যে প্রত্যেক দিন বৃষ্টি হয়েছে। তারপরও চারদিনেও মাঠ শুকোনো গেল না? তাহলে কি ধরে নিতে হবে, মূল মাঠের পরিচর্যা ঠিক ভাবে হয় না? মাঠের ড্রেনেজ সিস্টেম কাজ করছে না? যদি তাই হয়,তাহলে কর্তাদের নজরে আসেনি কেন?
(৪) শেষ মুহূর্তে বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু কভার এনেও বিশেষ কোন কাজে এলো না কেন? তাছাড়া মাঠকর্মীর সংখ্যাও খুব কম ছিল। ফলে কল্যাণীর কিছু স্থানীয় ছেলেদের ডেকে ৩০০ টাকা ও মাংস – ভাত খাইয়ে মাঠের কাজ করানো অভিযোগ উঠছে।
(৫) প্রশ্ন উঠছে, CAB এর গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মদন ঘোষের ভূমিকা কি? গত চারদিনে দেড় দিন তাঁকে মাঠে দেখা গেছে। বাকি আড়াই দিন মদনবাবু কোথায় ছিলেন?
(৬) ব্যক্তিগত কাজে CAB সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলি দেশের বাইরে। কিন্তু সচিব নরেশ ওঝা প্রথম দিন মাঠে গিয়েছিলেন। একদিনের জন্য। মাঠে থেকেও তাঁর বিশেষ ভূমিকা দেখা যায়নি। বরং ম্যাচ শুরুই হল না অথচ অভিমন্যু ঈশ্বরণের শততম ম্যাচের (প্রথম শ্রেনী ক্রিকেট) জন্য স্মারক দিয়ে কলকাতায় সেই যে ফিরে এসেছেন আর কল্যাণী মুখো হননি নরেশবাবু।
(৭) BCCI এর অনুদান নিয়ে CAB ‘র তৎকালীন কর্তারা কল্যাণী ইউনিভার্সিটির জমি নিয়ে তৈরী করেছিলেন স্বপ্নের ‘বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি।’ খুব ভাল পরিবেশ। কিন্তু সময়পোযোগী হয়ে মূল মাঠের রক্ষণাবেক্ষণে ব্যর্থ কেন CAB,র বর্তমান কর্তারা? সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মাঠের কোনও পরিচর্চা করা হয়নি। এটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন নেই।
(৮) CAB ধনী সংস্থা। কত টাকাই তো ‘অকাজে’ খরচ করা হয়। অথচ BCA (বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমি) মাঠ নিয়ে কোনও পরিকল্পনা নেই। কেন মাঠ কভারের স্থায়ী ব্যবস্থা করা যায়নি? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।
![](https://insidesports.in/wp-content/uploads/2024/10/IMG_20240929_182023-1-1024x279.jpg)
কল্যাণী থেকেই CAB এর গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান মদন ঘোষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ কে বলেন,”দেখুন, আমি CAB এর গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান ঠিকই। কিন্তু এই রনজি ম্যাচের কল্যাণী মাঠের দেখভালের জন্য BCA এর একটি কমিটি আছে। পুরো দায়িত্বে আছেন পিচ কিউরেটর সুজনদা (মুখার্জি)। আমার কোনও ভূমিকায় নেই। আপনি সুজনবাবুর সঙ্গে কথা বলতে পারেন।” তারপরেই এই প্রতিবেদক পিচ কিউরেটর সুজন মুখার্জির সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন,”রনজি ট্রফির খেলায় ভারতের কোনও মাঠে কি মাঠ কভার আছে?”
![](https://insidesports.in/wp-content/uploads/2024/10/IMG_20241021_204659.jpg)
পাল্টা প্রশ্ন করে তাঁকে বলা হয়, ইডেনেই তো মাঠ কভার আছে। আর কল্যাণীর এই মাঠও তো CAB এর। প্রশ্ন শেষ করার আগেই সুজনবাবু বলতে থাকেন,”আসলে ম্যাচের আগে এত বৃষ্টি হয়েছে যে মাঠ আর শুকনো করা যায়নি। ” চারদিনেও মাঠ ভেজায় থাকল। তার মানে মাঠের ড্রেনেজ সমস্যা? উত্তরে সুজনবাবু বলেন,”সেটা হয়তো হবে। আমি কাল বা পড়শু কল্যাণী যাচ্ছি। মাঠ কভারের ব্যবস্থা হবে।”
![](https://insidesports.in/wp-content/uploads/2024/10/IMG_20241021_204925-1024x485.jpg)
CAB সচিব নরেশ ওঝাকে ফোন করে এই ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, “আমি ইডেনে আছি। মেয়েদের ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে ব্যস্ত আছি। আপনি আধ ঘন্টা পর ফোন করুন।” এর পর একাধিকবার ফোন করলেও নরেশ ওঝার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।