ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : এবার ‘বড়ে মিঞা।’ চলে গেলেন ভারতীয় ফুটবলের ফাইটার, কিংবদন্তি ফুটবলার মহম্মদ হাবিব। আজ, মঙ্গলবার হায়দরাবাদের নিজের বাড়িতে মৃত্যু হয় হাবিবের। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।

অনেক আগেই কলকাতা ছেড়েছিলেন। ফিরে গিয়েছিলেন নিজের রাজ্যে হায়দরাবাদে। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পার্কিনসন রোগে ভুগছিলেন। চিকিৎসা চললেও ক্রমশই শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। শেষ দিকে স্মৃতি শক্তি প্রায় হারিয়েই ফেলেছিলেন মহম্মদ হাবিব।

হাবিবের মৃত্যুর খবরটা শুনে প্রথমে কোনও কথায় বলতে পারছিলেন না মোহনবাগানের ঘরের ছেলে সুব্রত ভট্টাচার্য। “হাবিবদা আমাদের শৃঙ্খলার মধ্যে বেঁধে রেখেছিলেন বলেই আমি হারিয়ে যায়নি।” একান্ত আলাপচারিতায় সুব্রত ভট্টাচার্য বহুবার বলেছেন সেই কথা। এদিনও সুব্রত ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”আমি যখন মোহনবাগান মেসে থাকতাম,তখন হাবিবদা আমাদের সঙ্গে থাকতেন। রাত নটার মধ্যে রাতের খাবার খেয়ে ঘুমোতে যেতে হত। সাত সকালে উঠে প্র্যাকটিস। দুপুরে ফালতু আড্ডা মারা যাবে না। আমরা তখন যুবক। একবার রয়েড স্ট্রিটের মোহনবাগান মেসের জানালা দিয়ে পাশের বাড়িতে উকি মারছিলাম। সেই দেখে চ্যালা কাঠ নিয়ে তেড়ে আমাদের মারতে এসেছিলেন হাবিবদা। মাঠে বিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইটা শিখিয়েছিলেন। মাঠের বাইরে শৃঙ্খলা শিখিয়েছিলেন। আমার ফুটবলার জীবনে হাবিবদার অনেক বড় অবদান আছে। হাবিবদার মতো শৃঙ্খলাপরায়ন মানুষ যদি মোহনবাগান মেসে না পেতাম, তাহলে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে যেতো। হাবিবদাকে কখনও ভুলতে পারব না।”

মহম্মদ হাবিব দলের সঙ্গে কতটা একাত্ম হয়ে উঠতেন, তা মাস কয়েক আগে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে একটি ঘটনার কথা বলেছিলেন ইস্টবেঙ্গলের সোনার সত্তরের সচিব অজয় শ্রীমানি। অজয়বাবুর কথায়,”সালটা মনে করতে পারছি না। সেই বছর হাবিব ইস্টবেঙ্গলে। কলকাতা লিগের একটি ম্যাচে পুরো দলটাই খারাপ খেলেছিল। কোনও রকমে ম্যাচটা ড্র করেছিল। হাবিবও সেই দিন ভাল খেলতে পারেনি। ম্যাচের শেষে মাঠ থেকে যখন ফুটবলাররা উঠে আসছে তখন দেখছি হাবিব মুখ থেকে থুথু বের করে হাতে নিয়ে নিজের মুখে মাখছে। সেই দৃশ্য দেখে চমকে উঠেছিলাম। নিজে ভাল খেলতে পারেনি বলেই নিজেই নিজের থুথু নিজের মুখে মাখছে। এই ধরনের ডেডিকেশন ভারতের কোন ফুটবলারের আছে? ভাবাই যায় না।”

মহম্মদ হাবিব ছয়ের দশকের মাঝামাঝি কলকাতায় এসেছিলেন। ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন এই কলকাতায় খেলে। ১৮ বছর বাংলায় থেকে তিন প্রধানে খেলেছেন মাথা উঁচু করে। দেশের হয়ে খেলেছেন টানা ১১ বছর। ১৯৮০ সালে পেয়েছেন ‘অর্জুন’ পুরস্কার। ফুটবল থেকে অবসর নেওয়ার পর হায়দরাবাদে ফিরে গেলেও পরে এই বাংলায় এসেছেন কোচিং করতে। আজ এক সত্যিকারের ‘ফাইটার’কে হারাল ভারতীয় ফুটবল।