আর্থিক সংকট, জ‍্যাকপট জিততে লটারির টিকিট কিনছেন নইমুদ্দিন

    0

    সন্দীপ দে

    ফুটবল নিয়ে তাঁকে যদি কোনও প্রশ্ন করা হয়,সঙ্গে সঙ্গে বলে ওঠেন,”কথা বলতে পারি, কিন্তু সাক্ষাৎকারের জন‍্য টাকা দিতে হবে। বিদেশে এই নিয়ম আছে। তোমরা কেন দেবে না?” বক্তা ১৯৭০ এর ব‍্যাঙ্কক এশিয়াডে অধিনায়ক সৈয়দ নইমুদ্দিনের। লকডাউনের আগে নইমের সঙ্গে দেখা হয়েছিল এই প্রতিবেদকের। তখনই কথাগুলি বলেছিলেন। পরে জেনেছিলাম, আর্থিক সঙ্কট চলছে তাঁর। ছেলের কাছে হাত পাততে সম্মানে লাগে। সতীর্থরা কখনও সখনও সাহায্য করেন। এই যেমন সুব্রত ভট্টাচার্য। সেপ্টেম্বরে পার্ক স্ট্রিটে এক আড্ডায় সুব্রতর কাছেই জেনেছিলাম। নইম সরাসরি ফোন করে সুব্রতকে টাকার জন‍্য বলেছিলেন। সুব্রত তখন ইউনাইটেড স্পোর্টসের কর্তা নবাব ভট্টাচার্যকে নইমের আর্থিক সমস‍্যার কথা বলেন। নবাব ভট্টাচার্য সঙ্গে সঙ্গে ২০ হাজার টাকার ব‍্যবস্থা করে দেন। সুব্রতর এক ঘনিষ্ট প্রাক্তন ভলিবল খেলোয়াড় সেই আড্ডাতে বলেছিলেন, “টাকা দিয়ে কি হবে সন্দীপ? খোঁজ নিয়ে দেখো, ওই ২০ হাজার টাকার মধ‍্যে নইমদা হয়তো ৫ হাজার টাকার লটারির টিকিটই কিনে ফেলবেন।”

    তিনি কোনও ভুল বলেননি। প্রত‍্যেক সপ্তাহের একটা দিন নিজের সেই পুরনো স্কুটার (নর্মদা কোম্পানি ) নিয়ে চলে যান বালিগঞ্জ রেল স্টেশনে। বেশ কিছু লটারির টিকিট কেটে সোজা বাড়ি। কেনা টিকিটের লটারি খেলার দিন সকাল থেকে টেনশন। জ‍্যাকপট মিলবে তো? নির্দিষ্ট সময়ে গোছা গোছা লটারির টিকিট নম্বর মিলিয়ে দেখে হতাশ হয়ে পড়েন। পরের দিন আবার বালিগঞ্জ স্টেশনে গিয়ে ফের লটারির টিকিট কেনা। নইম স্বপ্ন দেখেন, তিনি কোটি টাকার জ‍্যাকপট জিতেছেন। এখনএ দেখেন। কিন্তু এভাবে আর কতদিন?
    লকডাউনের আগে যখন দেখা হয়েছিল, তখন নইম বলেছিলেন,”একবার জ‍্যাকপট প্রায় জিতেই গিয়েছিলাম। খুব কাছে এসেও কয়েকটা নম্বর না মেলায় জেতা হয়নি। কোনদিন হয়তো জিতে যেতে পারি।”

    ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ। ১৯৭০ সালের এশিয়াডে তাঁর নেতৃত্বে ভারত ফুটবলে শেষ ব্রোঞ্জ পদক জিতেছিল। তিনি ‘অর্জুন’, ‘দ্রোণাচার্য’। ‘মোহনবাগান রত্ন’ ও ইস্টবেঙ্গলের ‘লাইফটাইম অ‍্যাচিভমেন্ট’ ও রাজ‍্য সরকারের ‘ক্রীড়াগুরু’ পেয়েছেন। এমন এক বর্ণময় ক্রীড়া বক্তিত্বকে কোটিপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখেন লটারির উপর ভরসা করে! ভাবা যায় না।

    জানা যায়, নইমের ছেলেরা বাইরে থাকেন। বাইপাসের ধারে বিলাশ বহুল ফ্ল‍্যাটে থাকেন নইম। এই ফ্ল‍্যাটটা কোটায় পেয়েছিলেন, বাম আমলে। এখন এই ফ্ল‍্যাটটায় মাসিক সার্ভিস চার্জ প্রায় ১০ হাজার টাকা। এরপরে সংসার খরচ আছে। এশিয়াডে ব্রোঞ্জ জেতার জন‍্য সরকার মাসে ৬ হাজার টাকা দিত। এখন নাকি কমে ৩ হাজার টাকা হয়েছে। একবার এক কোম্পানি নইমকে পেট্রোল পাম্প করে দেওয়ার কথা বলেছিল। প্রয়োজন শুধু একটা জমি। তৎকালীন ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্রকে জমি চেয়ে আবেদন করেছিলেন। রাজ‍্যের মুখ‍্যমন্ত্রীকে দেখা করতে চেয়েও দেখা মেলেনি। এসব নইম বলেছেন তাঁরই এক ঘনিষ্টকে।
    জানাগেল, ২০ বছর হল তিনি বেকার। কোনও আয় করার কাজ নেই। মিলিটারি মেজাজের কোচ নইমকে বহু বছর ধরেই কোনও ক্লাব ডাকেনা। মাঝে মধ‍্যে দুই, তিন মাসের জন‍্য বাংলাদেশ গিয়ে কোনও ক্লাবে কোচিং করিয়ে আসেন। কিন্তু সেখানে পেমেন্ট ভাল নয়।

    ১০ বছর আগে নইমের নামে একটি বেনিফিট ম‍্যাচ করেছিলেন ক্রীড়া সাংবাদিক মানস চক্রবর্তী। সেই বেনিফিট ম‍্যাচ থেকে ভাল টাকা উঠেছিল। কিন্তু তাঁর নামে ম‍্যাচ আয়োজন করে যে টাকা উঠেছিল তার পুরো টাকা তাঁকে দেওয়া হয়নি। তারজন‍্য সাংবাদিক সম্মেলন করে টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষনা করেছিলেপ নইম। পরে নাকি সেই টাকা গ্রহণ করেছিলেন। ওই ম‍্যাচ থেকে কত টাকা উঠেছিল আর কত টাকা দেওয়া হয়েছিল তা একমাত্র নইমুদ্দিন ও মানস চক্রবর্তীই জানেন। তবে ওই বির্তকিত ম‍্যাচের পর সাংবাদিক মানস আর কখনও বেনিফিট ম‍্যাচ করেননি।

    ২০১৭ সালে নইম ঠিক করে ফেলেছিলেন, তাঁর সব ট্রফি, পদক বিক্রি করে দেবেন। তাঁর লক্ষ‍্য ছিল, ৫০ লক্ষ টাকায় সব পদক, ট্রফি বিক্রি করবেন। তারপর ওই টাকা নিয়ে হায়দরাবাদ গিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকবেন। কারণ, কলকাতার ফ্ল‍্যাট বিক্রি করার ইচ্ছে থাকলেও ছেলেরা রাজি নয়।
    কিন্তু প্রশ্ন হল, তাঁর সব ট্রফি, পদক কে কিনবে? ক্রিকেট ব‍্যক্তিত্ব হলে নিলাম করে বিক্রি করা যায়। ভারতীয় ফুটবলে এখনও হয়নি। নইম সেটা বুঝে গিয়েছেন বলেই আরও বেশি করে লটারির টিকিট কিনছেন।

    LEAVE A REPLY

    Please enter your comment!
    Please enter your name here