বিজেপির পুজোর উদ্বোধনে মোদী, নৃত‍্যে সৌরভ পত্নী ডোনা, শুরু বিতর্ক

0
সন্দীপ দে

ভারতীয় ক্রিকেটে সর্বকালের অন‍্যতম সেরা অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলিকে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। সল্টলেকের ইউজেডসিসি-এর পুজো হল বিজেপির। মহাষষ্ঠীর সন্ধ‍্যায় দিল্লি থেকে সেই পুজোর ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। উপস্থিত ছিলেন বিজেপির সব নেতা। সেই বিজেপির পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে নাচলেন বিসিসিআইয়ের সভাপতি সৌরভ পত্নী ডোনা গাঙ্গুলি। আর তারপর থেকেই শুরু হয়েছে বিতর্ক।
প্রশ্ন ওঠার কারণ, বোর্ড সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে নাকি মোদী-শাহ’র ‘ভূমিকা’ আছে। বাংলা জয় করার জন‍্য ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রেখেছে বিজেপি। বাংলায় একটা বড় অংশ বিজেপি প্রীতি হয়ে উঠেছে। এটাই কাজে লাগাতে চান নরেন্দ্র মোদী। সেটাকে মাথায় রেখেই ২০১৯ সালের নভেম্বরে শ্রীনিবাসনের ইচ্ছেকে ‘ক্লোজ’ করে সৌরভকেই বোর্ড সভাপতি করা হয়। আর একই সঙ্গে সচিব করা হয় অমিত শাহ পুত্র জয় শাহকে।
তারপরেই সৌরভ গাঙ্গুলির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তর জল্পনা শুরু হয়। তিনি কি তাহলে বিজেপিতে যোগ দেবেন?
গত ডিসেম্বর মাসে আমরা – ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ ম‍্যাগাজিনে বিশেষ সংখ‍্যা প্রকাশ করেছিলাম -“বাংলায় বিজেপির মুখ সৌরভ?” তিনি কি বাংলার ভবিষ্যতের মুখ‍্যমন্ত্রী?

বাংলায় বিজেপি প্রীতি বাড়লেও সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়ার মত গেরুয়া শিবিরে কোনও নেতা নেই। কোন নেতাকে মুখ‍্যমন্ত্রী প্রজেক্ট করে নির্বাচনে লড়াই করবে বিজেপি? আর যাইহোক এই জায়গায় দিলীপ ঘোষ, রাহুল সিনহা বা মুকুল রায় ম‍্যাচ করে না। তাহলে? এমন একজনকে আনতে হবে যার সাংগঠনিক ক্ষমতা, জনপ্রিয়তা বা ব‍্যক্তিগত ক‍্যারিসমা আছে। যা বাঙালির কাছে গ্রহণযোগ্যতা আছে। বিজেপি সূত্রের খবর, রাজনৈতিক ভাবে বিজেপির প্রথম প্রথম পছন্দ ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী। দ্বিতীয় পছন্দ অবশ‍্যই প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলি। শোনা যায়, আর সেই রাস্তা খোলা রাখতেই নাকি বোর্ড সভাপতি হওয়ার ক্ষেত্রে মোদী-শাহ-এর জুটির বিরাট ভূমিকা আছে।

কিন্তু সৌরভ কি সরাসরি রাজনীতিতে আসবেন? তিনি আসলে কোথায় আছেন? বাম, রাম না ঘাস ফুলে?
চলতি মাসের ২০ তারিখ কলকাতা প্রেস ক্লাবে শিলিগুড়ির বাম মেয়র অশোক ভট্টাচার্যর এক বই উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন সৌরভ। সিপিএমের এই সিনিয়র নেতা অশোকবাবু ছাড়াও প্রাক্তন মুখ‍্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর সঙ্গে সৌরভের সম্পর্ক খুবই ভাল। সেটা সবাই জানেন। আবার মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়ের সঙ্গেও সৌরভের সম্পর্ক ভাল। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক। নির্বাচনে সৌরভকে সবাই চায়। তিনি কার কাছে ধরা দেবেন? আদৌ ধরা দেবেন?
কয়েক মাস আগে ডোনা গাঙ্গুলি বলেছিলেন, সৌরভ রাজনীতিতে এলে শীর্ষেই থাকবে। ডোনার এই মন্তব‍্য নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি।
সৌরভের বিজেপিতে আসা নিয়ে গত ডিসেম্বরে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর বিশেষ সংখ‍্যাতে মন্তব‍্য করেছিলেন বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী ও তৃণমূলের তাপস রায়। সেই বক্তব্য আবার তুলে ধরছি।

দিলীপ ঘোষ – ” সৌরভ দলে আসতেই পারে। আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে যদি সৌরভ বিজেপির মুখ হয়, তাহলে সমস‍্যা কোথায়? সব জায়গায় তো এই আলোচনা চলছে। রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।”

তাপস রায়-“সৌরভ-বিজেপি নিয়ে প্রশ্ন আপনারা করছেন। গণতান্ত্রিক দেশে যে কেউ রাজনীতিতে আসতে পারে। সৌরভ কি করবে আমি কি করে বলব? তবে হ‍্যাঁ, গোটা দেশে বিজেপির গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। বাংলায় ওরা ক্ষমতায় আসবে বলাটা বোকামি। এর বেশি কিছু মন্তব‍্য করতে পারব না।”

সুজন চক্রবর্তী – “যে সমস্ত রাজনৈতিক দল সৌরভকে নিয়ে ভাবনা চিন্তা করছে, সেটা তাদের ব‍্যাপার। ভবিষ্যতে সৌরভ বাংলার মুখ‍্যমন্ত্রী হবে কিনা, সেটা তো জ‍্যোতিষীরা বলতে পারবে। আমি জ‍্যোতিষশাস্ত্রে বিশ্বাস করিনা।”

গত বছর সৌরভ বোর্ড সভাপতি হওয়ার পর একটা টুইট করেছিলেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। তিনি টুইটে বলেছিলেন,” দাদা আমার কাছে সব সময় স্পেশাল। যে বছর দাদা, ক্রিকেটে কামব‍্যাক করেছিল, সেই সময় বলেছিলাম, দাদা একদিন বোর্ড প্রেসিডেন্ট হবে। আজ সেটা হল। আবার বলছি, দাদা একদিন পশ্চিমবঙ্গের মুখ‍্যমন্ত্রী হবে।”

কিন্তু দাদা কি চায়ছেন? সৌরভ কোনওদিনই সরাসরি নির্বাচনের লড়াইয়ে নামবেন না। সিএবির যখন সভাপতি হয়েছিলেন, তখনও নির্বাচনে লড়াই করে আসেননি। সিএবি কর্তা বিশ্বরূপ দে, সুবীর গাঙ্গুলিরা সৌরভকে কখনই সভাপতি হিসেবে চাননি। জগমোহন ডালমিয়ার মৃত‍্যুর পর (তখনও অসৌচ কাটেনি) মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় নবান্নে সৌরভ, বিশ্বরূপ, সুবীর ও অভিষেক ডালমিয়াকে ডেকে সেই দিনই সিএবির নতুন সভাপতি হিসেবে সৌরভের নাম ঘোষনা করেছিলেন মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়।
বিসিসিআই-এর ক্ষেত্রেও সেই অমিত শাহদের সাহায‍্য নিয়ে সভাপতি হয়েছেন সৌরভ। কাজেই আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনে সরাসরি কোনও রাজনৈতিক দলে সৌরভকে দেখা যাবে না। আবার এটাও ঠিক, মোদী তাঁকে বোর্ড সভাপতি করেছেন। তার জন‍্য ‘রিটার্ন’ ঠিক নিয়েই ছাড়বে। মুফতে কিছু হবে না। রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে সৌরভকে ব‍্যবহার করবেই। প্রচন্ড বুদ্ধিমান সৌরভও সেটা ভাল ভাবে জানেন। এ সবই ‘অ‍্যাডজাস্টের খেলা’।
মোহনবাগানের প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্র একটা কথা খুব বলতেন,”কোনও কিছুই স্ট‍্যাটিক নয়।”
ভবিষ্যতে সৌরভ বাংলায় মুখ‍্যমন্ত্রী হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here