রেফারিদের ছোট করে,মহমেডানকে সুবিধা করে দিইনি,এটা অপপ্রচার : জয়দীপ

0

◆সন্দীপ দে◆

তাঁর উপর রেফারিদের ক্ষোভ। বিরক্ত একাধিক ক্লাব কর্তা। তিনি নাকি মহমেডান স্পোর্টিংকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন‍্যই রেফারিদের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন? এমন গুরুতর অভিযোগ উঠছে আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জির বিরুদ্ধে। এমন সব অভিযোগের প্রশ্ন নিয়েই “ইনসাইড স্পোর্টস” পৌঁছে গিয়েছিল আইএফএ সচিবের দুয়ারে। আমাদের এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকার দিলেন জয়দীপ মুখার্জি।

প্রশ্ন : পুজোর পর কোথায় মিষ্টিমুখ করে মিষ্টি কথা বলব ভেবেছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি যা তৈরি হয়েছে তাতে তেতো দিয়েই শুরু করতে হচ্ছে।

জয়দীপ মুখার্জি : আমার কোনও সমস‍্যা নেই। আপনার যা প্রশ্ন আছে করতে পারেন।

প্রশ্ন : এক ঝাঁক রেফারি আপনার উপর ক্ষুব্ধ। আপনি যে ভাবে প্রকাশ‍্যে রেফারিদে ছোট করেছেন তাতে ওঁদের মনটা ভেঙে গিয়েছে। কেন এমন করলেন?

জয়দীপ মুখার্জি : আমি রেফারিদের ছোট করিনি। সচিব হওয়ার পর প্রথমে সিআরএ-এর বকেয়া মিটিয়েছি আগে। সিআরএ-পাশে আইএফএ সবসময় আছে। হঠাৎ কেন ওরা ক্ষুব্ধ হবে?

প্রশ্ন : দুটো কারণ আছে। প্রথমত, আপনি রেফারিদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রয়োজনে বোর্ডটাই ভেঙে দিতে চেয়েছেন। আপনার বক্তব‍্যে বার বার উঠে এসেছে রেফারিদের অযোগ‍্যতার প্রসঙ্গ।

জয়দীপ মুখার্জি : আমি যা বলেছি ঠিক বলেছি। কোনও ভুল বলিনি। রেফারিদের কখনই ছোট করতে চাইনি। যেটা বাস্তব সেটাই বলেছি।

প্রশ্ন : দ্বিতীয় কারণ হল, আপনি এমন একটা সময় রেফারি নিয়ে মুখ খুললেন তার পরের দিন মহমেডান- টালিগঞ্জ ম‍্যাচের রেফারি তন্ময় ধরকে ডেকে আনলেন। তাঁর লাল কার্ডের সিদ্ধান্ত ভুল সেটাই যেন প্রমাণ করলেন এবং তা প্রকাশও করে দিলেন। রেফারি যদি ভুল করে তাহলে তো সংশ্লিষ্ট কমিটি গোপনে রেফারিকে ফ্রিজ করে দেবে। এটাই তো হয়। তন্ময়ের ক্ষেত্রে সেটা হল কোথায়?

জয়দীপ মুখার্জি : সন্দীপ, আপনাকে নিশ্চিত ভাবে বলছি, আমরা বিষয়টা পাবলিক করিনি। আমরা ক্লোজ ডোর মিটিং করেছিলাম। তন্ময় যে ব‍্যবহার আমাদের সঙ্গে করেছে সেটা আশা করিনি। ও আমাদের বলছে “আপনারা জবাব দিন। জবাব না পেলে ঘর থেকে বেরোবো না।” আমরা যাবতীয় সিদ্ধান্ত রেফারিকে জানাতে বাধ‍্য নই। সিআরএকে জানাতে হয়। সেটাই করেছি। শুধু তাই নয়, সেইদিনের মিটিংয়ের পর তন্ময় নিজে ফেসবুকে বিষয়টা প্রকাশ করেছে। আমার কাছে সেই স্ক্রিন শট আছে। আমি আপনাকে এখনই পাঠিয়ে দিচ্ছি। পরের দিনই আমি সিআরএকে লিখিত ভাবে সব জানিয়েছি। একজন রেফারি ভুল করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মাদার বডি হিসেবে আইএফএ সেই রেফারিকে ডাকতে পারবে না? এবার লিগের ১২ টা দলের মধ‍্যে ছ’টা দল রেফারিদের নিয়ে অভিযোগ করেছে। আমাদের ক্লাবকেও তো দেখতে হবে।

সচিব জয়দীপের দেওয়া রেফারি তন্ময় ধরের পোষ্ট করা ছবি

প্রশ্ন : অবশ‍্যই ক্লাবকে দেখবেন। আমি যতদুর জানি জর্জ টেলিগ্রাফ,টালিগঞ্জ অগ্রগামী, বিএসএস এবং মহমেডান -এই চারটি ক্লাব রেফারি নিয়ে অভিযোগ করেছে। আপনি শুধু মহমেডানের অভিযোগ নিয়ে মিটিং ডাকলেন। অন‍্য তিন ক্লাবের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করলেন না কেন? আর এমন সময় মিটিংটা ডাকলেন যার তিন দিন পর ইউনাইটেড স্পোর্টসের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যাচ!

জয়দীপ মুখার্জি : আপনি যে তিনটি ক্লাবের নাম উল্লেখ করলেন তারা নর্মাল অভিযোগ করেছিল। আর মহমেডান নিয়ম মেনে,টাকা দিয়ে প্রোটেস্ট করেছে। কাজেই আমাকে ম‍্যাচের আগে মিটিং ডাকতেই হবে। কিছু করার নেই।

প্রশ্ন : এমন প্রশ্নও উঠছে যে, পুরো ঘটনাটার স্ক্রিপ্ট আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল।

জয়দীপ মুখার্জি : মানে? আপনি কি ইঙ্গিত করছেন?

প্রশ্ন : আপনি এবার লিগ নিয়ে যা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সব ক্ষেত্রেই আপনি অংশগ্রণ করা ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা করেছেন। কিন্তু লিগের মাঝপথ পেরিয়ে হঠাৎ মডালিটি বদলে ফেলে নোটিশ পাঠালেন যে, গ্রুপ লিগের ম‍্যাচের কোনও লাল কার্ড, হলুদ কার্ড নকআউট পর্বে গ্রাহ‍্য হবে না। এই নিয়ম যখন করলেন তখন কিন্তু আপনি ক্লাব কর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসলেন না। আরও অবাক কাণ্ড কিছুদিন পরেই রেফারি তন্ময় ধরের দেখানো মহমেডানের ফুটবলারের লাল কার্ডটি গ্রাহ‍্য হল না।

রেফারি তন্ময় ধর ও প্রাঞ্জল। ফাইল ছবি

জয়দীপ মুখার্জি : আপনি যে তথ‍্য দিলেন সেটা ঠিক নয়। আমরা এবার লিগের প্রথম মিটিংয়ে এই কার্ড ইস‍্যু নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। চিঠিটা পরে ইস‍্যু করা হয়েছে। এখন যদি ক্লাব কর্তারা সেই আলোচনার কথা অস্বীকার করে কিছু বলার নেই।

প্রশ্ন : তার মানে আলোচনা যখন হয়েছে তখন নিশ্চয় মিনিটসে আছে?

জয়দীপ মুখার্জি : থাকাটাই স্বাভাবিক।

প্রশ্ন : নিয়মে যখন আছে তখন তো মহমেডানের লাল কার্ড এমনিতেই উঠে যাবে। তাহলে হঠাৎ রেফারি তন্ময় ধরকে ডেকে এনে মিটিং করার দরকার ছিল?

জয়দীপ মুখার্জি : ওই যে বললাম, মহমেডান নিয়ম মেনে টাকা দিয়ে প্রোটেস্ট করেছে। আমাকে মিটিং ডাকতেই হত।

প্রশ্ন : গোটা ময়দানে প্রশ্ন উঠেছে। মহমেডান স্পোর্টিংকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন‍্যই নাকি গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যাচের তিন দিন আগে রেফারিদের চাপে রাখতে এমন পরিস্থিতি তৈরি করেছিল আইএফএ।

জয়দীপ মুখার্জি : মহমেডানকে যদি সুবিধা পাইয়ে দিতাম তাহলে সপ্তমীর দিন ম‍্যাচটা করতাম না। মহমেডান ম‍্যাচটা খেলতেই চায়নি। ফুটবলারদের বাড়ি ফেরার টিকিট করে ফেলেছিল। আর ইউনাইটেড ম‍্যাচটা খেলতে চেয়েছিল। আমরা কিন্তু মহমেডানকে রাজি করিয়েছিলাম। রেফারিকে চাপ দিয়ে মহমেডানকে সুবিধা পাইয়ে দিইনি। এটা নিনদুকদের অপপ্রচার। এরপরও যদি শুনতে হয়, আমি মহমেডানকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছি সেটা আমার দূর্ভাগ‍্য। কিছু বলার নেই।

রেফারি প্রতীক মন্ডল

প্রশ্ন : আর একটা অভিযোগ আছে। সেটা হল মহমেডান – ইউনাইটেড ম‍্যাচের সময় আপনি মাঠেই চেয়ার নিয়ে বসেছিলেন। অথচ দুই দলের সাপোর্ট স্টাফ, ফুটবলার ছাড়া মাঠে থাকার অধিকার নেই। সেদিন আপনার মাঠে থাকা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

জয়দীপ মুখার্জি : আমি সেদিন মাঠে ছিলাম। কিন্তু মূল মাঠের অনেক দুরে। আপনি খুব ভাল করে জানেন, পুলিশ না পেয়ে কি পরিস্থিতিতে ম‍্যাচ করেছি। পুলিশ থেকে আমাকে ও নীলিমেশদাকে বলা হয়েছিল যে, দর্শকশূন‍্য গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যাচে কিছু হলে তার জবাব দিতে হবে আমাদের দুই জনকে। নিরাপত্তা পরিস্থিতি নজরে রাখার জন‍্যই সেদিন আমাকে মাঠে থাকতে হয়েছে। নবাবদাও খুব সাহায‍্য করেছে।

প্রশ্ন : ভিএআর নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। মহমেডান – ভবানীপুর ম‍্যাচে ভিএআর প্রয়োগ করলেন। আবার মহমেডান – ইউনাইটেড ম‍্যাচে ভিএআর সাহায‍্য নেওয়া হল না।

জয়দীপ মুখার্জি : দেখুন আমাদের এখানে ভিএআর সিস্টেম চালু করার পরিকাঠামো নেই। আমি মাঠেই একটা মনিটর বসিয়ে রিভিউ করার ব‍্যবস্থা করেছিলাম। কোনও সিদ্ধান্ত নিতে রেফারি কনফিউজ থাকলে দু মিনিট খেলা বন্ধ রেখে টিভিতে দেখে নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু একটা ম‍্যাচের পর সিআরএ থেকে বলল, তাদের পক্ষে রিভিউ করা সম্ভব নয়। এখন ওদের সমস‍্যা থাকলে কি করতে পারি।

প্রশ্ন : ইউনাইটেড স্পোর্টসের বিরুদ্ধে রেফারি প্রতীক মন্ডলের বিতর্কিত পেনাল্টির সিদ্ধান্ত নিয়েও তো নানান প্রশ্ন উঠেছে। সোসাল মিডিয়ায় সমালোচনা হচ্ছে।

জয়দীপ মুখার্জি : আমি সব দেখেছি। আমি কি করতে আরি। নবাবদাও ফেসবুকে লিখেছে। কিন্তু আমাদের কাছে সরকারি ভাবে কেউ কোনও অভিযোগ করেনি। কাজেই এই ব‍্যাপারে কিছু বলার নেই।

প্রশ্ন : আপনি কি রেফারিদের সঙ্গে আলাদা করে আলোচনায় বসবেন?

জয়দীপ মুখার্জি : আমার আলোচনায় বসতে আপত্তি নেই। সন্দীপ, সমস‍্যাটা অনেক গভীরে। আপনাকে জানিয়ে রাখি, সিআরএ বলছে, প্রাঞ্জল, অসিত, সমর পাল সহ একাধিক রেফারি বাংলার হয়ে ম‍্যাচ খেলাতে চাইছে না। অথচ আমরা যখন প্রাঞ্জলকে বলি তখন কিন্তু ও তিনটে ম‍্যাচ খেলিয়েছে। আরও অবাক কাণ্ড, বহু রেফারি আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাদের ম‍্যাচ খেলার জন‍্য পোস্টিং দেওয়া হয় না। সিআরএ-র ভিতরে প্রচুর গন্ডগোল। আমি এর মধ‍্যে ঢুকতে চাই না।

প্রশ্ন : বাংলার ফুটবলে রেফারিও একটা গুরুত্বপূর্ণ। সমস‍্যা তো মেটাতেই হবে। কি ভাবছেন?

জয়দীপ মুখার্জি : আমাদের যে রেফারি কমিটি ছিল সেটা আমাদের দিক দিয়ে খুব একটা সক্রিয় নয়। আমরা চাইছি, সিআরএ ম‍্যাচ পোস্টিং করুক। কিন্তু একটা টেকনিক্যাল বোর্ড গঠন করব। যেখানে প্রদীপদা, সুপ্রিয়দার মতো প্রাক্তনরা থাকবেন। গভর্নিং বডিতে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমি আবার বলছি, রেফারিদের কখনই ছোট করছি না। আমরা সিআরএ-র পাশেই আছি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here