সন্দীপ দে
প্রশ্ন : ২৫ দিন ধরে করোনার সঙ্গে লড়াই করে চলেছেন। এখন কেমন আছেন?
দীপেন্দু বিশ্বাস : গত ২৪ এপ্রিল আমার কোভিড পজিটিভ হয়। তারপর থেকেই বসিরহাটের বাড়িতে নিজেকে গৃহবন্দী করে রেখেছি। এখন অনেকটাই সুস্থ। খুব শীঘ্রই স্বাভাবিক জীবনে ফিরব।
প্রশ্ন : জ্বর, গলা ব্যাথা হলেই প্যানিক তৈরি হচ্ছে। আপনি তো করোনা জয়ী। আম জনতার কাছে আপনার কি বার্তা থাকবে?
দীপেন্দু বিশ্বাস : ঠিকই বলেছেন, করোনার যে দাপট তাতে আজ সবাই চিন্তায় আছে। তবু আমি বলব, অযথা ভয় পাবেন না। কোভিডের উপসর্গ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। নিয়মিত ঔষুধ খান। পরিবারের সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন। আমার দশটা দিন খুব কষ্ট হয়েছিল। গভীর রাত পযর্ন্ত মাথা ব্যাথা করত। ঘুমোতে যেতাম ভোরে। আমি সব সময় কর্পূর সঙ্গে রাখতাম। অক্সিজেনের কাজ করে। নিয়ম মেনে চলতে হবে। আর মনের জোর রাখতে হবে। আমার করোনা হয়েছে বলে শুধু চিন্তা করলে হবে না। চ্যাট করুন, গান শুনুন। মনটাকে হালক্কা রাখতে হবে।

প্রশ্ন : বুঝলাম। এবার অন্য প্রসঙ্গে আসছি। ফুটবলার থেকে বিধায়ক হলেন। বিধায়ক থেকে শূন্যে পৌঁছে গেলেন। খারাপ লাগছে না?
দীপেন্দু বিশ্বাস : দেখুন, ভাল লাগা, খারাপ লাগা আপেক্ষিক ব্যাপার। আমরা ফুটবল খেলে প্রতিষ্ঠা পেয়েছি। সব ম্যাচেই কি গোল করতে পেরেছি? কত ম্যাচে খারাপ খেলেছি। ক্লাব সদস্য-সমর্থকদের গালাগাল খেতে হয়েছে। খারাপ সময় সব পেশাতে আসে।
প্রশ্ন : গত বছর লকডাউনের সময় আমি আপনাকে বলেছিলাম, ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে আপনার টিকিট কনফার্ম নয়। আপনি সেদিন ভেরি মাচ কনফিডেন্ট ছিলেন। কিন্তু শেষ পযর্ন্ত টিকিট পেলেন না। কেন এমন হল?

দীপেন্দু বিশ্বাস : হ্যাঁ, সেদিন আপনি বলেছিলেন। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছুই পাল্টে যায়। তাছাড়া, যেখানে আমার নিয়ন্ত্রণ নেই সেটা নিয়ে ভাবি না। অতীতেও কোনও দিন ভাবিনি।
প্রশ্ন : নয়ের দশকের শেষ দিকে যুবভারতীতে এফসি কোচির বিরুদ্ধে মাথায় সাতটা সেলাই নিয়ে দুটি গোল করে সেদিন ইস্টবেঙ্গলকে জিতিয়েছিলেন। আপনার হার্টের সমস্যা থাকায় ডাক্তার প্রায় বলেই দিয়েছিলেন, ফুটবল খেলাটা আপনার পক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু মনের জোরে খেলা চালিয়ে গিয়েছেন সাফল্যের সঙ্গে। গ্রেট ফাইটার। আপনি পালিয়ে আসতে সেখেননি। কিন্তু কি এমন হল যে তৃণমূল থেকে পালিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন। শুধু কি নির্বাচনের টিকিট পাওয়ার জন্যই?

দীপেন্দু বিশ্বাস : কি বলি বলুন তো! সাময়িক একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। একটা অভিমানও কাজ করেছিল। আর আপনি বিজেপি মহলে খোঁজ নিয়ে দেখুন, আমি কাউকে প্রার্থীপদের টিকিটের জন্য বলিনি।
প্রশ্ন : গতকাল (সোমবার) বিজেপি পার্টি থেকে ইস্তফা দিলেন। এই প্যানডামিক পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের অন্যায় ভাবে তৃণমূল নেতাদের গ্রেফতারের ঘটনায় কাগজে বিবৃতিও দিয়েছেন। এটা কি অদুরভবিষ্যতে তৃণমূলে ফেরার রাস্তা খোলা রাখার চেষ্টা?
দীপেন্দু বিশ্বাস : আমি কিন্তু সেই উদ্দেশ্যে বলিনি। বাংলার মানুষ হিসেবে আমার মনে হয়েছে, যেটা ঘটল, তা ঠিক হয়নি।

প্রশ্ন : আপনি তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর বসিরহাটে বিধায়ক হয়েছেন। পরে পুরসভা, পঞ্চায়েত এবং লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের জয়ের ক্ষেত্রে আপনার ভূমিকা ছিল। তা সত্বেও টিকিট পেলেন না বসিরহাটে আপনার কিছু বিরোধীদের জন্য। এটা কি ঠিক?
দীপেন্দু বিশ্বাস : দিদির জন্য আজ বসিরহাটে অনেক উন্নয়ন হয়েছে। পলিটেকনিক কলেজ, সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, রাস্তা। একদিন এসে দেখে যান। আর বিরোধীদের কথা বলছেন? হতে পারে। পুরনোদের সঙ্গে নতুনদের অ্যাডজাস্টটা হয়তো হয়নি। একটা দুরত্ব তৈরি হয়েছিল। সেটা আমাদের সবার ভুল হতে পারে।
প্রশ্ন : কয়েকজন প্রাক্তন ফুটবলার আছেন, যাদের আর নাম বলতে চাইছি না। তাঁদের অভিযোগ,”বিধায়ক হওয়ার পর দীপু বদলে গেছে।” সত্যিই বদলে গিয়েছিলেন?
দীপেন্দু বিশ্বাস : যে বা যারা এই অভিযোগ করেছেন তারা আমাকে হিংসে করেন। কারণ, ঈশ্বরের কৃপায় বসিরহাটে আমি এখনও জনপ্রিয়। পরে বিধায়ক হয়েছি। ইর্ষা থেকে এই অভিযোগ করেছেন। আমি সেই আগের দীপেন্দুই আছি। কখনও নিজেকে বদলাতে পারব না।
প্রশ্ন : মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাবে ওয়াসিম আক্রমের আসার ক্ষেত্রে আপনার নাকি একটা ভূমিকা ছিল। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই আপনার সঙ্গে ওয়াসিম আক্রমের নাকি ঝগড়া হয়েছিল?
দীপেন্দু বিশ্বাস : ঝগড়া হয়নি। আপনি তো আমাকে বহু বছর ধরে দেখছেন, আজ পযর্ন্ত কারও সঙ্গে আমি ঝগড়া করেছি? কারও সম্পর্কে খারাপ কথা বলেছি? আমি আক্রমের থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন : কিন্তু কেন সরিয়ে নিয়েছিলেন?
দীপেন্দু বিশ্বাস : নতুন দল গড়ার সময় ও আমার সঙ্গে কোনও কথায় বলেনি। নিজের ইচ্ছে মতো দল করেছিল। যেখানে আমার গুরুত্ব নেই তাই ওর কাছ থেকে সরে এসেছিলাম।

প্রশ্ন : কয়েকমাস আগে মহমেডান কর্তারা সাংবাদিক সম্মেলন করে তৎকালীন ক্লাব সচিব ওয়াসিম আক্রমের বিরুদ্ধে আর্থিক তছরুপের অভিযোগ করেছিলেন। কয়েক লক্ষ টাকার হিসেব দিতে পারননি আক্রম। সেই যে মাঠ ছেড়েছেন তারপর আর মহমেডান ক্লাবে এসে হিসেব দিতে পারেননি আক্রম। আপনি এই বিষয়ে জানতেন বলেই কি আক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছিলেন?
দীপেন্দু বিশ্বাস : সরি সন্দীপদা, এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাই না।
প্রশ্ন : এই মুহূর্তে আপনার লক্ষ্য কি?
দীপেন্দু বিশ্বাস : অবশ্যই মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আমি মহমেডানের ফুটবল সচিব। আইএফএ যদি কলকাতা লিগ করতে পারে তাহলে আগে আমাদের দলটা ভাল করে তৈরি করতে হবে। পরের লক্ষ্য আইলিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়া।
প্রশ্ন : শেষ প্রশ্ন, গত পাঁচ বছর বিধায়ক পদে থেকে কোন ভুলটা করেছেন, যা আপনাকে এখনও কষ্ট দেয়। আর এই ভুল থেকে কি শিক্ষা নেবেন?
দীপেন্দু বিশ্বাস : এলাকার তৃণমূলের পুরনো ও নতুনদের মধ্যে দুরত্ব থেকে যাওয়াটা হয়তো ভুল। ভুল তো সবারই হতে পারে। যারা কাজ করে তারাই ভুল করে। এমন অনেক ছোট খাটো ভুল ত্রুটি সবার আছে যা শুধরে নিতে হবে।