সন্দীপ দে
CAB সভাপতির চেয়ারে বসার পরবর্তী সময়ে সৌরভ গাঙ্গুলি কঠিন চ্যালেঞ্জর সামনে পড়তে পারেন। এমন আশঙ্কা করছেন একাধিক ক্রীড়া কর্তা। তার বড় কারণ ন্যাশনাল স্পোর্টস বিল। এই স্পোর্টস বিলে যেমন ভাল দিক রয়েছে, ঠিক তেমনি খারাপ দিকও আছে। সব থেকে খারাপ দিক হল, রাজ্য ক্রিকেট সংস্থা বা বোর্ডে রাজনৈতিক নেতারা উন্মুক্ত। তারাও আসতে পারেন। স্পোর্টস বিল লাগু হলে ভারতের অতি জনপ্রিয় ক্রিকেট খেলার প্রশাসনে আসতে পারেন রাজনৈতিক নেতারাও। কোনও বাঁধা নেই। আর এটা হলে আগামী দিনে CAB তে ভয়ঙ্কর দিন আসার সম্ভাবনা আছে। শুধু CAB কেন? তখন জেলার কর্তাদেরও গুরুত্ব কমে যেতে পারে। এমন আশঙ্কা করা শুরু করে দিয়েছেন একাধিক জেলা ও কলকাতার কর্তারাও।

স্পোর্টস বিল তো পাশ হয়ে গিয়েছে এক মাস আগেই। তাহলে এখন হটাৎ কেন এমন আশঙ্কা করা হচ্ছে? তারও কারণ আছে। ২২ সেপ্টেম্বর CAB’র ৯৪তম সাধারণ বার্ষিক সভা। এই সভায় CAB অনুমোদিত সকল সংস্থা, ক্লাবের কারা উপস্থিত থাকবেন তার একটা তিন পাতার OFFICE OFF THE ELECTORAL OFFICIAL এ ১৪৬ প্রতিনিধির ড্রাফট লিস্ট প্রকাশ করা হয়েছে গত রবিবার অর্থাৎ ১৪ সেপ্টেম্বর। সেই ড্রাফট লিস্টে electoral officer এর সইও আছে। এই ড্রাফট লিস্টে এমন কিছু রাজনৈতিক নেতার নাম আছে, যা দেখার পর বহু ক্রীড়া কর্তা ‘অনিশ্চয়তার আশঙ্কা’য় ভুগতে শুরু করেছেন।

কোন কোন নেতা আছেন সেই লিস্টে? উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ক্রীড়া সংস্থা থেকে পার্থ ভৌমিক। হুগলি জেলা থেকে বিধায়ক অসিত মজুমদার, মালদহ থেকে তৃণমূলের দাপুটে নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী, হাওড়া থেকে শ্যামল মিত্র। মনোহরপুকুর ক্লাব থেকে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার, সালকিয়া ফ্রেন্ডস এসোসিয়েশন থেকে সুব্রত বক্সী, বালক সংঘ থেকে কাউন্সিলর অসীম কুমার বসু। বালিগঞ্জ ইউনাইটেড ক্লাব থেকে কাউন্সিলর সৌরভ বসু। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই electoral draft লিস্ট পরীক্ষা করে ফাইনাল লিস্ট প্রকাশ করবেন electoral officer, তখন কিছু নাম বাদ যেতে পারে। অথবা এই লিস্টটাই অপরিবর্তিত থাকতে পারে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় CAB এর নিচের তলায় সোফায় বসে, (বিশ্বরূপ দে’র জন্মদিনের কেক কাটার পর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্তা ‘inside sports’ এর এই প্রতিবেদককে বলছিলেন, “২২ সেপ্টেম্বর বার্ষিক সভায় ইলেকশন হবে না। কমিটি তো হয়েই গেছে। সেক্ষেত্রে সভায় কয়েকজন নেতা নাও যেতে পারেন। নেতারা যান, বা না যান, এই নেতাদের নাম তো লিস্টে এসেছে। এখনই যদি এমন হয়, তাহলে স্পোর্টস বিল লাগু হলে কি হবে?” আসলে এই ট্রেন্ডটা প্রকৃত ক্রীড়া প্রশাসকের কাছে দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভবিষ্যতে কি আকার ধারণ করবে তারই একটা ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করলেন CAB লিগের দ্বিতীয় ডিভিশনের এই কর্তা।
কয়েকটি জেলার কর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। তাদের দুটি বক্তব্য, “আমাদের নাম লিখো না ভাই। এটুকু বুঝতে পারছি, হয়তো কর্তার ইচ্ছেই কর্ম করে যেতে হবে। আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছি না। তবে সৌরভ গাঙ্গুলি আছেন। দক্ষ প্রশাসক। আশাকরি ঠান্ডা মাথায় সব সামলে নেবেন। সৌরভই আমাদের ভরসা।”

আশার আলো একটাই, কোনও নেতাই CAB তে এসেই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসতে পারবেন না। স্পোর্টস বিল অনুযায়ী কোনও পদের জন্য নির্বাচনে লড়াই করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির চার বছর এক্সিকিউটিভ কমিটিতে থাকার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাহলে সমস্যা কোথায়? এমন প্রশ্ন করেছিলাম তালতলা ক্যান্টিনে বসে থাকা কলকাতার এক ক্লাব কর্তাকে। তিনি বলেন, “CAB তে প্রভাব বিস্তার করতে রাজনৈতিক নেতাদের পদের দরকার আছে? নেতাদের সামনে CAB ‘র লকগেট খুলছে। এটাই সর্বনাশের যথেষ্ট নয় কি? মোহনবাগান ক্লাবটাকে দেখছো তো।”
ক্রীড়াঙ্গনে রাজনৈতিক নেতাদের আসাটা এই প্রথম নয়। অতীতে সুব্রত মুখার্জি, মানস মুখার্জি, যতীন চক্রবর্তী, সোমনাথ চ্যাটার্জিরা এসেছেন। টেবল টেনিস সংস্থায় কিছু সমস্যা নাকি সোমনাথবাবু জিইয়ে রেখেছিলেন – এমন অভিযোগ শোনা যায়। তবে যতীনবাবু,সোমনাথবাবু,সুব্রত বাবুরা আজকালকার নেতাদের থেকে আলাদা ছিলেন। এমনটা জানাচ্ছেন ময়দানের প্রবীণ কর্তারা।