সন্দীপ দে
পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া জগতের সব থেকে ধনী সংস্থা হল CAB (cricket association অফ Bengal )। সেই সংস্থার গুরুত্বপূর্ণ পদে বসে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে সরগরম গোটা ময়দান। স্বাভাবিক ভাবেই কলঙ্কের দাগ লাগছে CAB -র গায়ে। আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ যে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে উঠেছে, তাঁরা আবার বসে আছেন CAB-র দুই গুরুত্বপূর্ণ পদে। একজন প্রবীর চক্রবর্তী, কোষাধ্যক্ষ। ওপরজন হলেন দেবব্রত দাস, যুগ্ম সচিব। CAB-র পদে বসে এঁরা নাকি লক্ষ লক্ষ টাকার বেনিয়ম করেছে। পরিস্থিতি এমন তৈরি হয়েছে যে আদালত পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এই দুই কর্তার বিরুদ্ধে ঠিক ঠিক কি কি অভিযোগ?

প্রবীর চক্রবর্তী, ইনি শতাব্দী প্রাচীন উয়াড়ী ক্লাবের সর্বময় কর্তা। উয়াড়ী ক্লাবের ৬ সদস্য প্রবীবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। তাঁরা লিখিত অভিযোগ করেছেন লেক থানা, CAB এবং আলিপুর আদালতে।
প্রবীর বাবুর বিরুদ্ধে প্রথম অভিযোগ হল, তিনি উয়াড়ীর সচিব এবং CAB এর কোষাধ্যক্ষ। এক ব্যক্তি দুই পদে থাকতে পারেন না। যা CAB এর গঠণতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন।
দ্বিতীয় অভিযোগ, CAB থেকে পাওয়া অনুদানের টাকা প্রবীরবাবু ব্যক্তিগত কাজে খরচ করেছেন। ২০১৬ সালের পর থেকে নাকি উয়াড়ী ক্লাবে AGM হয় না। CAB এর অনুদানের টাকা পাওয়ার পর নিয়ম মেনে CAB তে খরচ দেখানো হয় না। তার পরেও কি করে উয়াড়ী কে অনুদানের টাকা দেওয়া হয়েছে? যেহেতু প্রবীরবাবু CAB এর কোষাধ্যক্ষ। আর্থিক লেনদেনে তাকেই সই করতে হয়। ওই পদে বসে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। উয়াড়ীর ৬ সদস্যর দাবি, প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার বেনিয়ম করেছেন প্রবীবাবু। এই ইস্যুতে আলিপুর আদালতে কেস ফাইল হয়েছে। CAB এর এথিক্স কমিটি খতিয়ে দেখছে। এবং প্রবীর বাবুর ঘটনায় CAB এর অম্বুডসম্যান ১৯ জুলাই শুনানির দিন ধার্য করেছে।

CAB কোষাধ্যক্ষর আর্থিক বেনিয়মের ঘটনা সামনে আসার পর এবার যুগ্মসচিব দেবব্রত দাসের আর্থিক কেলেঙ্কারি সামনে এসে গিয়েছে। গড়ের মাঠে এই দেবব্রত দাসের গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ। গত এপ্রিল মাসে দেবব্রত দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে “আদিত্য গ্ৰুপ অফ স্পোর্টস।” CAB এর ক্লাব ক্রিকেটে খেলার সুযোগ করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আদিত্য গ্রূপের কাছ থেকে ৪ লক্ষ টাকা দেবব্রত নিয়েছেন। কিন্তু পরে কিছুই করেননি। পুরো বিষয় জানিয়ে CAB সভাপতি স্নেহাশিস গাঙ্গুলিকে চিঠি দিয়ে অভিযোগ করেছে আদিত্য গ্রুপ (আদিত্য স্কুল অব স্পোর্টস ম্যানেজমেন্টের তরফে চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন সচিন ধন্দগে (Sachin Dhondge))।

দেবব্রতবাবুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোটা এসেছে টাউন ক্লাবের সভাপতি বিকাশ ঘোষের কাছ থেকে। তিনি সরাসরি CAB এর অম্বুডসম্যানকে অভিযোগ করেছেন। প্রসঙ্গত এই দেবব্রত দাস আবার টাউন ক্লাবের সচিব। সেই ক্লাবের সভাপতির অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে টাউন সচিব দেবব্রত তরুণ ক্রিকেটারদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। বাংলা দলে সুযোগ পাইয়ে দেবে বলে বেশ কিছু ক্রিকেটারের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা নিয়েছেন। বাংলা দল নির্বাচনে তার নাকি বড় ভূমিকা থাকে। নির্বাচকদের প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখেন। অভিযোগ, তরুণ ক্রিকেটারদের এই সব বলে বাংলা দলে সুযোগ দেওয়ার নাম করে টাকা নিতেন। CAB লিগ খেলা কোনও ক্লাবে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য বেশ কিছু ক্রিকেটারদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন। টাকা নিয়ে ক্লাবে সই করাননি। এই তথ্য জানিয়ে টাউন ক্লাবে অভিযোগ করেছে সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটাররা।
আবার, CAB প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ করে দেওয়ার মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কয়েক জনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ। শুধু তাই নয়, টাউন ক্লাবের ক্রিকেটারদের খাবারের বিল নাকি CAB এর ক্যান্টিনের বিলের সঙ্গে যোগ করতেন দেবব্রতবাবু।
CAB এর যুগ্ম সচিবের চেয়ারে বসে এমন গর্হিত কাজ করে গিয়েছেন। গত বছর লিগে মহামেডান-টাউন ম্যাচে গড়াপেটা হয়েছিল বলে অভিযোগ জমা পড়েছিল। ওই গড়াপেটা ম্যাচে নাকি সরাসরি যুক্ত ছিল এই দেবব্রত দাস। CAB তদন্ত কমিটি করেছিল। কিন্তু পরে ধামা চাপা দেওয়া হয়।

দুই কর্তার অভিযোগের সব নথি জমা করা হয়েছে। CAB তে কতটা শুধধিকরণ হবে? প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। পুরো বিষয়টা এখন অম্বুডসম্যানের কোর্টে।