৭৫ বছরে লোগো প্রকাশ, প্রশান্তর নামে টুর্নামেন্ট করছে সাদার্ন সমিতি

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : ছোট্ট ছোট্ট পায়ে, চলতে চলতে, চাঁদের পাহাড়ে পৌঁছনোর লক্ষ‍্যে সাদার্ন সমিতি। ময়দানের ফুটবল জগৎ এই সাদার্নকে চেনে,জানে ফুটবল ক্লাব হিসেবেই। হয়তো ছোট ক্লাব, অখ‍্যাত। হয়তো এই ক্লাবের প্রবীণ ও প্রয়াত কর্তারা একটু সজাগ থাকলে সাদার্নের ইতিহাসটা যত্নে লিখে যেতে পারতেন নতুন প্রজন্মের জন‍্য। সেই ভাবে ক্লাবের ইতিহাসটাই আজ আর লেখা নেই।

যতটুকু জানা গেল, এই সাদার্নের প্রতিষ্ঠাকালে (১৯৪৫ সাল) বর্ধমানের মহারাজা উদয়চাদের বড় ভূমিকা ছিল। ৯০ স্কোয়ার ফুটের একটা ছোট্ট ঘর। মেঝেতে পাতা থাকতো একটা মাদুর। তখন এই ক্লাব গড়ে উঠেছিল মূলত কালীপুজোকে কেন্দ্র করে। আর খেলা বলতে বডি বিল্ডিং। সঙ্গে সামাজিক সংগঠনের কাজও চলত। ব‍্যাস ওইটুকুই। তবে হ‍্যাঁ, কালীপুজোটা বেশ জাঁকজমক ভাবেই করত সাদার্ন সমিতি। পরবর্তীকালে দক্ষিণ কলকাতার প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতা রঙ্কু ঘোষ সাদার্নকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন।

১৯৪৫ সালে সাদার্নের প্রতিষ্ঠা হলেও আইএফএতে নথিভুক্ত হয়েছে ১৯৫৯ সালে। সেই বছরই বেঙ্গল সকার লিগে অংশ নিয়ে চ‍্যাম্পিয়ন হয় সাদার্ন। পরে তারা শুরু করে ভলিবল। ফুটবল,ভলিবল থাকলেও ক্লাবের কালীপুজোকে কেন্দ্র করে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত বেশ বড় করেই। অভিনেত্রী রাখি গুলজারের প্রথম স্বামী অজয় বিশ্বাস মুম্বই থেকে নিয়ে আসতেন নামি দামি শিল্পী। মহেন্দ্র কাপুর থেকে ভূপেন হাজারিকা – কে নেই! পরে আস্তে আস্তে সাদার্নের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জৌলুস কমলেও ফুটবল এগোনোর চেষ্টা শুরু হল।


মন্টু ঘোষের হাত ধরে টালিগঞ্জ অগ্রগামী করা শুরু সৌরভ পালের। তারও পরে মন্টু ঘোষের পরামর্শে সাদার্নে আসেন সৌরভ। এই সাদার্ন সমিতির ফুটবলে অগ্রগতির ক্ষেত্রে ব‍্যবসায়ী মন্টু সাহার অবদান গোটা ময়দান জানে। শুধু সাদার্ন নয়, একটা সময় মন্টু ঘোষের পারিবারিক ক্লাব টালিগঞ্জ অগ্রগামীর পাশে থেকেছেন মন্টু সাহা।

সাদার্ন সমিতির ফুটবল গ্রাফটা উঠতে থাকে ২০০৭ সাল থেকে। তখন সৌরভ পাল জমানা শুরু হয়ে গিয়েছে। ২০০৭-‘০৮ মরসুমে দ্বিতীয় ডিভিশন চ‍্যাম্পিয়ন। ২০০৮-‘০৯ মরসুমে প্রথম ডিভিশন চ‍্যাম্পিয়ন। ২০০৯-‘১০ মরসুমে প্রথম ডিভিশনের এ গ্রুপ চ‍্যাম্পিয়ন। ২০১০ উঠল কলকাতা লিগের প্রিমিয়ারে। এ যেন স্বপ্নের উত্থান। মার্কাস, এডমিলসন, অনীত ঘোষদের নিয়ে আড়াই কোটি টাকার টিম করলেন সাদার্নের কর্তা সৌরভ। সেই বছরে বাংলা দৈনিকে লেখা শুরু হল, ময়দানে চতুর্থ প্রধান হওয়ার লক্ষ‍্যে এগিয়ে আসছে সাদার্ন সমিতি। কিন্তু এই উঠে আসার ধারাবাহিকতা বেশিদিন ধরে রাখতে পারেননি। সাপ-লুডোর মতো ওঠা নামা করেছে। চার বছর আগে এক তৃণমূল নেতার কারণে প্রিমিয়ারের টিম করতে পারছিলেন না সাদার্ন কর্তারা। সেই বছর দল গড়তে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছিলেন সৌরভ পাল। পরে ক্রীড়া মন্ত্রীর মধ‍্যস্থতায় দল গড়া হয়। সাদার্ন সমিতির সেই বিতর্ক তখন কাগজের শিরোনামে উঠে এসেছিল। সেই সব ঝক্কি ঝামেলা সামলে নিলেও চাপ সৌরভের থাকছেই। তাঁর ময়দানের অভিভাবক হলেন অজিত ব‍্যানার্জি। আর আইএফএ সচিব হল তার ভ্রাতৃসম। দুজনের সঙ্গে “ঘর” করে এগিয়ে যেতে পারবেন তো সৌরভ? তবুও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ফুটবলকে সামনে রেখে সাদার্ন সমিতির বাহিনী মনের অজান্তেই হয়তো বলে উঠছে -“মাম্মি, আমি বাড়ছি দেখো”।

এই ক্লাব আজ পায়ে পায়ে পৌঁছে গেল ৭৫ বছরে। এমন একটা দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে শনিবার বিকেলে রবীন্দ্র সরোবর স্টেডিয়ামে মিলিত হয়েছিল সাদার্ন পরিবার। প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য,অমিত ভদ্র, প্রদীপ কুমার (আইআরএস,প্রিন্সিপাল কমিশনার, কাস্টমস), আইএফএ সচিবের উপস্থিতিতে সাদার্ন সমিতির লোগো প্রকাশ করা হল। শুধু তাই নয়, ক্লাবের এই ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে শুরু করছে তিন দিনের সদ‍্য প্রয়াত প্রশান্ত ডোরা স্মৃতি ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফাইনাল ১৪ মার্চ।
আস্তে আস্তে সাদার্নকে ভালবেসে এগিয়ে আসছেন অনেকেই। সুব্রত ভট্টাচার্য, অমিত ভদ্ররা পাশে থাকছেন। আর ক্লাবটাকে সুষ্ঠুভাবে চালাতে সাদার্ন সমিতির সচিব সৌরভ পাল দায়িত্ব ভাগ করে দিয়েছেন কুশল ব‍্যানার্জি (ফুটবল সচিব) ও জিনিয়া রায় চৌধুরী (চেয়ার পার্সন)কে। এদের সঙ্গে আছেন সভাপতি আসরাফ আলি সেখ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here