◆সন্দীপ দে◆
প্রয়াত অমল দত্ত শেষ কোচিং করিয়েছেন চিরাগ ইউনাইটেডর হয়ে। ২০০৬-০৭ মরসুমে। তখন অমল দত্তর বয়স ছিল ৭৭ বছর। অশক্ত শরীরে ট্রাক শ্যুট পড়ে, গায়ে টি শার্ট, মাথায় টুপি আর গলায় ঝোলানো হুইসল। মাঠে নেমে তখনকার চিরাগ ইউনাইটেডের ফুটবলারদের ফুটবল তালিম দিতেন ৭৭ বছরের অমল দত্ত। আর আজ,মঙ্গলবার হাওড়া ময়দান স্টেডিয়ামে কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্সের নবনিযুক্ত কোচ ৭৭ বছরের জহর দাস। তবে অমল দত্তর মতো তাঁর অশক্ত শরীর নয়। হ্যাট পরে কোচিং করিয়ে যাচ্ছেন জহর। তাঁকে দেখলে মনেই হবে না যে তাঁর ৭৭ বছর বয়স।
ছোটদের আদর্শ কোচ অমল দত্তর পর যদি কোন কোচ এই বাংলায় থাকে তাহলে জহর দাসের নামটাই প্রথমে আসে। যদিও ছোটদের নিয়ে খুব ভাল কাজ করছিলেন কোচ সুজিত চক্রবর্তী। তাঁর অকাল প্রয়াণে ক্ষতি হয়েছে বাংলার ফুটবলে।

অমল দত্তর সঙ্গে জহরের আরও মিল আছে। অখ্যাতদের নিয়ে চ্যালেঞ্জ নিতে ভালবাসেন জহর। উচ্চ শিক্ষিত কোচ হওয়ার পরও তিন প্রধানের কাছ থেকে পেয়েছেন শুধুই অবজ্ঞা। যখন কোনও ক্লাবের প্রয়োজন হয়েছে তখনই জহরকে কোচ করা হয়েছে। প্রয়োজন ফুরোলেই কোচের চাকরি গেছে। অভিমান থাকলেও পরে সেই সব ক্লাবের প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন। চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাজিমাত করেছেন জহর। যেমন আইজল এফসিকে তৈরি করেছিলেন। পরে চাকরিও যায় তাঁর। কিন্তু জহরের তৈরি দল নিয়ে আইজল এফসিকে আই লিগ চ্যাম্পিয়ন করে নাম কিনেছিলেন খালিদ জামিল। ২০১৮ সালে পিয়ারলেসের দায়িত্ব নিয়ে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন জহর। তারপরও গড়ের মাঠে প্রথম শ্রেণীর ক্লাবে কোচিং করার সুযোগ আসেনি। কিন্তু বসে থাকেননি তিনি। কখনও শ্যামনগরে বা কখনও নারায়ণপুরে ছোটদের নিয়ে কাজ করে গিয়েছেন। সেই দিক দিয়ে দেখতে গেলে পিয়ারলেসকে চ্যাম্পিয়ন করার ৫ বছর পর ফের প্রিমিয়ার ডিভিশনের কোচের ভূমিকায় দেখা যাবে জহর দাসকে।

এই বছর কালীঘাট স্পোর্টস লাভার্সের শীর্ষ কর্তা বাবুন ওরফে স্বপন ব্যানার্জি নিজেদের কোচ করতে চেয়েছিলেন বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বা সঞ্জয় সেনকে। বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য কাস্টমসের কোচ। তাঁকে পাওয়া যাবে না। আর সঞ্জয় সেন আগ্রহী আইএসএলে। অগত্যা স্বপন ছুটলেন জহর দাসের কাছে। কালীঘাট লাভার্সের প্রস্তাব গ্রহণ করে চ্যালেঞ্জের সামনে। তাঁর সামনে আর একটা পরীক্ষা।

স্বপন ব্যানার্জি বলেন, “জহরদা সিনিয়র কোচ। সঙ্গে পরামর্শ দাতা হিসেবে রঘুনন্দীও দলের সঙ্গে আছেন। দল গঠনে জহরদাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। দলের সুপ্রিম বস জহরদাই।” গত দুই মাস ধরে কালীঘাট লাভার্সের সঙ্গে যুক্ত জহর। দিল্লি লিগ দেখে বেশ কিছু ফুটবলার নিয়ে এসেছেন তিনি। কোচ জহরের কথায়,”গত বছরের মাত্র দুই জন ফুটবলার দলে আছে। এবার পুরোটাই নতুন টিম। প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য পুরো সময় পাওয়া যায়নি। তাই লিগের শুরুতে আমাদের একটু হোঁচট খেতে হতে পারে। তবে পরে দল দাঁড়িয়ে যাবে।”

প্রশ্নঃ এই ৭৭ বছর বয়সেও মাঠে নেমে কোচিং করাচ্ছেন। কি ভাবে সম্ভব?
জহর দাসঃ “ফুটবলের উপর ভালবাসা। অবশ্য আপনি বলতেই পারেন টাকা পাচ্ছি তাই কোচিং করাচ্ছি। সেটাও ঠিক। তবে ফুটবলের প্রতি আবেগ না থাকলে এই বয়সে কোচিং করানো সম্ভব নয়।”
প্রশ্নঃ অমল দত্ত, পিকে ব্যানার্জির পর সুব্রত ভট্টাচার্য, সুভাষ ভৌমিক কোচিংয়ে সাফল্য পেয়েছেন। আপনি একটু অন্য ঘরানার কোচ। কিন্তু সামগ্রিক ভাবে বাঙালি কোচের সাফল্য কোথায়? একাধিক বাঙালি কোচ উঠে এলেও প্রতিষ্ঠিত হতে পারছেন না। এর মূল কারণ কি?
জহর দাসঃ “কোচ তো উঠছে। কিন্তু কোচিং করাতে হলে যে পড়াশোনার প্রয়োজন সেটা করছে না। এটা একটা সমস্যা। ট্রফি জেতাটাই লক্ষ্য করে এগোয়। ফাঁকতালে বাজিমাত করা যায় না।”

প্রশ্নঃ ময়দানে এখন দেখা যাচ্ছে, কয়েকজন কোচ আছেন যারা একাধিক ক্লাবের দল গড়ছেন। কোনও ক্লাবে কোচ, কোনও ক্লাবে টিডি আবার কোনও ক্লাবে পরামর্শদাতা – ভিন্ন ক্লাবে, ভিন্ন রুপে একই ব্যক্তি। এই বিষয়টা কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
জহর দাসঃ “আপনি যে সব কোচের কথা বললেন তারা ফুটবলের কোনও কোচই নয়। সব জায়গায় চেখে চেখে বেড়ায়।”
প্রশ্নঃ কালীঘাট লাভার্সকে নিয়ে আপনার লক্ষ্য?
জহর দাসঃ “দলটাকে একটা ভাল জায়গায় নিয়ে যাওয়া। তবে হ্যাঁ, একটা চ্যালেঞ্জ তো আছেই।”