হাসপাতালে ভর্তি তুলসীদাস বলরাম

0

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২৩ মার্চ : হাসপাতালে ভর্তি ভারতের প্রাক্তন সেন্টার ফরোয়ার্ড তুলসী দাস বলরাম গত ১৯ মার্চ বাড়িতে পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। কালবিলম্ব না করে পাড়ার লোকেরা সঙ্গে সঙ্গে অ‍্যাপেলো নার্সিং হোমে বলরামকে ভর্তি করায়। নার্সিংহোম সূত্র জানিয়েছে, বলরামের এখন বয়স ৮৫ বছর। মাথায় রক্ত জমাট বাঁধে। দেরি না করে মাথায় অস্ত্রোপচার করা হয়। এছাড়াও বার্ধক‍্যজনিত নানান রোগও আছে। চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। আপাতত স্থিতিশীল। এই কিংবদন্তি ফুটবলারকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। জানা গেল,বলরামের চিকিৎসার যাবতীয় খরচের দায়িত্ব নিচ্ছে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব।

বহুবছর আগেই তিনি ভবানীপুর ছেড়ে উত্তরপাড়ায় একটি দুই কামরার ফ্ল‍্যাট কিনে থাকেন। গঙ্গার ধারের এই ফ্ল‍্যাট। অভিমানেই তিনি ময়দান ছেড়ে দিয়েছেন। তাঁর প্রিয় ক্লাব ইস্টবেঙ্গলেও যান না। গত বছর ইস্টবেঙ্গলের শতবর্ষ অনুষ্ঠানে বিশেষ সম্মান দিতে চেয়েছিল ক্লাব কর্তারা। তিনি তা গ্রহণ করেননি। এক প্রাক্তন ফুটবলারকে পাঠিয়েও বলরামকে রাজি করানো যায়নি। কি কারণে ময়দান, ইস্টবেঙ্গল ক্লাব মুখো হন না তা কখনও প্রকাশ করেননি তিনি।

উত্তরপাড়ার ফ্ল‍্যাটে একাই থাকেন বলেই ঘরের দেওয়ালে লিখে রেখেছেন, তাঁর মৃত‍্যুর পর মরদেহ যেন পোড়ানো না হয়। দেহ দান করতে চান। তুলসীদাস বলরাম হায়দ্রাবাদের মানুষ। ফুটবল খেলতে এসে কলকাতা ও ইস্টবেঙ্গলকে ভালবেসে ফেলে। আর হায়দরাবাদে না গিয়ে এই বাংলায় থেকে গিয়েছেন।

১৯৫৬ থেকে ১৯৬৩ -এই সাত বছর ছিল ভারতীয় ফুটবলের স্বর্ণযুগ। তার মূল কারণ ছিল চুনী-পিকে-বলরাম ত্রয়ী। তিনজনেই স্ট্রাইকার। পিকে খেলতেন রেলের হয়ে। চুনী মোহনবাগানে আর বলরাম ইস্টবেঙ্গলে। মাঠের বাইরে এই ত্রয়ী ছিল খুব ভাল বন্ধু। দেশের হয়ে এক সঙ্গে চুটিয়ে খেলেছেন।

‘অর্জুন’ পুরস্কার পেয়েছেন। সে বহু বছর আগে। শৈলেন মান্নার বউভাতের দিন নিজের ‘অর্জুন’ পাওয়ার খবরটা আগাম দিয়েছিলেন তৎকালীন আইএফএ সচিব বেচু দত্ত। তার পরেই ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার জন‍্য তাঁর নাম দিল্লি যায়। ভবানীপুর থানার ওসি তাঁর বাড়িতে এসে আগাম অভিনন্দনও জানিয়ে এসেছিলেন। কারণ, ‘পদ্মশ্রী’ পাওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় থানার রিপোর্ট পাঠাতে হয়। সব রিপোর্ট ঠিক ছিল। পরের দিন সকালে বলরাম ‘পদ্মশ্রী’ পেতে চলেছেন এই খবর প্রকাশ হল দৈনিক খবরের কাগজে। কিন্তু কিছুদিন পর রহস‍্যজনক ভাবে তলসীদাস বলরামের ফাইলটাই হারিয়ে গেল। পরে তাঁর কপালে আর ‘পদ্মশ্রী’ জোটেনি।

জীবনে অনেক বঞ্চিত হয়েছেন। তাই কি অভিমানে উত্তরপাড়ার ওই দুই কামরার ফ্ল‍্যাটে নিজেকে বন্দি করে রেখেছিলেন? রহস‍্য থাক, আপত্তি নেই। কিন্তু হাসপাতালে যেন বেশিদিন বন্দি হয়ে না থাকতে হয় ভারতের এই কিংবদন্তি ফুটবলারটিকে। সুস্থ হয়ে খুব শীঘ্রই ফিরে আসুন উত্তরপাড়ায়। ফ্ল‍্যাটের পিছনের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আগের মতোই অধিকাংশ সময় দেখবেন নৌকো, স্টিমার। আগের মতোই প্রার্থনা করবেন গঙ্গার ওপারে রামকৃষ্ণদেবের স্মৃতিবিজড়িত মা ভবতারিণীর উদ্দেশে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here