ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : বহু বছর পরে ফের প্রিমিয়ার ডিভিশনে শতাব্দী প্রাচীন উয়াড়ী ক্লাব। ভষ্মীভূত ক্লাব তাঁবু ঠিক করে এবছর ঘুরে দাঁড়িয়েছে উয়াড়ী। এবার তাঁরা মাঠের লড়াইয়ে সাফল্য পেতে মরিয়া।
প্রিমিয়ার ‘বি’ গ্রুপে খেলবে উয়াড়ী। মাঠে নামার আগে দু-দুটি স্পনসরও পেয়ে গেলেন উয়াড়ী কর্তারা। নতুন স্পনসরের নাম ঘোষণা ও জার্সি উন্মোচন করতেই বৃহস্পতিবার নিজেদের ক্লাব তাঁবুতে ছোট্ট অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করলেন উয়াড়ী কর্তারা।
এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উয়াড়ীর প্রখ্যাত ফুটবলার উত্তম চক্রবর্তী, প্রীতম কোটাল, কিংশুক দেবনাথ, ‘অর্জুন’ শান্তি মল্লিক, প্রাক্তন ফিফা রেফারি অনামিকা সাহা। এছাড়াও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ-এর চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সচিব অনির্বান দত্ত।
সুব্রত দত্ত, অনির্বান দত্ত উয়াড়ী ক্লাবের ইতিহাস চর্চা করতে করতেই আগামী দিনের সাফল্য কামনা করেন। সাত-আট দশকের অসাধারণ ফুটবল খেলেছিলেন প্রখ্যাত ফুটবলার উত্তম চক্রবর্তী । ১৯৭৮ সালে লিগে তাঁর গোলেই ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল উয়াড়ী। তিনি বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেন,”উয়াড়ী হল আমার আত্মার আত্মীয়। আমরা যখন খেলতাম তখন এই তাঁবুতেই ছিল চৌকি। বসে থাকতেন বাঘা সোম, পাখী সেন, রমেন ভট্টাচার্য, দিলীপদার মতো ব্যক্তিত্বরা। উয়াড়ীর মত কর্মকর্তা আর কোথাও পাইনি। নানান সমস্যা কাটিয়ে আমাদের ক্লাব ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। আশাকরি হারানো গৌরব আবার ফিরে পাবো”।
এই উয়াড়ী থেকেই উঠে এসেছেন প্রীতম কোটাল, কিংশুক দেবনাথ। তাঁরাও উয়াড়ীর পাশে থাকবেন বলে জানিয়ে গেলেন। এদিন জার্সি উন্মোচনের পাশাপাশি স্পনসরের নামও ঘোষণা করলেন উয়াড়ী কর্তারা। এই মরসুমে দল গঠনের জন্য যাবতীয় খরচ বহন করবে Mco chiken ও Hotel Royal Bengal.
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল ভোর রাতে ভয়ঙ্কর অগ্নিকাণ্ডে ১২৩ বছরের উয়াড়ী অ্যাথলেটিক ক্লাব তাঁবু পুড়ে যায়। তিন বছর পর তাঁবু নতুন করে তৈরি হয়েছে। উয়াড়ী অ্যাথলেটিক ক্লাব আসলে বাংলাদেশের। পরবর্তীকালে পাখী সেন,পঙ্কজ গুপ্ত, দীণেশ দত্ত সহ বেশ কিছু কর্তারা কলকাতার ময়দানে উয়াড়ী ক্লাব শুরু করেছিলেন। তখন বাংলাদেশের উয়াড়ীর শাখা হিসেবেই কলকাতার উয়াড়ীর পথ চলা (১৮৯৮) শুরু হয়। শোনা যায়, ওই সময় ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে উয়াড়ীর নামে একটা গ্যালারিও ছিল। তারপর এই ক্লাবকে ঘিরে শুধুই ইতিহাস।
একটা সময় কলকাতা লিগে দাপটের সঙ্গে ইস্টবেঙ্গল,মোহনবাগান এবং মহামেডানকে হারিয়েছে উয়াড়ী। ১৯৪৭ সালের ২১ মে লিগে ইস্টবেঙ্গলকে প্রথম হারিয়েছিল উয়াড়ী। সেই ম্যাচে আনন্দবাজার পত্রিকায় ম্যাচ রিপোর্টে লেখা হয়েছিল (একটা অংশ তুলে দেওয়া হল) — “উয়াড়ীর স্বপক্ষে বলা যেতে পারে,শক্তিশালী প্রতিপক্ষের সহিত তাহারা কোনও সময়ই মনোবল হারায় নাই। প্রথম থেকে শেষ পযর্ন্ত অনমনীয় দৃঢ়তার সহিত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করিয়াছে।’ পরে ১৯৭৮ সালেও লিগে উত্তম চক্রবর্তীর করা গোলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়েছিল উয়াড়ী।
এই ক্লাব বাংলাকে অসংখ্য ফুটবলার উপহার দিয়েছে। এই ক্লাবে অবদান আছে বাঘা সোমেরও। উত্তম চক্রবর্তী, দিলীপ পালিত, সমরেশ চৌধুরী,তুষার রক্ষিত শুরু করে বাসুদেব মন্ডল থেকে আজকের কিংশুক, প্রীতম কোটাল। কে নেই! একঝাঁক ফুটবলার উঠে এসেছেন। এবার সেই হারানো গৌরব ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে শতাব্দী প্রাচীন উয়াড়ী ক্লাব।