ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,১৯ ফেব্রুয়ারি : কলকাতা ময়দানে হকি ডার্বি ম্যাচ (মোহনবাগান – ইস্টবেঙ্গল) ঘিরে তুলকালাম। ইট বৃষ্টি, চেয়ার ছোড়া থেকে হাতাহাতি, মহিলাদেরও উপরও চড়াও হওয়া – কোনও কিছুই বাদ ছিল না। এমন উত্তপ্ত পরিবেশে ডার্বির ম্যাচ শেষ করতে পারলেন না আম্পায়ার। এই গন্ডগোলের জেরে ইটের ঘায়ে আহত হয়েছেন তিন ক্রীড়া সাংবাদিক। এদের মধ্যে ইটের আঘাতে ‘রে স্পোর্টস’ -এর তরুণ সাংবাদিক সৌম্যজিৎ দে-র মাথা ফাটে।
আজ, বিকেলে মহমেডান স্পোর্টিং মাঠে কলকাতা হকি লিগের মোহনবাগান – ইস্টবেঙ্গলের ডার্বি ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচ দেখতে প্রচুর মোহনবাগান সদস্য-সমর্থকরা মাঠে এসেছিলেন। সেই তুলনায় ইস্টবেঙ্গলের কম দর্শক মাঠে এসেছিলেন। ম্যাচের প্রথম থেকেই মাঠে উত্তেজনা ছিল।
ম্যাচ শুরু হওয়ার পর থেকেই মোহনবাগান সমর্থকরা ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের টিপ্পনি কাটতে শুরু করেন। রেড রোডের দিকে গ্যালারিতে তখন প্রচুর মোহনবাগান সমর্থক। ওই গ্যালারির ফেন্সিংয়ের ভিতরেই চেয়ারে বসে খেলা দেখছিলেন ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম কর্তা দেবব্রত সরকারসহ একাধিক কর্তা। ইস্টবেঙ্গলের অতিথি আসনে বসে হকি ম্যাচ দেখছিলেন বেশ কয়েকজন মহিলাও। ম্যাচের শুরু থেকেই পিছন থেকে ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি করতে থাকেন মোহনবাগান সমর্থকরা।
ম্যাচের বয়স যত বেড়েছে লাল-হলুদ কর্তাদের উদ্দেশ্যে কটুক্তি ততোই বেড়েছে। সঙ্গে ছিল অশ্লীল ভাষাও। ক্রমাগত কটুক্তি সহ্য করতে না পেরে ইস্টবেঙ্গলের কিছু কর্তা ফেন্সিংয়ের দিকে গিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের কটুক্তির প্রতিবাদ করতে থাকেন। ঠিক সেই সময় মাঠের ইস্টবেঙ্গল অতিথি আসন থেকে জনৈক এক কর্তা ফেন্সিংয়ের কাছে গিয়ে মোহনবাগান সমর্থকদের লক্ষ্য করে চেয়ার ছুঁড়ে মারেন।
চেয়ার ছুঁড়ে মারার পর মোহনবাগান সমর্থকরাও ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের লক্ষ্য করে ইট মারতে থাকেন। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হতেই ততক্ষনে মূল মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েন লাল-হলুদ শিবিরের কর্তারা। চেয়ার থেকে উঠে ততক্ষনে মোহনবাগানের হকি কর্তা এবং বেঙ্গল হকি সংস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাদের কাছে ঘটনার প্রতিবাদ করতে ছুটে যান ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্যতম কর্তা দেবব্রত সরকার, রাজা গুহরা। ঠিক তখনই ফেন্সিং টপকে মাঠের মধ্যে ঢুকে পড়েন মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গলের বেশ কিছু সমর্থক। শুরু হয় হাতাহাতি। এই হাতাহাতির লড়াইয়ে বাদ ছিল না মহিলারাও।
উত্তেজিত ইস্টবেঙ্গল শিবিরের মহিলারা অভিযোগ করতে থাকেন, মোহনবাগানের পুরুষ সমর্থকরা তাদের গায়ে হাত তুলেছে। মহমেডান মাঠ তখন অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি। দুই দলের কিছু কর্তা গন্ডগোল থামানোর চেষ্টা করছিলেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। প্রসঙ্গত, হকির ডার্বি ম্যাচের শুরুতে মাঠে পুলিশ ছিল না। এমন একটা ডার্বি ম্যাচে মাঠে কেন পুলিশ ছিল না, সেই প্রশ্ন উঠছে। রাজ্য হকি সংস্থার সভাপতি স্বপন (বাবুন) ব্যানার্জি বলেন,”হকির ডার্বি ম্যাচ ঘিরে এমন পরিস্থিতি তৈরি হবে ভাবা যায়নি। একটা ব্যাপার পরিস্কার যে, পুলিশ ছাড়া ডার্বি ম্যাচ করা খুব কঠিন। আমাদের বিএইচএ-এর সচিবের উচিত ছিল পুলিশের অনুমতি নিয়ে ম্যাচটা করা। শুরুতে পর্যাপ্ত পুলিশের ব্যবস্থা না করাটা ভুল হয়।”
এই গন্ডগোলের ফলে ম্যাচ বন্ধ হয়ে যায়। ম্যাচ যখন বন্ধ হয় তখন মোহনবাগান ১-০ গোলে জিতছিল। ম্যাচের দ্বিতীয় কোয়ার্টার হওয়ার পর আম্পায়ার খেলা বন্ধ করতে বাধ্য হন। প্রায় দেড় ঘন্টা ম্যাচ বন্ধ রাখার পর ফ্লাড লাইট জ্বেলে ম্যাচ শুরু হয়। কিন্তু কিছুক্ষন পর ফের ম্যাচ বন্ধ করে এদিনের মতো স্থগিত করে দেন আম্পায়ার।
ম্যাচ শুরুর পর আবার কেনও বন্ধ করে দেওয়া হল তাই নিয়ে সোচ্চার মোহনবাগানের হকি দলের কোচ শুভাশিস পাল। তিনি বলতে থাকেন,”আম্পায়ার বলেন মাঠে পাঁচজনের বেশি কর্তা থাকতে পারবেন না। আমরা সেটাই মেনে নিয়েছিলাম। খেলা ফের শুরু হল। কিন্তু আবার বন্ধ করে দেওয়া হল। এই ভাবে চললে হকি লিগ খেলব কি না তা আমাদের ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলব।”
রাজ্য হকি সংস্থার সভাপতি স্বপন ব্যানার্জি জানান,”দ্বিতীয়বার ম্যাচ বন্ধ করার কারণ হল আলোর অভাব। একটা ফ্লাড লাইটের আলো ভালভাবে জ্বলছিল না। এমন উত্তপ্ত পরিবেশে আম্পায়ার কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। তবে আজ যেখান থেকে ম্যাচ বন্ধ হয়েছে পরে সেখান থেকেই ম্যাচ শুরু হবে। অর্থাৎ তৃতীয় কোর্য়াটার থেকেই ম্যাচ শুরু হবে।”