স্টেডিয়ামের সংস্করণ আমার জীবনে অন‍্যতম কঠিন চ‍্যালেঞ্জঃ গৌতম দেব

0

◆সন্দীপ দে▪শিলিগুড়ি◆

খেলাধূলার মানচিত্রে শিলিগুড়ির পরিচিতি সেই নেহেরু কাপকে ঘিরেই। এই টুর্নামেন্টের জন‍্য যে সুন্দর স্টেডিয়াম তৈরি হয়েছিল বর্তমানে তার বেহাল অবস্থা আমরা তুলে ধরেছি। এক বছর হল স্টেডিয়ামের দায়িত্ব পেয়েছে শিলিগুড়ি মিউনিশিপাল কর্পোরেশন। আর এই গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে শিলিগুড়ি মিউনিশিপাল কর্পোরেশনের মেয়র গৌতম দেবের উপর। কোটি কোটি টাকার প্রয়োজন। এত টাকার ব‍্যবস্থা করতে পারবেন? তিনি কি পারবেন পুরনো স্টেডিয়াম ফিরিয়ে দিতে? ধ্বংসস্তুপ থেকে ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন’কে টেনে তুলে ধরাটা তাঁর কাছে ‘গোস্পদে চোখ রেখে আকাশ দেখা’র মতো চরম দূঃসাহস কাজ নয় তো? রাজনৈতিক জীবনে এটাই কি সব থেকে তাঁর টাফ অ‍্যাসাইনমেন্ট? রবিবার সন্ধ‍্যায় শিলিগুড়ির কলেজ পাড়ার নিজের বাড়িতে বসে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর মুখোমুখি মেয়র গৌতম দেব।

প্রশ্নঃ কর্পোরেশনের হাতে স্টেডিয়ামের দায়িত্ব আসার পর এক বছর কেটে গিয়েছে। সংস্করণের কাজ কতটা এগিয়েছে? কি কি পরিকল্পনা আপনার আছে?

গৌতম দেবঃ আপনি জানেন, আমাদের এই স্টেডিয়াম খুব পুরনো। প্রথমে হেলথ চেক আপের দরকার ছিল। সেটা করা হয়েছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি,রাজ‍্য সরকারের পূর্ত দফতর এই সংস্করণের কাজটা করবে। পূর্ত দফতর দুর্গাপুরের একটি এজেন্সিকে দিয়ে স্টেডিয়ামের হেলথ চেক আপ করিয়েছে। তার রিপোর্টও এসে গিয়েছে। এবার সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই ডিপিআর তৈরি হবে।

প্রশ্নঃ স্টেডিয়ামের কি কি সংস্করণ করবেন?

গৌতম দেবঃ আমরা এএফসি গাইডলাইন মেনেই স্টেডিয়াম গড়ে তুলতে চাই। যেমন ধরুন, ফোসিন ব্লকটা ৭ মিটার আছে। সেটা ১৫ মিটার করে প্রধান ব্লক হিসেবে গড়ে তুলব। সেখানেই তৈরি হবে চারটি ড্রেসিংরুম, রেফারিদের ড্রেসিংরুম, ডোপ টেস্ট করার বিশেষ ঘর,জিম,জাকুজি থাকবে। এছাড়াও মূল মাঠ এবং ড্রেনেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হবে।

প্রশ্নঃ আমি ঘুরে ঘুরে স্টেডিয়ামটি দেখলাম। গ‍্যালারির নিচে যে সব অফিস আছে সেগুলিতে বৃষ্টি হলেই জল পড়ে। স্টেডিয়ামের একাধিক পিলারের গোড়ায় প্লাস্টার উঠে গিয়ে সিক বেড়িয়ে গিয়েছে। চাঙড় ভেঙে পড়ছে। আপনারা কি পুরোটা ভেঙে নতুন করে তৈরি করবেন?

গৌতম দেবঃ না না, ভাঙবো না। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ‍্যমে আমরা সংস্করণ করব। চারটে ব্লক আছে, তার মধ‍্যে পূর্ব ও পশ্চিম ব্লকের কাজটা আগে করব। পশ্চিমে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ সহ আরও কয়েকটি ক্রীড়া সংস্থা আছে। এই দুটি ব্লকের কাজ আগে, তারপর উত্তর,দক্ষিণের কাজ হবে। আমরা ধাপে ধাপে কাজ করব।

প্রশ্নঃ সংরক্ষণের জন‍্য স্টেডিয়ামের গ‍্যালারির নিচে যে সব ক্রীড়া সংস্থাগুলি আছে তাদের প্রত‍্যেককেই উঠে যাওয়ার জন‍্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গ‍্যালারির নিচেই একটি ‘ক‍্যালকাটা ক‍্যাটারার’-এর ক‍্যান্টিন আছে। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম, সেই ক‍্যান্টিনকে উঠে যাওয়ার জন‍্য কোনও চিঠি কর্পোরেশন পাঠায়নি।

গৌতম দেবঃ (কিছুটা বিরক্ত হয়ে) এই বিষয়ে বেশি কিছু বলতে চাই না। ওরা তো ভাড়া দিয়ে আছে। আপনি যে সব সংস্থাকে চিঠি দেওয়ার কথা বলছেন সেই দিকটায় আগে কাজ শুরু হবে। ক‍্যান্টিনের দিকে যখন কাজ শুরু হবে তখন আমরা ওদেরকেও বলব। সমস‍্যা নেই তো।

প্রশ্নঃ স্টেডিয়ামের বয়স ৩৭ বছর। অতীতে যে স্টেডিয়াম কমিটি ছিল সেই কমিটির সদস‍্যরা কোনও কাজই করেননি। যত্ন নিলে স্টেডিয়ামের এই হাল হত কি?

গৌতম দেবঃ হ‍্যাঁ সেটা ঠিকই বলেছেন। একবারই তারা কাজটা করেছিল। তারপর আর কিছুই কাজ হয়নি। টাইম টু টাইমে মেনটেনেন্সের দরকার ছিল। এর বেশি কিছু আর বলতে চাই না।

প্রশ্নঃ যখন স্টেডিয়াম তৈরি হয় তখন কার পার্কিংয়ের কোনও জায়গা রাখা হয়নি। ফলে ভবিষ্যতে ডার্বি ম‍্যাচ বা কোনও গুরুত্বপূর্ণ ম‍্যাচ হলে আগের মতোই রাস্তায় যানজটের সৃষ্টি হবে। এই বিষয় নিয়ে কিছু ভেবেছেন?

গৌতম দেবঃ আন্ডার গ্রাউন্ড সেমি বেসমেন্টে কার পার্কিংয়ের কথা বলেছি। পিডব্লিউডি ব‍্যাপারটা দেখছে। এখনও আমরা রিপোর্ট পাইনি। তবে আগে আমরা মাঠ,গ‍্যালারি,ড্রেসিংরুমের দিকে নজর দিচ্ছি।

প্রশ্নঃ শুনেছি স্টেডিয়ামটা খোলনোলচে বদলাতে গেলে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকার প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের কোনও কর্পোরেশনের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। এখন প্রশ্ন হল, এত টাকা খরচ করে শিলিগুড়ি মিউনিশিপাল কর্পোরেশনের পক্ষে স্টেডিয়াম সংস্করণ করা সম্ভব?

গৌতম দেবঃ কত টাকা খরচ হবে আমরা জানি না। ডিপিআর পাই তারপর বলতে পারব। আর এটাও আপনাকে জানিয়ে রাখি, স্টেডিয়াম সংস্করণের জন‍্য এত টাকা খরচ করা কর্পোরেশনের পক্ষে সম্ভব নয়।

প্রশ্নঃ তাহলে সংস্করণের টাকা আসবে কোথা থেকে?

গৌতম দেবঃ স্টেডিয়াম কমিটির ফান্ডে কিছু টাকা ছিল সেটা পেয়েছি। পাশাপাশি আমরা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতর সহ আরও কিছু দফতর থেকে আর্থিক সাহায‍্য চেয়েছি।

প্রশ্নঃ যখন সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্য মেয়র ছিলেন তখন তিনি অর্থের জন‍্য যখন তখন ধর্ণায় বসতেন, কলকাতা মহানাগরিক ফিরহাদ হাকিমের উপর টাকার জন‍্য চাপ সৃষ্টি করতেন। এছাড়াও কিছু ব‍্যক্তিদের কাছ থেকেও অর্থ নিয়ে এসেছেন কর্পোরেশনের জন‍্য। কর্পোরেশনের আর্থিক সমস‍্যায় থেকেও আপনি শাসক দলের নেতা, মেয়র। আপনার ইচ্ছে থাকলেও বিজেপির কেন্দ্রীয় ক্রীড়া মন্ত্রী নিশীথ প্রামানিকের কাছে সাহায‍্যর কথা বলতে পারবেন না। কলকাতা কর্পোরেশনেও চাপ দিতে পারবেন না। মেয়রের চেয়ারে বসে এটা কি একধরনের বিরম্বনা?

গৌতম দেবঃ ক্রীড়া দফতর, ববি হাকিমকে বলি তো। আর নিশীথ কোনও সাহায‍্য করবে না। ওরা দেয় না। কর্পোরেশনের অবস্থা ভাল নয় এটা বারবার কেন বলছেন? আপনি জানেন, কর্পোরেশন কত কাজ করছে। বাম জমানায় কত টাকা বাকি ছিল জানেন আপনি? একটা অ‍্যাবনরমাল ফাইনান্সিয়াল কন্ডিশনে রেখে দিয়েছিল। সেই সব সামলে কাজ করতে হচ্ছে আমাদের।

প্রশ্নঃ মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা বন্দ‍্যোপাধ‍্যায় খেলা প্রিয় মানুষ। ইস্টবেঙ্গলের পর মহমেডানকেও ইনভেস্টর এনে দিচ্ছেন। কত কত ক্লাবকে টাকা দিচ্ছেন। কাঞ্জনজঙ্ঘা ক্রীড়াঙ্গন স্টেডিয়ামের সংস্করণের জন‍্য আপনি তো সরাসরি মুখ‍্যমন্ত্রীকে জানিয়ে সাহায‍্য চাইতে পারেন।

গৌতম দেবঃ এই ব‍্যাপারে সবটা প্রেসকে আমি বলতে যাব কেন? প্রয়োজন হলে নিশ্চয় যাব।

প্রশ্নঃ আপনি অনেক কাজ করেছেন। কিন্তু এই স্টেডিয়াম সংস্করণের কাজটা আপনার জীবনে কি সব থেকে কঠিন কাজ বলে মনে হচ্ছে?

গৌতম দেবঃ (হাসতে হাসতে বলছিলেন) ঠিকই বলেছেন। হ‍্যাঁ, স্টেডিয়াম সংরক্ষণের কাজটা আমার জীবনে অন‍্যতম কঠিন চ‍্যালেঞ্জ। দেখা যাক।

প্রশ্নঃ শিলিগুড়ির এই স্টেডিয়াম গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আইএফএ-এর প্রয়াত সচিব প্রদ‍্যোৎ দত্তর বিরাট ভূমিকা ছিল। কিন্তু আজ পযর্ন্ত শিলিগুড়ির কোনও ক্রীড়া প্রশাসক প্রদ‍্যোৎ বাবুকে সেই ভাবে সম্মান দেখাতে পেরেছেন?

গৌতম দেবঃ শুনুন ভাই, প্রদ‍্যোৎ দত্ত না থাকলে এই স্টেডিয়াম তৈরি হত না। নেহেরু কাপটা জেদ করে শিলিগুড়িতে করেছিলেন। তাঁর জন‍্যই দ্রুত স্টেডিয়ামটি হয়েছিল। আমার যতদুর মনে পড়ছে ব‍্যবসায়িক সংঘ ফোসিন সেই সময় ৩০ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। হয়তো টাকাটা কম কিন্তু তখন সেই টাকার ভ‍্যালিউ বেশি ছিল। তবে আপনাকে বলে রাখছি, আগে স্টেডিয়ামটা সংস্করণ করব তারপর প্রদ‍্যোৎ দত্তর নামটা যাতে স্টেডিয়ামের সঙ্গে জুড়ে থাকে আমরা ভেবে রেখেছি। আমার মনে হয় প্রদ‍্যোৎবাবুর ব‍্যাপারটা আরও আগে হওয়া উচিত ছিল।

প্রশ্নঃ শেষ প্রশ্ন, ধরুন আপনার সামনে হঠাৎ ভুতের রাজা এসে তিনটি বর দিতে চাইল। আপনি কোন তিনটি বর চাইবেন?

গৌতম দেবঃ (হাসতে হাসতে) ওরে বাবা। এক কথায় বলা মুস্কিল। প্রথমত আমাদের স্টেডিয়ামটি সংস্করণ করে ঠিক জায়গায় দাঁড় করানো। দ্বিতীয় বর চাইব, শিলিগুড়ির আন্ডার গ্রাউন্ড ড্রেনেজ সিস্টেম। আর তৃতীয়টি হল শিলিগুড়ি শহরকে আরও গতিশীল ও ফ্লাইওভার করা।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here