সৌরভের হাত দিয়ে জর্জ টেলিগ্রাফের বিজয়া সম্মেলনে সোনা জয়ীদের সংবর্ধনা

0

◆বাংলার অধিনায়ক নরহরি শ্রেষ্ঠাকে বরণ করছেন সৌরভ,শুক্রবার জর্জটেলিগ্রাফ তাঁবুতে◆

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,২১ অক্টোবর : সংবর্ধিত সদ‍্য ন‍্যাশনাল গেমসে চ‍্যাম্পিয়ন বাংলা দলের ফুটবলাররা। ময়দানের প্রাচীন জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব তাঁবু জুড়ে যেন তিন দিন আগেই দীপাবলির উৎসব। আর এই উৎসবের মাত্রা বেড়ে যায় ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির উপস্থিতিতে। সদ‍্য বিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি সৌরভের হাত দিয়েই সোনা জয়ী বাংলা ফুটবল দলের কোচ ও ফুটবলারদের সংবর্ধনা জানাল জর্জটেলিগ্রাফ।

বাংলা কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের সঙ্গে সৌরভ

মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলার ফুটবলারদের সৌরভ বলছিলেন, “আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা সোনা জিতে বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছো। আমি তোমাদের কাগছে ছবি দেখেছি। খুব ভাল খেলেছো। এভাবেই খেলে যাও মন দিয়ে। মাঠে সেরাটা দাও। মনে রাখবে একজন খেলোয়াড়ের সময়টা খুব ছোট। তাই এখন শুধু খেলে যাও। অন‍্য কিছু নিয়ে ভাববে না”।

সোনা জয়ী বাংলা দলের সঙ্গে সৌরভ

কোচ বিশ্বজিত ভট্টাচার্যের প্রশংসা করেন সৌরভ থেকে সুব্রত দত্ত,অজিত ব‍্যানার্জি,অনির্বান দত্ত। বক্তব্য রাখতে গিয়ে বাংলার কোচ বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য বলছিলেনন,”আমি মাত্র সাতদিন সময় পেয়েছিলাম। আমি মনে করি, সাত দিনে কোচ সব কিছু করতে পারে না। আজ বাংলা সোনা জিতেছে ফুটবলারদের জন‍্য। ওরা যা ফুটবলটা খেলেছে তার সব কৃতিত্ব ফুটবলারদের। আমি শুধু সর্দারের ভূমিকা পালন করেছি। আমি ভাগ‍্যবান তোমাদের মতো ফুটবলারদের পেয়েছি।”

অনুষ্ঠানের মাঝে সুব্রত দত্তর সঙ্গে স্নেহাশিস,সৌরভ ও অভিষেক ডালমিয়া

আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত ঘোষণা করেন,কালীপুজোর পর খুব শীঘ্রই সোনা জয়ী বাংলা দলকে সংবর্ধনা জানাবে আইএফএ। সেই দিন গোটা দলকে আর্থিক পুরস্কারও দেবে আইএফএ। এছাড়াও বেঙ্গল অলিম্পিক অ‍্যাসোসিয়েশন ও মন্ত্রী সুজিত বসুও খুব শীঘ্রই বাংলা দলকে সংবর্ধনা জানাবে বলে জানা গিয়েছে।

মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসুকে স্বাগত আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর

প্রতি বছরের মতো এবারও ময়দানের সকল স্তরের ব‍্যক্তিত্বের সামিল করেছিল ময়দানের ‘দত্ত পরিবার’। ময়দানের ছোট-বড়-মেজো-সেজো – সব ক্লাবের কর্তারা সামিল হয়েছিলেন জর্জটেলিগ্রাফের বিজয়ার উৎসবে। ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য,অমিত ভদ্র, অলোক মুখার্জি,অতনু ভট্টাচার্য,কৃষ্ণেন্দু রায়, প্রদীপ দত্ত,গৌতম ঘোষ প্রমুখ। এসেছিলেন মোহনবাগানের প্রাক্তন সচিব সৃঞ্জয় বসু, ইস্টবেঙ্গলের কর্তা দেবব্রত সরকার,বিওএ সভাপতি স্বপন ব‍্যানার্জি। সিএবির সৌরভ ছাড়াও এসেছিলেন স্নেহাশিস গাঙ্গুলি,অভিষেক ডালমিয়া, গৌতম দাশগুপ্ত,সুবীর (বাবলু) গাঙ্গুলির মতো ব‍্যক্তিত্ব। শুরু থেকেই ছিলেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব‍্যানার্জি সহ একাধিক কর্তারাও। প্রতি বছরের মতো জর্জের এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ক্রীড়াপ্রেমী মন্ত্রী সুজিত বসু। এ যেন কলকাতা ময়দানের ক্রীড়া জগতের মিলন মেলা।

সুব্রত দত্তকে উত্তরীয় পড়িয়ে দিচ্ছেন মন্ত্রী সুজিত বসু

জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাবে কবে থেকে এই বিজয়া সম্মেলন হচ্ছে? জর্জের সর্বময় কর্তা ও বিশ্বনাথ দত্তর পুত্র সুব্রত দত্ত এক আড্ডায় ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেছিলেন,”আমি তখন সদ‍্য মাঠ করা শুরু করেছি। সালটা ঠিক মনে নেই। বাবা-কাকার সময় থেকেই ময়দানের সবাইকে নিয়ে বিজয়া সম্মেলন শুরু হয়েছিল জর্জে। এখনও সেটা ধরে রাখতে পেরেছি। ভাল লাগে ময়দানের সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই অনুষ্ঠানে আসেন। এটা শুধু জর্জের অনুষ্ঠান নয়। গোটা ময়দানের সকল ক্রীড়াব‍্যক্তিত্বদের অনুষ্ঠান। সবাই মিলে কিছু ভাল মুহূর্ত আমরা কাটাই।”

ফুটবলারদের পরামর্শ দিচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলি

জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা হরিপদ দত্ত।
এই জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব ১৯২৫ সালে তৈরি করে ছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত, প্রদ‍্যোৎ দত্তর বাবা হরিপদ দত্ত। তিনি জর্জ ক্লাব যখন শুরু করলেন তখন ক্লাব সচিব ছিলেন ব্রিটিশ সাহেব এ, এল কর্বেট। তিনি আসলে জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল ছিলেন। হরিপদবাবু এই কর্বেটকে ক্লাবের প্রথম সচিব করেছিলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পরাধীন ভারতে বাংলা তথা ভারতীয় কোনও কোম্পানিতে (জর্জ টেলিগ্রাফ ইনস্টিটিউট) একজন জর্জের চাকুরিজীবী ছিলেন এই বিদেশি।

অনুষ্ঠানের মাঝে প্রদীপ দত্ত, অতনু ভট্টাচার্য,অমিত ভদ্র ও বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্যের আড্ডা

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, হরিপদ দত্তর পাঁচ পুত্রর (তারাপদ দত্ত,বিশ্বনাথ দত্ত,প্রণব দত্ত, প্রশান্ত দত্ত এবং প্রদ‍্যোৎ দত্ত) মধ‍্যে ময়দানে এসেছেন বিশ্বনাথ দত্ত ও প্রদ‍্যোৎ দত্ত। পরের জেনারেশনেও দুই জন (সুব্রত দত্ত ও অনির্বান দত্ত) মাঠ করছেন। ফোর্থ জেনারেশন হিসেবে পাঁচ বছর হল জর্জ ক্লাবে যোগ দিয়েছেন প্রদ‍্যোৎবাবুর দাদা প্রশান্ত দত্তর নাতি ২৮ বছরের অধিরাজ দত্ত। যাকে ময়দানে স্মিথ বলেই জানে সবাই।

অধিরাজ দত্ত ও প্রদ‍্যোৎ দত্তর ছোট ছেলে অনিন্দ দত্তর সঙ্গে সুদেষ্ণা মুখার্জি

জর্জ টেলিগ্রাফের খেলে গিয়েছেন বহু বিখ‍্যাত সব ফুটবলার। তালিকাটা দীর্ঘ। পাশাপাশি
ক্রীড়া প্রশাসকদেরও ‘আঁতুরঘর’ হল এই জর্জটেলিগ্রাফ ক্লাব। বছরের পর বছর তালিম নিয়ে ‘আঁতুরঘরে’ই সিদ্ধিলাভ করে গিয়েছেন বিশ্বনাথ দত্ত, প্রদ‍্যোৎ দত্ত, সুব্রত দত্তরা। এঁদের উত্তরসুরি হিসেবে ‘আঁতুরঘরে’ যোগ‍্য ক্রীড়া প্রশাসক হয়ে ওঠার পথে প্রয়াত প্রদ‍্যোৎ দত্তর জৈষ্ঠ পুত্র অনির্বান দত্ত। যিনি এখন আইএফএ-এর সচিব। আর অনির্বানের জেঠুর নাতি অধিরাজ দত্ত নীরবে তালিম নিচ্ছেন।

জর্জের উপহার এমন এক সুন্দর সন্ধ‍্যায় খাওয়া দাওয়ার মাঝেও সিএবির এক ঝাঁক কর্তাদের দেখে অন‍্য ক্লাব কর্তাদের কৌতূহল এবং আড়ালে আলোচনা ও একাধিক প্রশ্ন শোনা গেল, সিএবিতে এবার ইলেকশন না সিলেকশন? সৌরভ ছাড়া আর কে কে কোন পদে আসছে? স্নেহাশিস থাকছেন? প্রবীর চক্রবর্তী কি তাহলে সিএবির সচিব হচ্ছেন? সাংবাদিক বিশ্ব মজুমদারও নাকি সিএবির কোনও এক পদে আসছেন? জর্জের মঞ্চে যখন সৌরভ গাঙ্গুলি বিশ্ব মজুমদারকে জড়িয়ে ধরলেন তখন প্রশ্নটা অনেকের মুখেই শোনা গেল।

বিজয়া উৎসবেও ময়দানি রাজনীতি চর্চা। আনন্দ, চাপা উত্তেজনা, হয়তো কারও আশঙ্কা। নানান ঘটনার ঘনঘটা। এটাই তো বাংলা তথা ভারতীয় ক্রীড়া জগতের গর্বের ময়দান।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here