◆মোহনবাগান ফুটবল সচিব স্বপন ব্যানার্জির হাত থেকে ম্যাচ সেরার পুরস্কার নিচ্ছেন সৌগত হাঁসদা◆
◆সাদার্ন সমিতি – ২ (সৌগত হাঁসদা-২)
◆মোহনবাগান – ০
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : এক যুগ বা তারও একটু আগে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে কলকাতার গড়ের মাঠে দাপট দেখিয়েছেন কোন কোন খেলোয়াড়? আপাতত তিনটি নাম উঠে আসছে। বাংলার হয়ে রনজি স্কোয়াডে ছিলেন মুর্শিদাবাদের কুন্তল বাজপেয়ী, সোহম ঘোষ। আর ফুটবলে সুমন হাজরা। রঞ্জিত গুপ্তর জমানায় আইএফএ যখন সুপার ডিভিশনে প্রতিটি ক্লাব দলে অনূর্ধ্ব-১৯ ফুটবলার রাখাটা বাধ্যতামূলক করেছিল তখন সুমন সই করেছিলেন মোহনবাগানে। সুমন ডার্বি ম্যাচও খেলেছিলেন। তারপর এই জেলা থেকে শুধুই শূন্যতা।
বহু বছর পর সাদার্ন সমিতির হাত ধরে আবার গড়ের মাঠেস উজ্জ্বল মুর্শিদাবাদের কোনও ফুটবলার। মুর্শিদাবাদ জেলার নবগ্রাম ব্লকের আদিবাসীদের নিয়ে ছোট্ট একটি গ্রাম চানক। আটের দশকে এই চানক গ্রাম থেকে উঠে এসেছিল জামিন হাঁসদা নামে এক ফুটবলার। এই জামিনের খেলা দেখতে বিভিন্ন গ্রাম থেকে লোক আসতো মাঠে। স্থানীয় ফুটবল জগতে জামিন তখন স্টার ফুটবলার। নিজে স্বপ্ন দেখতেন একদিন তিনিও কলকাতার গড়ের মাঠে খেলে নাম করবেন। কিন্তু সেই সুযোগ হয়নি। নিজের অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণ করার লক্ষ্যে ছেলে সৌগত হাঁসদাকে কলকাতা শহরে পাঠিয়েছিলেন। দুই বছর আগেও জর্জ টেলিগ্রাফে খেলেছিলেন সৌগত। এবছর সাদার্নে সই করেছেন। অখ্যাতদের সব সময় তারকা হওয়ার জন্য বড় মঞ্চ আহ্বান করে। সৌগত সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে দু-দুটি গোল করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ম্যাচের নায়ক সৌগত লাজুক মুখ নিয়ে বলছিলেন,”গোল করতে পেরে ভাল লাগছে। আমাকে আরও ভাল খেলতে হবে।”
মোহনবাগানের ঘরের মাঠে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জোড়া গোল করা সহজ ব্যাপার নয়। ১৯ মিনিটে প্রথম গোল করার চার মিনিট পর ফের দ্বিতীয় গোল সৌগতর। ২-০ গোলে এগিয়ে থাকার পর অন্য কোচেরা যা করে থাকেন সাদার্ন কোচও তাই করলেন। রক্ষণে লোক বাড়িয়ে দিলেন। সুযোগ পেলে প্রতি আক্রমণে উঠে গিয়েছে সাদার্ন। ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে মোহনবাগান আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে গোলের সুযোগ তৈরি করে। দুটি শট পোস্টে লেগে ফিরেও আসে। কিন্তু রবিবার মোহনবাগানের দিন ছিল না। ফুটবল বিধাতা এই দিনটা লিখে রেখেছিলেন হৌগত হাঁসদা সহ দল,কোচ রঞ্জনের নামে।
এবারের লিগে শুরুটা ভাল করেনি সাদার্ন সমিতি। কোচের দায়িত্বে নিয়ে সেই ভাবে দাগ কাটতে পারেননি রঞ্জন ভট্টাচার্য। কিন্তু মোক্ষম সময়ে বড় মঞ্চে নেমে সাদার্ন সমিতির ইতিহাসে নাম লিখিয়ে ফেললেন কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। অতীতে সাদার্ন কখনও মোহনবাগানকে হারায়নি। রবিবার মোহনবাগানের ঘরের মাঠে ২-০ গোলে মোহনবাগানকে হারিয়ে সাদার্ন নজির গড়ল। তথাকথিত ছোট দলের কোচ হিসেবে বড় ক্লাবকে হারানোটা একটা তৃপ্তির ব্যাপার। অস্বীকার করার নেই। আজ সেই কাজটাই করলেন কোচ রঞ্জন। শুরুতে মনে হয়েছিল এবছর সাদার্নের রেলিগেশন না হয়ে যায়! আস্তে আস্তে সেই বাধা টপকে সাদার্ন এখন ‘সেফ জোন কনফার্মড।’ কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছিলেন,”শুরুটা আমরা ভাল করতে পারিনি ঠিকই। তবে আমরা পরে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। শুনলাম,সাদার্ন নাকি কখনও মোহনবাগানকে হারায়নি। আজ সেটা করতে পেরে ভাল লাগছে। এই জয়ের মূল কৃতিত্ত্ব সৌগত সহ সকল ফুটবলারদের।
এই বছর সাদার্নের প্রাপ্তি কি? অবশ্যই রবিবার মোহনবাগানকে হারানো। যা সাদার্ন সমিতির ফুটবলার,কোচ,কর্তাদের কাছে আত্মতৃপ্তির অনুশীলন। ভবিষ্যতের লড়াই করার অনুপ্রেরণা।
এদিকে, সাদার্নের কাছে হেরে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন মোহনবাগান জনতা। মাঠে জলের বোতল ছুড়তে থাকেন মোহনবাগান সমর্থকেরা। সাদার্নের গোলরক্ষককে গালাগালিও দেওয়া হয়। ম্যাচের শেষে কিয়ান নাসিরি সমর্থকদের উদ্দেশ্য করে হাততালি দিলে সমর্থকরা আরও রেগে ওঠেন। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেন।