সোনারপুর টু গড়ের মাঠঃ দুই ক্লাবকে ঘিরে স্বপ্ন পার্থ-অমিত-প্রতাপের

0

◆অমিত ভদ্র, শঙ্কর বসু,পার্থ সারথী গাঙ্গুলি,দেবাশিস মন্ডল এবং প্রতাপ ঘোষ। সোমবার জ‍্যোতির্ময় স্কুলে বৈঠকের পর◆

ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : অতীতকে ওঁরা ভুলতে পারেননি। ওঁরা নিজের এলাকাকে ভুলতে পারেননি। ভুলতে পারেননি নিজেদের জেলা ফুটবলের সোনালী অতীতকে। বাবা লালবাজারে চাকরি করতেন। মাসের রেশনের চাল,ডাল সাইকেলে করে নিয়ে আসতেন – লালবাজার টু সোনারপুর। সেই মানুষটি আজ বাংলার প্রতিষ্ঠিত উদ‍্যোগী বাঙালি – পার্থ সারথী গাঙ্গুলি।
আর অন‍্য দুই জন, পড়াশোনার ফাঁকেই ফুটবলার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই করে গিয়েছেন। বাসে করে সোনারপুর থেকে গড়িয়া আবার গড়িয়া থেকে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে গড়ের মাঠে গিয়ে অনুশীলন। এভাবেই চলেছে অমিত ভদ্র ও প্রতাপ ঘোষের লড়াই। এই দুজন ভারতের প্রাক্তন ফুটবলার। দুজনেই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। এবার নিজের জেলাকে, বিশেষ করে ফুটবল দিয়ে নিজের এলাকায় ‘রিটার্ন’ দিতে বদ্ধপরিকর ওঁরা।

জ‍্যোতির্ময় স্কুলে সোনারপুর YMSA ফুটবলারদের সঙ্গে কর্তারা

দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার তিনটি ক্লাব কলকাতা লিগে খেলছে। সোনারপুর YMSA, জ‍্যোতির্ময় এসি এবং ডায়মন্ডহারবার এফসি। শেষের ক্লাবটি অর্থাৎ অভিষেক ব‍্যানার্জির ডায়মন্ডহারবার এফসি ধারে,ভারে, অর্থে কলকাতার তিন প্রধানকেও টেক্কা দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। এই ক্লাব গড়ের মাঠের ফুটবলে ‘লিফটে’ করে তীব্র গতির সঙ্গে উপরে উঠছে। আর YMSA এবং জ‍্যোতির্ময়ী এসি ‘সিড়ি’ বেয়ে, ধাপে ধাপে উপরে উঠছে।

এই বছর কলকাতা লিগের তৃতীয় ডিভিশনে দুরন্ত পারফরমেন্সে আগামী মরসুম থেকে সোনারপুরের দুই ক্লাব – YMSA ও জ‍্যোতির্ময় দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলবে। যা সোনারপুর ফুটবল ইতিহাসে প্রথম। এটাই যেন পার্থ সারথী গাঙ্গুলি, অমিত ভদ্র, প্রতাপ ঘোষদের কাছে আত্মতৃপ্তির অনুশীলন।

অমিত ভদ্র ও প্রতাপ ঘোষ হলেন YMSA ক্লাবের চেয়ারম্যান ও টিডি। কিন্তু পার্থ সারথী গাঙ্গুলির ভূমিকাটা ওঁদের থেকে আলাদা। পাঁচ বছর আগে সোনারপুর YMSA রবি কর্মকারের থেকে হাত বদল হয়ে সোনারপুরের বাসিন্দা ও প্রাক্তন ফুটবলার শঙ্কর বসুর কাছে আসে। তখন থেকেই সক্রিয়ভাবে এই ক্লাবের সভাপতি পদে আছেন পার্থ সারথী গাঙ্গুলি। গত বছর পার্থবাবু নিজের স্বপ্নের স্কুল জ‍্যোতির্ময় নামে ফুটবল দল তৈরি করে কলকাতা লিগের তৃতীয় ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র নিয়ে গড়ের মাঠে ফুটবল শুরু করেন। ময়দানে তখন গুঞ্জন শুরু হয়েছিল যে, পার্থবাবু নিজের ক্লাব করায় এবার YMSAকে পরিত‍্যাগ করবেন। না, তিনি সেই রাস্তায় হাঁটেননি। এই প্রসঙ্গ তুলতেই হাসতে হাসতে পার্থবাবু ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন,”দুটি ক্লাবই আমার কাছে সন্তান। YMSA বড় ছেলে আর জ‍্যোতির্ময় হল ছোট ছেলে। সন্তানদের পরিত‍্যাগ করার প্রশ্নই আসে না।”

YMSA ফুটবলারদের সঙ্গে সভাপতি পার্থ সারথী গাঙ্গুলি, অমিত ভদ্র ও ফুটবল সচিব দেবাশিস মন্ডল

সোমবার ছিল বিশ্বকর্মা পুজো। এই দিনেই সোনারপুর সংলগ্ন কালিকাপুরে নিজের জ‍্যোতির্ময়ী স্কুলে YMSA এর ফুটবলারদের ডেকে লাঞ্চ করালেন পার্থ সারথী গাঙ্গুলি। সেই সঙ্গে এই বিশ্বকর্মা পুজোর দিন থেকেই আগামী মরসুমের জন‍্য দল গড়ার একটা পরিকল্পনা করে নিলেন পার্থ সারথী গাঙ্গুলি, অমিত ভদ্র, প্রতাপ ঘোষ এবং শঙ্কর বসু।

ঠিক কি আলোচনা হল? পার্থবাবু বলেন,”নিজেদের মধ‍্যে প্রাথমিক আলোচনা হল। লক্ষ‍্য আমাদের অনেক বড়। এই জেলা থেকে এই দুটি দল ভবিষ্যতে গড়ের মাঠে আরও বড় জায়গায় পৌঁছতে হবে। দেখা যাক কতদুর কি করা যায়।”

জ‍্যোতির্ময় এসি দল

অমিত ভদ্র এবং প্রতাপ ঘোষ এই ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কোনও পারিশ্রমিক নেন না। যেখানে প্রতিষ্ঠিত, খ‍্যাতি সম্পন্ন বেশির ভাগ প্রাক্তনরা টাকা ছাড়া এক পা চলেন না সেখানে অমিত-প্রতাপের এই উদ‍্যোগ নজির বিহীন এবং অবশ‍্যই প্রশংসনীয়। অমিত ভদ্র বলছিলেন,” আমাদের একটাই লক্ষ‍্য জেলা থেকে প্রতিভাবান ফুটবলারদের বড় জায়গায় খেলার মঞ্চ দেওয়া। ভাবতে পারছেন, আমাদের এই এলাকায় দুটি ক্লাবের মাধ‍্যমে কম করে ৭০ থেকে ৮০ টি ছেলে কলকাতা লিগে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। ঠিক পথে এগোলে উঠে আসবে ভবিষ্যতের তারকা। অখ‍্যাতদের নিয়ে কাজ করতে আমার বেশ ভাল লাগছে। আনন্দ পাচ্ছি বলেই জেলা ফুটবলে জড়িয়ে আছি।”

সোনারপুর থেকে কালিকাপুর জ‍্যোতির্ময় স্কুলের পথে। ফুটবলারদের সঙ্গে বাসে অমিত ভদ্র। সোমবার

প্রতাপ ঘোষ বলছিলেন,”গড়ের মাঠে ভাল দল করে লিগ খেলতে গেলে প্রয়োজন টাকা। পার্থবাবু, অমিত আছেন। ওদের কানেকশন ভাল। আশা করছি সামনের বছর আরও ভাল দল হবে। যতদিন বেঁচে আছি জেলার ফুটবল নিয়েই কাজ করে যেতে চাই।”

YMSA ক্লাবের সচিব শঙ্কর বসু বলছিলেন,” আমরা ভাগ‍্যবান যে পার্থদা, অমিতদা, প্রতাপদার মতো মানুষ পেয়েছি। স্বপ্ন দেখতে সাহস জোগাচ্ছেন ওঁরা। আমাদের দলে এবার ফুটবল সচিব হিসেবে যিনি এসেছেন সেই দেবাশিস মন্ডল দলের সঙ্গে সব সময় সঙ্গে আছে। ফুটবল দল গড়ার জন‍্য যে টিম আমরা পেয়েছি সেটাই ভাগ‍্য করে পেয়েছি।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here