◆অনির্বান দত্ত ও সুব্রত দত্ত◆
◆সন্দীপ দে◆
এই প্রথম দাদার প্রস্তাব নাকচ করে স্পষ্ট করে নিজের অবস্থান জানিয়ে দিলেন ভাই। এমন ঘটনা ঘটছে রবিবার আইএফএ-এর গভর্নিং বডির সভায়, উপস্থিত সভার সদস্য, সাংবাদিকদের সামনেই।
কে এই দাদা-ভাই? অবশ্যই এঁরা হলেন ‘দত্ত পরিবারে’র দুই ভাই। দাদা সুব্রত দত্ত যিনি আইএফএ-এর চেয়ারম্যান। আর ভাই হলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। কোনও উত্তেজনা ছিল না। বাকবিতন্ডার প্রশ্নই হঠে না। কিন্তু রবিবারের আইএফএ-এর গভর্নিং বডির সভায় নিঃশব্দে যেটা ঘটে গেল তা নিয়ে ক্লাব কর্তাদের মধ্যে আড়ালে চর্চা যে চলবেই তা বলাই যায়।

ঠিক কি ঘটেছিল রবিবারের বৈঠকে? সভার সদস্যদের সামনে আয়বায়ের হিসাব নিয়ে বিবৃতি দিচ্ছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। সেই সময় সুতারকিন স্ট্রিটের আইএফএ বাড়ির বর্তমান ভ্যালিউশন উল্লেখ করেন অনির্বান। তিনি জানান,এই মুহূর্তে আইএফএ বাড়ির মূল ৮ কোটি টাকারও বেশি। অনির্বানের বক্তব্য শেষ হতেই দাদা এবং চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত সভায় একটি প্রস্তাব রাখেন। সুব্রতবাবু বলেন,”গর্ভনিং বডির সদস্য হিসেবে আমি প্রস্তাব রাখছি, আইএফএ অফিসে নতুন একটা ফ্লোর তৈরি করা হোক। তার জন্য কলকাতা কর্পোরেশনে আবেদন করে নিয়ম মেনেই হোক। তবে আইএফএ-এই বাড়িতে একাধিক ভারাটিয়া আছে। তাদের অনেকেই উঠতে চায়ছে না। মামলা করলে সমস্যার সমাধান হতে বহু বছর লেগে যাবে। আবার যে সমস্ত ভাড়াটিয়া গন্ডগোলে যেতে চায় না তাদেরকে সংশ্লিষ্ট ফ্লোরটিকে ডিসকাউন্টে বিক্রির প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। আর যারা অফিস ছাড়ার জন্য টাকার দাবি করছে তাদেরকে সেই বিক্রির টাকা দিয়ে ভাড়াটিয়াদের তুলে দেওয়া হোক।”

দাদা সুব্রত দত্তর আইএফএ বাড়ির আংশিক বিক্রির প্রস্তাব শুনে সঙ্গে সঙ্গে নাকচ করে দিলেন ভাই ও আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত। তিনি বলতে থাকেন,”এই বাড়ি আইএফএ-নিজস্ব সম্পত্তি। নিজেদের সম্পত্তি বিক্রির কোনও মানে হয় না। এটা ঠিক কাজ হবে না।” ভাইয়ের আপত্তি শুনে দাদা সুব্রত দত্ত তখন বলেন, “ঠিক আছে। বিক্রি না করে লিজে দেওয়া হোক।” সুব্রতবাবুর এই প্রস্তাবেও নারাজ ভাই অনির্বান। পরে এই বিষয় নিয়ে আর কোনও মন্তব্য করেননি সুব্রত দত্ত। দাদা-ভাইয়ের প্রস্তাব দেওয়া আর সেই প্রস্তাব নাকচ করে দেওয়ার ঘটনা সভার অনেকেই অবাক হয়েছেন। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, তবে কি অতীতের বিশ্বনাথ দত্ত ও প্রদ্যোৎ দত্তর ময়দানের সেই বিখ্যাত ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ ফিরে আসছে?

এই ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ – এর আশঙ্কার কারণ একাধিক। যেমন, অনির্বান যখন আইএফএ-এর কোষাধ্যক্ষর পদে লড়াই করার জন্য আসরে নেমেছিলেন তখন দাদার সমর্থন পাননি ভাই অনির্বান। যদিও এই প্রসঙ্গে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে সুব্রতবাবু বলেছিলেন,”ভাই জয়ের (অনির্বানের ডাক নাম) সেই লড়াইয়ে আমি সমর্থন করিনি। আবার বিরোধিতাও করিনি। জয় আমার ভাই। আমি ওকে সমর্থন করলে লোকে সমালোচনা করত। এটা আমি চাইনি। তাই জয়কে আমার বক্তব্য বুঝিয়ে বলেছিলাম। তবে ওকে এটাও বলেছিলাম, ক্লাব যদি তোকে চায় তাহলে ক্ষমতায় আসবি।”

সুব্রত দত্তর এমন বক্তব্যর পরেও ময়দানে দাদা-ভাইয়ের ‘শীতল’ সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন আছে। জর্জ টেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুতে যখন তথাকথিত ‘দলের’ বৈঠক ডাকা হয় তখন সেই বৈঠকে ভাই অনির্বানকে কেন দেখা যায় না? তাঁকে ডাকা হয় না? নাকি অনির্বান আসেন না? কোনটা? এই ধরনের ‘দলের’ কয়েকটা বৈঠকে কেউ কেউ অনির্বানের কঠোর সমালোচনা করা হয়েছিল। অর্থাৎ দাদার কাছে ভাইয়ের বিরুদ্ধে নালিশ। কোনও এক বৈঠকে (প্রায় তিন মাস আগে) আইএফএ -এর ফিনান্স কমিটির চেয়ারম্যান দিলীপ নারায়ন সাহা সুব্রত দত্তকে বলেছিলেন,জয়ের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠছে তখন ওকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেই তো হয়।” উত্তরে সুব্রতবাবু বলেছিলেন,”জয়কে এখনই ফোন করে এক মিনিটে হাজির করাতে পারি।” সূত্রের খবর, জয়কে কিন্তু ডাকা হয়নি। এমন টুকরো টুকরো ঘটনা আছে যা ময়দানের অনেকেই ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ আশঙ্কা করছেন।

হতে পারে কেউ কেউ হয়তো নিজেদের স্বার্থে ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’ লড়াইটা দেখতে চান। কিন্তু ময়দানের একটা বড় অংশ মনে করছে, এই দত্ত পরিবারের একটা পেডিগ্রি আছে। মত পার্থক্য হলেও হয়তো নিজেদের মধ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি ওঁরা করবেন না, তা ময়দান জানে। তা সত্বেও, হ্যাঁ তা সত্বেও কাদা ছোড়াছুড়ি না হলেও, দুই ভাইয়ের ঠান্ডা লড়াইয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।