সন্দীপ দে
পাঁউরুটির বাটার টোস্ট (চিনি/গোলমরিচ), ঘুগনি, ভেজিটেবল এবং চিকেন স্টু, ফিশফ্রাই, ভেজিটেবল চপ, ডিমের ডেভিল, ফিশ চপ, চা কফি আরও কত কী ৷ উনানের আঁচ নেভে না। সঙ্গে দেখা যেত, বিহার থেকে আসা বহু পুরনো চা বিক্রেতা বা শাক আলু, ছোলা বিক্রেতারা, এ মাঠ থেকে ও মাঠ পৌঁছে যাচ্ছেন।
গত ২১ মার্চের আগে ময়দানে এটাই ছিল পরিচিত দৃশ্য। এখন গেলে কিছুই পাবেন না। প্রায় সাড়ে সাত মাস ধরে কলকাতা ময়দানের সব ক্যান্টিনের ব্যবসা বন্ধ। করোনার থাবা সব কিছুই স্তব্ধ করে দিয়েছে। দু মাস আগে শহরের প্রায় সব কিছুই খুলে গিয়েছে। কিন্তু ময়দানের ওরা এখনও লড়াই করে চলেছেন।
শহর কলকাতার অফিস যাত্রী এবং পথ চলতি মানুষের খাবারের অস্থায়ী ঠিকানা ডেকার্স লেন বা ডালহৌসি পাড়া। একইভাবে ক্রীড়াপ্রেমীদের ঠিকানা ময়দান ক্যান্টিন। করোনার ফলে মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, সিটি ক্লাব, কবাডি অ্যাসোসিয়েশন, জর্জটেলিগ্রাফ, মহমেডান ক্লাব, তালতলা ইনস্টিটিউট, সেন্ট্রাল এক্সাইজ়, সিএবির ক্যান্টিন গুলো ভয়ঙ্কর ক্ষতির সামনে দাঁড়িয়ে।
ময়দানের ক্লাবগুলো খেলোয়াড়দের অনুশীলন থেকে ম্যাচ চলাকালীন খাবার জোগান এই ক্যান্টিনগুলো থেকে হয়ে থাকে। এর সঙ্গে খেলা দেখতে আসা ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ, বিকেলে ক্লাব তাঁবুতে আড্ডায় ভিড় করা মানুষজন এবং ক্লাব কর্তাদের নানা খাবারের দিনভর জোগান এরাই দিয়ে থাকেন। মার্চ মাসের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে ময়দানের খেলা বন্ধ। তারপর থেকেই সব থমকে গিয়েছে।
মোহনবাগান, সিটি ক্লাব এবং রাজ্য কবাডি তাঁবুর ক্যান্টিন চালান পলাশ মুখোপাধ্যায়। ময়দানে পলাশ পরিচিত কাজু নামে। হুগলির মানুষ কাজুর কাছে জানা গেল, সবার ক্যান্টিন বন্ধ থাকার ফলে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। এই ধাক্কা তাঁদের পক্ষে সামলানো কঠিন । যেমন কাজুর তিনটে ক্যান্টিনে (মোহনবাগান,সিটি ও কবাডি তাঁবু) মোট ২৪ জন কাজ করেন । সেই মার্চ থেকে কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিছুদিন হল, কিছু কর্মীকে ডেকে নিয়েছেন। আপাতত ক্যান্টিন খোলা রাখছেন কাজু। খেলা শুরু হলে সবাই আসবেন।
জানা গেল, এমন কিছু ক্যান্টিন আছে, মাঠে খেলা থাকলে সেই সব ক্যান্টিনে দিনে কম করে ২০ হাজার টাকার বিক্রি হত। আইপিএল চলার সময় আরও বেশি বিক্রি হয়। এবার ফুটবল লিগ ও আইপিএল – দুটোয় হল না। ক্ষতির পরিমাণ সত্যিই বেশি।
আনলক হওয়ার পর রেফারি তাঁবু ও খিদিরপুর ক্লাবের এই দুটি ক্যান্টিন চালু হয়েছে পুরোদমে। খরিদ্দার কম। কিন্তু এই দুটি ক্যান্টিন পথ চলতি মানুষদের খরিদ্দার হিসেবে পেয়ে থাকে। সেই ভরসাতেই এই দুই ক্যান্টিন খোলা। বাকি ক্যান্টিনের মালিকদের মধ্যে কেউ খুলেছেন। আবার কেউ এখনও বন্ধ রেখেছেন। যারা ময়দানে চা ও ফল বিক্রি করেন, তাঁরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। তারা এখন ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড, সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ রাস্তায় রাস্তায় ঘুরছেন।
ওরা শুনেছেন, ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ময়দানে শুরু হবে আইএফএ শিল্ড। সেই শিল্ড শুরুর অপেক্ষায় ওরা।
আমরা সবাই চাই, আবার খেলা শুরু হোক। ক্যান্টিন খুলুক। ক্রীড়াপ্রেমীরা মাঠে আসুন, দুরত্ব বজায় রেখে। মাঠ ছাড়ার আগে ক্যান্টিনে কিছু অন্তত কিনুন। তাহলে ময়দানের বেশ কিছু ক্যান্টিন কর্মীর সংসারে একটু হলেও বাঁচার রসদ পৌঁছবে।