◆সন্দীপ দে◆
বাংলা ফুটবল দলের শিবিরে এখন শুধুই “ফিল গুড”-এর হাওয়া। রবিবার (২১নভেম্বর) কল্যাণী স্টেডিয়ামে দুর্বল দল ছত্তিশগড়ের বিরুদ্ধে এবারের সন্তোষ ট্রফি অভিযান শুরু করতে চলেছে বাংলা দল। তার আগে শিবিরের ফুটবলাররা ফুরফুরে মেজাজেই আছেন। তার বড় কারণ, আইএফএ।
প্রাক্তন সচিব উৎপল গাঙ্গুলির জমানায় (১২ বছর) সন্তোষ ট্রফির জন্য নির্বাচিত বাংলার ফুটবলাররা যা পাননি এবার অন্তত বর্তমান সচিব জয়দীপ মুখার্জি সেই সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনি আর যাই করুন না কেন, সন্তোষের জন্য বাংলার ফুটবলারদের সবরকম সুযোগ সুবিধা করে দিয়েছেন। এই কথা স্বীকার করছেন ময়দানের বিভিন্ন ক্লাব কর্তারাও।
উৎপল গাঙ্গুলি জমানার অর্ধেক সময় সন্তোষ ট্রফির নির্বাচিত ফুটবলাররা অনুশীলনের পর ডিম,কলা,পাউরুটি খেয়ে বাড়ি ফিরতেন। পরে দিকে একটু বদল এনে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হত। সেই ভাবে আবাশিক শিবির হত না। সন্তোষ ট্রফি খেলতে যাওয়ার আগে পাঁচদিন বা সাতদিন আবাশিক শিবির হত। ফুটবলারদের জন্য একটা টি-শার্ট বরাদ্দ ছিল খেলতে যাওয়ার আগে। আর টুর্নামেন্ট চলাকালীন প্রত্যেক ফুটবলারকে দিন প্রতি দেওয়া হত মাত্র ৫০০ টাকা।
এবার সন্তোষের বাংলা ফুটবলারদের জন্য ঢালাও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করেছেন সচিব জয়দীপ মুখার্জি। এইবছর প্রায় এক মাস ধরে বাংলার আবাশিক শিবির হয়েছে। উন্নত মানের চার বেলা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে। শিবিরের শুরুতেই নির্বিচত প্রত্যেক ফুটবলারকে কিট ব্যাগ তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্রীড়ামন্ত্রী মাঠে এসে ফুটবলারদের কিট ব্যাগ তুলে দিয়েছেন। শুধু তাই নয় আইএফএ সচিবের চেষ্টায় আর্থিক সাহায্য নিয়ে বাংলা দলের পাশে দাঁড়িয়েছেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাব,মহমেডান স্পোর্টিং ও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু। ইতিমধ্যে ইস্টবেঙ্গল দুই লক্ষ টাকা দিয়েছেন। মহমেডান দিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। আইএফএ-এর সহ সভাপতি পার্থ গাঙ্গুলির “স্বরসতী অনলাইন” ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে। আর মন্ত্রী সুজিত বসু দিয়েছেন এক লক্ষ টাকা। তিনি আরও এক লক্ষ টাকা দেবেন বলে জানিয়েছেন সুজিত বসু। শুধু তাই নয়, নির্বাচিত প্রত্যেক ফুটবলারকে ১০ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন সচিব জয়দীপ। আজ,শনিবার প্রত্যেক ফুটবলারের অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার টাকা করে ঢুকে যাবে। সেই সঙ্গে দল গঠনে বাংলার কোচকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন সচিব জয়দীপ।
বাংলা দলের কিছু ফুটবলার (ফুটবলারদের অনুরোধেই টুর্নামেন্ট শুরুর মুহূর্তে তাঁদের নাম উল্লেখ করা গেল না) “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে বলছিলেন,”বাংলা দলে এত সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়,আগে জানতাম না। যা কখনও ভাবিনি তাই পেয়েছি। জয়দীপ স্যারকে অনেক ধন্যবাদ। এবার মাঠে নেমে আমাদের রিটার্ন দেওয়ার পালা। জয়দীপ স্যারকে সন্তোষ ট্রফি তুলে দিতে মরিয়া চেষ্টা করব।”
এবারের সন্তোষ ট্রফিতে ভাল কিছু করার চেষ্টা করছেন আইএফএ সচিব জয়দীপ মুখার্জি “ইনসাইড স্পোর্টস”কে বলছিলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়,সেটা সবাই জানে। আমরা ক্ষমতার বাইরে গিয়ে যতটা পেরেছি বাংলার ফুটবলারদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা ভেবেছি। শুধু ফুটবলার নয়,বাংলা দলের সাপোর্ট স্টাফও যাতে কোনও সমস্যা না হয় তা আমরা দেখেছি। দল গঠনে কোনও হস্তক্ষেপ করা হয়নি। কোচকে আমরা পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছি। সব রকম সাহায্য আমরা করেছি। এবার রিটার্ন দেওয়ার পালা ফুটবলার,কোচের।”
এখনও পর্যন্ত বাংলা দল নিয়ে ইতিবাচক ও সুষ্ঠু মানসিকতা দেখিয়ে আসছেন আইএফএ সচিব। শুধু দল গঠন নিয়ে বাংলা দলের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্যর কিছু সিদ্ধান্ত “চোনা” পড়ে গিয়েছে। প্রথম, ৩০ জনের দল নির্বাচনের সময় চার ফুটবলারের দলে থাকা নিয়ে ময়দানে প্রশ্ন উঠেছিল। ৩১ অক্টোবর “ইনসাইড স্পোর্টস” তা তুলে ধরেছিল। বিতর্কিত সেই চার ফুটবলারকে দলে রাখার জন্য ব্যাখা দিয়েছিলেন কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। যদিও চূড়ান্ত দলে সেই চার ফুটবলারের মধ্যে তিন ফুটবলারকে দলে জায়গা করে দিতে পারেননি বা রাখেননি। দেরিতে হলেও শেষ মুহূর্তে কোচ রঞ্জন বুঝেছেন।
গত ১২ বছরে বাংলা দলের যে সব কোচেরা কোচিং করিয়েছেন তারা রঞ্জনের মতো এত সুযোগ সুবিধা পাননি। এই প্রসঙ্গ উঠতেই আইএফএ-এর এক প্রভাবশালী কর্তা বলছিলেন (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ),”কোচ যা চেয়েছে, আমরা তাই দিয়েছি। কোথাও কার্পণ্য দেখাইনি। বহু বছর ধরে এমন সুযোগ কোনও কোচ পায়নি। রঞ্জন সব পেয়েছে। দল গঠন নিয়ে যা হয়েছে আমরাও জানি। আপনারা যে ফুটবলারের কথা উল্লেখ করেছিলেন তারা কিন্তু নেই। আমরা কোচকে স্বাধীনতা দিয়েছি। এবার ও বুঝবে। আর আপনাদের কাছেও অনুরোধ এবার সব বিতর্ক ভুলে বাংলা দলের পাশে তোমরাও থাকো।”
আমরা কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্যর প্রতিক্রিয়ার জন্য ফোন করেও তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি। তিনি জর্জ টেলিগ্রাফের কোচ। তাঁর কোচিং কেরিয়ারে সেই ভাবে কোনও সাফল্য নেই। তাঁর ঝুলিতে নেই কোনও স্বীকৃত টুর্নামেন্ট খেতাব। কাজেই এবারের সন্তোষ ট্রফি রঞ্জনের কাছে অ্যাসিড টেস্ট। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,রবিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে দুপুর দুটোয় মুখোমুখি হবে বাংলা-ছত্তিশগড়। বাংলার পরের ম্যাচ ২৫ নভেম্বর, সিকিমের বিরুদ্ধে। এই গ্রুপ থেকে একটি দল সন্তোষ ট্রফির মূল পর্বে যাবে।