◆সন্দীপ দে◆
আসন্ন সন্তোষ ট্রফির জন্য ৩০ জনের দল বেছে নিলেন বাংলার কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। আর তাই নিয়ে বাংলার ফুটবল মহলে অসন্তোষ দানা বেঁধেছে। যদিও অসন্তোষ, সমালোচনায় বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় বাংলা দলের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য। তাঁর সাফ কথা,”কোনও ক্লাবের কথা ভেবে দল নয়। বাংলার কথা ভেবেই সেরা দলই গড়া হচ্ছে।”
চূড়ান্ত ২০ জনের দল গড়ার আগে শিবির থেকে ৩০ জন ফুটবলারকে বেছে নেওয়া হল। আর তাই নিয়েই ময়দানে যত গুঞ্জন। প্রথমত, এবারের ইউনাইটেড স্পোর্টসের হয়ে লিগের অন্যতম প্রতিভাবান অ্যাটাকিং মিডিও তারক হেমব্রমকে আশ্চর্যজনক ভাবে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। যে ফুটবলারটি এবারের কলকাতা লিগে দুটি গোল করেছেন, দু-দুবার সেরা ম্যাচের স্বীকৃতি পেয়েছেন, একবার ইমার্জিং ফুটবলারও হয়েছেন সেই তারক ৩০ জনের দলে নেই! একই সঙ্গে দুই বছর লিগ না খেলা রবি দাস নামে ফুটবলারকে সন্তোষের ৩০ জনের দলে রেখে দেওয়ায় ময়দানে ব্যাপক হাসির খোরাক জুগিয়েছে।
আইএফএ যে ৩০ জন ফুটবলারের তালিকা দিয়েছে সেখানে লেখা আছে রবি দাস ইউনাইটেড স্পোর্টসের অনূর্ধ্ব-২১ দলের ফুটবলার। অথচ রবি ইউনাইটেডে কোনও দিন খেলেননি। তিনি আসলে উয়াড়ীর ফুটবলার। তাও দুই বছর আগে। গত দুই বছরে ক্লাব না পাওয়ায় লিগই খেলতে পারেননি রবি। আমরা রবি দাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ফোনে “ইনসাইড স্পোর্টস”-কে জানান, “আমি কখনও ইউনাইটেডে খেলিনি। ২০১৮-‘১৯ মরসুমে উয়ারীর হয়ে লিগ খেলেছিলাম। চোট পাওয়ার কারণে এই বছর আমি কোনও ক্লাব পাইনি। গতবছর লিগ হয়নি। এই বছর ক্লাব না পাওয়ায় লিগ খেলতে পারিনি। তবে আমার শারীরিক দক্ষতা ঠিক আছে।”
দল গঠনে এমন নমুনা আরও আছে। যেমন, ৩০ জনের দলে সুযোগ পাওয়া ক্যালকাটা কাস্টমসের গোলকিপার সংগ্রামজিৎ রায় চৌধুরী। এবারের লিগে একটা ম্যাচেও জার্সি পাননি। সেই সংগ্রাম বাংলা দলে। ভাবা যায়! তার সঙ্গেও আমরা যোগাযোগ করেছিলাম। সংগ্রামজিৎ স্বীকার করেন,”আমি নিজেকে ফিট রেখেছিলাম। কিন্তু লিগে আমাকে একটা ম্যাচেও খেলানো হয়নি। আমার দুর্ভাগ্য।”
এরিয়ানের দীপ সাহা। মাত্র চারদিন অনুশীলনে এসেই দলে জায়গা করে নিয়েছেন। কেন নিয়মিত বাংলা দলের অনুশীলনে আসেননি? “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর কাছে দীপ সাহার সহজ, হরল স্বীকারোক্তি,” আমাকে প্রথমে ডাকা হয়নি। আমি যতদুর জানি, প্রথমে আমাদের ক্লাবের সাদ্দাম হোসেন, রাকেশ কর্মকার ও ইসরাফিল দিওয়ানকে বাংলা শিবিরে ডাকা হয়। ওদের পছন্দ না হওয়ায় পরে আমাকে ডাকা হয়। তাই রবীন্দ্র সরোবর ও হাওড়ায় বাংলা শিবিরে যোগ দিতে পারিনি। যে চারদিন অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছি তাতে আমার সেরাটাই দিয়েছি।” দলে থাকা নিয়ে মৃদু প্রশ্ন উঠছে পিয়ারলেসের রাজিব সাউকে নিয়েও। এই রাজিব ২০১৫ সাল থেকে টানা পাঁচ বছর জর্জটেলিগ্রাফে খেলেছেন। এই বছর পিয়ারলের সই করেছেন রাজিব।
ইউনাইটেড স্পোর্টসের অন্যতম কর্তা নবাব ভট্টাচার্যর প্রতিক্রিয়া জানতে ফোন করলে তিনি জানান,”এবার আমাদের দশ জন বাংলা শিবিরে ডাক পেয়েছে। পারফরমেন্স দেখেই দল গঠন হলে খুশি হতাম। এখন মনে হচ্ছে আমাদের ক্লাবের এত ফুটবলার ডাক পাওয়ায় ভুল হয়েছে। আর একটা কথা, রবি সাহা বলে যে ফুটবলারটিকে আমাদের ক্লাবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা ঠিক নয়। রবি আমাদের ক্লাবের নয়।আমরা বিষয়টা নজরে আনতে আইএফএকে চিঠি দিচ্ছি।”
যার দল গঠন নিয়ে এত প্রশ্ন উঠছে সেই বাংলা দলের কোচ রঞ্জন ভট্টাচার্য বিতর্ক নিয়ে “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর কাছে মুখ খুলেছেন। তিনি জানান,”তারক হেমব্রমকে আমি ছোট করছি না। তবে এটাও ঠিক যে, তারক এমন কিছু প্রমাণ করেনি যে ওকে নিয়ে এত কথা বলতে হবে। খেয়াল করেছেন কিনা জানিনা, তারক ইউনাইটেডে যত ম্যাচ খেলেছে সব পরিবর্ত হিসেবে মাঠে নেমেছে। ওর উচ্চতা কম। অ্যাটাকটা ভাল। তবে ডিফেন্সটা ভাল নয়। তাই বাদ দিতে হয়েছে। জর্জের গৌতম দাসকেও বাদ দিয়েছি। কারণ আমি মনে করেছি গৌতমের থেকে দিলীপ ভাল।”
তারক ইউনাইটেডের পরিবর্তিত ফুটবলার। আর রবি দাস গত দুই বছর কলকাতা লিগ খেলেননি। এবার তো কোনও ক্লাবই পায়নি। সেই রবি দাস কোন জাদুমন্ত্রে দলে জায়গা পেলেন? রবি কি প্রমাণ করেছৃন?
কোচ রঞ্জনের বক্তব্য,”রবি দুই বছর না খেললেও ট্রায়ালে খুব ভাল খেলেছে। ও ফিট ফুটবলার।” গোলরক্ষক সংগ্রামজিৎ রায় চৌধুরী নিয়ে কোচ রঞ্জনের সাফ কথা,”সংগ্রামজিৎ ট্রায়ালে ভাল পারফর্ম করেছে। তাই দলে রেখেছি। এখনই বলে দিচ্ছি, ভবিষ্যতে এই সংগ্রামজিৎ একদিন আইএসএল ও আই লিগে নক করবে। এরিয়ানের দীপ দাস ও জর্জের মহিতোষ অন্যদের থেকে কোনও অংশে কম নয়।”
কোচ রঞ্জন আরও বলেন,”৩০ জনের মধ্যে আমাকে রাখতে হবে ৮ জন অনূর্ধ্ব -২১ ফুটবলার। ২০ জনের দলে ৫ জন এবং প্রথম একাদশের মধ্যে ৩ জন অনূর্ধ্ব-২১ ফুটবলার। মূলপর্বে সার্ভিসেসের সঙ্গে আমাদের খেলতে হবে। সার্ভিসেসের ফুটবলারদের উচ্চতাকে চ্যালেঞ্জ দেওয়ার মতো তারকের চেহারা বড় নয়।”
আপনি তো এখনও কোয়ালিফাই করেননি। এর মধ্যে আপনি মূলপর্বে সার্ভিসেস-এর ম্যাচ নিয়ে ভাবছেন? “আমাকে ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই দল গড়তে হচ্ছে। সব নাটা ফুটবলার নিয়ে দল করলে তো সমস্যা হবে। সব বিবেচনা করে দল হচ্ছে।” বলেছেন বাংলা কোচ।
দল গঠনের ক্ষেত্রে আপনার উপরে কি কোনও চাপ আসছে? উত্তরে কোচ রঞ্জন বলেন,”আমার উপর কোনও চাপ নেই। স্বাধীন ভাবে দল গড়ছি। মনে রাখবেন, রঞ্জন ভট্টাচার্য কখনও কমপ্রোমাইজ করে না। কোনও ক্লাবের কথা ভেবে দল গড়ি না। বাংলার জন্য সেরা দল গড়ার চেষ্টা করছি। আপনি তারকের কথা বলছেন তো! একদিন আসুন,তারকের মতো দশটা উদাহরণ আমি দিয়ে দেব।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, শনিবার ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস বাংলা দলের শিবিরে গিয়ে ফুটবলারদের হাতে কিট ব্যাগ তুলে দিয়েছেন। অরূপ বিশ্বাস ছাড়াও শিবিরে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ-এর চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত, সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ও সচিব জয়দীপ মুখার্জি। ছিলেন প্রাক্তন ফুটবলার ও স্পটার কৃষ্ণেন্দু রায়, অলোক মুখার্জি এবং প্রশান্তু ব্যানার্জি।