শীর্ষকর্তার আর্শীবাদে স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীর স্বপ্ন পূরণ!

0

◆সন্দীপ দে◆

অবশেষে ত্রিপুরাবাসীর স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীর স্বপ্ন পূরণ! মাত্র সাড়ে চার বছরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে এসে শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের সর্বোচ্চ পদে বসাটা সেই স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীর স্বপ্ন পূরণ তো বটেই। বুধবার, কলকাতার এক পাঁচতারা হোটেলে আনুষ্ঠানিক ভাবে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব সচিব সহ নতুন কমিটি সদস‍্যদের নাম ঘোষণা হয়ে গেল। কল‍্যাণ মজুমদারের জায়গায় সচিব হলেন স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী। প্রণব দাশগুপ্তর জায়গায় সভাপতির পদে এলেন জুপিটার ওয়াগনের চেয়ারম্যান মুরারী লাল লোহিয়া। তবে কল‍্যাণবাবুকে সহসভাপতি এবং প্রণববাবুকে মুখ‍্য পরামর্শদাতা হিসেবে রাখা হয়েছে।

গত চার বছর আগে “ইনসাইড স্পোর্টস” ম‍্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছিল, ত্রিপুরার এই স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীর লক্ষ‍্যই ছিল ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সচিব হওয়া। তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ, ব‍্যাখা করেছিল “ইনসাইড স্পোর্টস।” আর তাই দেখে ইস্টবেঙ্গলের কতিপয় কর্তা (সবাই নয়) এবং চার আনার নকুলদানার মতো কয়েকজন স্বঘোষিত কর্তা “ইনসাইড স্পোর্টস” ও এই প্রতিবেদকের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। আমরা নাকি ‘হলুদ সাংবাদিকতা’ করে সংশ্লিষ্ট স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীকে ও ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে অসম্মান করেছি। সাড়ে চার বছর আগে ইস্টবেঙ্গলের নয়া সচিব কে হতে পারেন “ইনসাইড স্পোর্টস’-এর সেই পূর্বাভাস প্রমাণ আজ হয়ে গেল। যারা আমাদের সমালোচনা করে সোসাল মিডিয়ায় তীব্র আক্রমণ করেছিলেন, যারা ২০১৯ সালেই উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি ও জলপাইগুড়িতে “ইনসাইড স্পোর্টস'” ম‍্যাগাজিনের বিক্রির বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন, আজ, তাঁরা আয়নার সামনে একা দাঁড়িয়ে নিজেকে একবার প্রশ্ন করতে পারেন – কে ঠিক ছিল? আমরা অকারণে কোনও ব‍্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সম্মানহানি করিনি। করতেও চাই না। পরিস্থিতি পর্যলোচনা করে সত‍্যি ঘটনাটা তুলে ধরার চেষ্টা করে গিয়েছি মাত্র।

এই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে জে সি গুহ, নৃপেন দাস, পার্থ সেনগুপ্ত,পল্টু দাস এবং কল‍্যাণ মজুমদারের মতো ব‍্যক্তিত্ব সচিবের চেয়ারে বসেছেন। এবার বসলেন স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী। যিনি সোনার চামচ মুখে নিয়ে বড় হয়েছেন। তাই মাত্র সাড়ে চার বছর কাটতে না কাটতেই জমকালো মুকুট পড়ে সচিবের সিংহাসনে বসলেন। তার জন‍্য অবশ‍্যই ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের শীর্ষ কর্তার আর্শীবাদ পেতে হয়েছে। ময়দানের সবাই জানেন, শীর্ষকর্তার সংকেত ছাড়া ক্লাব তাবুর গাছের একটি পাতাও নড়ে না। কাজেই শীর্ষকর্তার আশীর্বাদেই যে স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীর স্বপ্ন পূরণ হল তাতে কোনও সন্দেহ নেই।

তবুও, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের অন্দরমহলে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অনেক কথা। যেমন, রাজা ওরফে রজত গুহ বহু পুরনো কর্তা। শীর্ষ কর্তার অনেক আগে থেকে পল্টু দাসের সঙ্গে ক্লাব সংগঠনে যুক্ত হয়েছিলেন। তাহলে রাজা গুহ কেন সচিব পদে বসার সুযোগ পাবেন না? তাঁকে মাঠ সচিব হিসেবেই থাকতে হল। শান্তিরঞ্জন দাশগুপ্ত। তিনি সমাজে ডাক্তার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত। ভদ্র মানুষ। বহু বছর ধরে ইস্টবেঙ্গল ক্লাব করছেন। সহসচিব ছিলেন। এবারও সেই সহসচিব পদেই থাকলেন। তিনিও হতে পারতেন সচিব। তার থেকেও বড় কথা হল, নিতু ওরফে দেবব্রত সরকারকে সবাই শীর্ষ কর্তা বলেই মান‍্যতা দেন। আবার ক্লাবেই অনেকেই তাঁকে ‘ক‍্যাপ্টেন’ বলে ডেকে থাকেন। তিনিই যখন ক্লাবের নিউক্লিয়াস তখন শীর্ষকর্তা নিজেই তো সচিব পদে অনায়াসে বসতে পারতেন। কিন্তু তিনি সেই পথে হাঁটেননি। পল্টু দাসের প্রিয় শিষ‍্য দেবব্রত আসলে হতে
চেয়েছেন ‘কিং মেকার।’ আর ‘কিং মেকার’ হয়েওছেন। তিনি নিজেকে ধাপে ধাপে উন্নত করেছেন। আমাদেরও স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, কলকাতার গড়ের মাঠে অন‍্যতম সেরা,দক্ষ ক্লাব কর্তা হলেন দেবব্রত সরকার। তিনি পল্টু দাসকেও ছাপিয়ে গিয়েছেন তাতে কোনও সন্দেহ নেই। মোহনবাগানের দেবাশিস দত্ত আড়াই দশক আগে ক্লাবে এসে নিজেকে ঘষে মেজে তৈরি করেছেন। ধাপে ধাপে নিজেকে এগিয়ে তবে সচিব পদে বসার যোগ‍্যতা অর্জন করতে পেরেছেন। সৃঞ্জয় বসুর মতো দেবাশিসের পিছনে কোনও ‘ব‍্যাক আপ’ ছিল না। লড়াই করে সচিব পদটা অর্জন করতে হয়েছে প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন দেবাশিসকে। তিনিও দক্ষ ক্রীড়া প্রশাসক। স্বীকার করতেই হবে।

ইস্টবেঙ্গলের নয়া সচিব স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী তাহলে কোন অঙ্কে মুকুট পরার সুযোগ পেলেন? তিনি ব‍্যবসায়ী বলে? তাঁর প্রচুর টাকা আছে তাই জন‍্য? ২০১৯ সালে এর কারণ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’ ম‍্যাগাজিনে আমরা বিষদে আলোকপাত করেছি। পাঠকদের নিশ্চয় মনে আছে। নতুন করে বিশ্লেষনে গিয়ে প্রতিবেদন দীর্ঘ করতে চাই না। বিদায়ী সচিব কল‍্যাণ মজুমদার তাঁর ২২ বছরের ইস্টবেঙ্গল জার্নিতে বেশ কিছু ভাল কাজ করে গিয়েছেন। আর ইস্টবেঙ্গলের নয়া সচিব কতটা সফল হবেন তার মূল‍্যায়ন তো নিশ্চয় হবেই। তার জন‍্য অপেক্ষা করতে হবে। উত্তরটা সময় বলবে।

এদিন নতুন কমিটির সদস‍্যদের নাম ঘোষণার পর ইস্টবেঙ্গলের নতুন সচিব,সভাপতিকে নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন ক্লাবের শীর্ষকতা। সাংবাদিকরা যখন নতুন সচিব ও সভাপতিকে প্রশ্ন করতে শুরু করলেন তখন শীর্ষকর্তা মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে বলতে থাকেন ‘প্রশ্নের উত্তর আমি দেব।’ কাগজে কলমে তিনি তো একজন কার্যকরী কমিটির সদস‍্য। এমন একটা দিনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবা দিলেন শীর্ষকর্তা! ভাবা যায়। নতুন সচিব ও সভাপতিকে সাংবাদিক সম্মেলনে কিছু বলার সুযোগই দেওয়া হল না। যেটুকু বলেছেন তা ওই লিখিত বিবৃতিতে।

একটা বাস্তব চিত্রকে মাথায় রেখেই আগাম একটি সম্ভাবনার প্রশ্ন উঠে আসছে। তা হল, এই স্বর্ণ ব‍্যবসায়ীকে ‘রাবার স্টাম্প’ সচিব হয়েই থাকতে হবে না তো? কারণ, নিন্দুকরা নাকি বলে থাকেন, বর্তমানে এই ক্লাবে ‘একটাই পোষ্ট, বাকি সব ল‍্যাম পোষ্ট।’ এদিনের ইস্টবেঙ্গলের সাংবাদিক সম্মেলনের ঘটনার পর নিন্দুকদের অপপ্রচার (প্রচার) আরও জোড়ালো হল।

সচিব হয়ে প্রথম দিনেই স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী বুঝলেন তিনি ‘রাবার স্ট‍্যাম্প।’ অনুষ্ঠান শেষে পাঁচতারা হোটেল থেকে এক সাংবাদিক বন্ধু ফোন করে এই প্রতিবেদককে বলছিলেন,’এ তো রাবার স্ট‍্যাম্প।’ বন্ধুর ওমন কথা শুনে অবাক হতে হয়নি। আমরা দেখে এসেছি,ইস্টবেঙ্গল মোহনবাগানের সচিব পদে যারা বসেছেন তাদের ব‍্যক্তিত্ব ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলের নয়া সচিবকে বুধবার যেভাবে দেখা গেল তা একরকম ব‍্যক্তিত্বহীন। সচিব পদে বসার ক্ষেত্রে চেয়ারে ছড়িয়ে থাকে ‘কাঁটা।’ এখানে ‘কাঁটা’নেই, আছে ‘বাটার।’ স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী সচিবের পূর্ণ ক্ষমতা পেলেন নাকি ক্ষমতাহীন দায়িত্ব পেলেন তা অদুর ভবিষ্যতে আরও পরিস্কার হয়ে যাবে। নতুন জার্নি, নতুন লক্ষ‍্যে থাকা ইস্টবেঙ্গলের নয়া সচিবকে “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর শুভেচ্ছা রইল। আশাকরি স্বর্ণ ব‍্যবসায়ী “ইনসাইড স্পোর্টস”কে ভুল প্রমাণ করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here