◆সন্দীপ দে◆
বাংলার ফুটবল মহলে খুশির খবর। খুব শীঘ্রই শালবনীতে হতে চলেছে রাজ্য মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি। সম্প্রতি মেদিনীপুরে প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই রাজ্য মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি করার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। ওই বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,”শালবনী স্টেডিয়ামটা পড়ে আছে। সেই ভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ওখানে মহিলা ফুটবলারদের অ্যাকাডেমি করা হবে।” সব কিছু ঠিক থাকলে এই বছরেই পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীতে শুরু হয়ে যাবে রাজ্যের মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই অ্যাকাডেমি করার ক্ষেত্রে প্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। শালবনীতে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি করার ক্ষেত্রে অরূপ বিশ্বাস ও অজিত ব্যানার্জির বিরাট ভূমিকা আছে। তাঁরা জেলা অর্থাৎ খেলাধূলার তৃণমূল স্তরকে ভীষণভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। কয়েক বছর থেকেই বাংলার মহিলা ফুটবলের উন্নয়ন নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনা করে এগোচ্ছেন আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি। আর এই পরিকল্পনা যাতে বাস্তবে রূপ পায় তার জন্য ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস সক্রিয়ভাবে এগিয়ে এসেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য,সম্প্রতি অজিত ব্যানার্জি ও অরূপ বিশ্বাস জেলার ফুটবলারদের কলকাতায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। অতীতে কলকাতা লিগে খেলতে আসা জেলার ফুটবলারদের কলকাতায় থাকার সমস্যা হত। এই বছর জেলার ফুটবলারদের থাকার ব্যবস্থা করা হচ্ছে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে।
শুধু তাই নয়,এই পশ্চিমবঙ্গে বেশ কিছু অ্যাকাডেমি তৈরি করার নেপথ্যে আছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। যেমন ঝাড়গ্রামে করা হয়েছে তীরন্দাজ অ্যাকাডেমি। কলকাতার সল্টলেক তৈরি হয়েছে ঝকঝকে টেবল টেনিস অ্যাকাডেমি। খড়দায় যে ‘বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি’ ছিল, তার অবস্থা খুব খারাপ ছিল। তখন প্রাক্তন ফুটবলার গৌতম সরকার দায়িত্বে ছিলেন। তারপরে প্রশান্ত ব্যানার্জি দায়িত্বে থাকলেও অ্যাকাডেমিতে ফুটবলারদের ভাল ট্রেনিং হত না। অরূপ বিশ্বাস ক্রীড়ামন্ত্রী হওয়ার পর তাঁদের সরিয়ে সাইয়ের প্রাক্তন কোচ অনন্ত ঘোষকে দায়িত্ব দেন। এই মুহূর্তে খুব ভাল ভাবেই চলছে বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি। এই অ্যাকাডেমি থেকে দুই ফুটবলার অনূর্ধ্ব-১৭ ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন।
সাঁতার,জিমন্যাস্টিক্স ও ভলিবল সহ আরও বেশ কিছু খেলা নিয়ে পরিকল্পনা করে রেখেছেন ক্রীড়ামন্ত্রী। বাংলার ক্রীড়া জগতকে ঢেলে সাজাতে বদ্ধপরিকর রাজ্য সরকার।
কবে থেকে শুরু হবে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি? কি ভাবে ফুটবলারদের নির্বাচন করা হবে? প্রশ্নের উত্তরে আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানার্জি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-কে জানান,”মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি করার কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন সেটা আপনারা জানেন। কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। খড়দায় যেমন বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি চলে ঠিক সেই ভাবেই মহিলা ফুটবলারদের নিয়ে রেসিডেন্সিয়াল ক্যাম্প হবে। ২২ টা জেলা থেকে ট্রায়াল নেওয়ার পর ফুটবলারদের বাছাই করা হবে। এই প্রকল্পে রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস দারুন ভাবে পাশে আছেন। এই অ্যাকাডেমিটা হলে গ্রামের বহু ফুটবল প্রতিভাকে তুলে আনা যাবে।”
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় রয়াল এয়ার ফোর্সের বিমান ঘাঁটি ছিল এই শালবনীতে। রাজীব গান্ধী প্রাধান মন্ত্রী থাকার সময় এই পরিত্যাক্ত বিমান ঘাঁটিতে নোট মুদ্রণ ছাপাখানা গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেন। বর্তমানে সেটি ভারতীয় নোট উৎপাদনের একটি মুখ্য ছাপাখানা। বেশ কিছু কারখানা শালবনী ব্লকের মধ্যে গড়ে ওঠায় মুলত কৃষি নির্ভর এই গ্রামটি উন্নতির দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এই এলাকায় ক্রীড়া উন্নয়নের জন্য কয়েক বছর আগে স্টেডিয়াম তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। জঙ্গলমহল এলাকা বলে আগের মতো আর মাওবাদীদের সেই দাপট নেই। তাছাড়া সরকার মাওবাদী দমনের জন্য CRPF ও COBRA বাহিনীর প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে এই শালবনীতেই। নিরাপত্তা খতিয়ে দেখেই এবার এখানেই হতে চলেছে মহিলা ফুটবল অ্যাকাডেমি। যা বাংলা ফুটবলের নতুন অধ্যায় শুরু হতে চলেছে।