শনিবার সন্ধ‍্যায় প্রয়াত প্রদ‍্যুৎ দত্ত’র বই “ফুটবলের কাঞ্চনজঙ্ঘা” প্রকাশ

0

◆সন্দীপ দে◆ ৬ ডিসেম্বর

অবশেষে তাঁর আত্মজীবনী বই প্রকাশ হতে চলেছে। আগামীকাল, শনিবার সন্ধ‍্যা ৬ টায় ময়দানের জর্জটেলিগ্রাফ স্পোর্টস ক্লাব তাঁবুতে বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলের কিংবদন্তি ক্রীড়া প্রশাসক প্রয়াত প্র‍দ‍্যুৎ দত্তর আত্মজীবনী “ফুটবলের কাঞ্চনজঙ্ঘা” প্রকাশ করা হবে। উপস্থিত থাকবেন ক্রীড়া জগতের ব‍্যক্তিত্বরা। থাকবেন ময়দানের সকল ক্লাব সহ জেলার কর্তারাও।

মানুষ, ক্রীড়া প্রশাসক হিসেবে কেমন ছিলেন প্রদ‍্যুৎ দত্ত? কেন তাঁকে আইএফএ-এর সফল সচিব বলা হয়? তার হদিশ পেতে ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-এর এই উটকো সাংবাদিকের প্রতিবেদন।

প্রদ‍্যুৎ দত্ত দেখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন, একটা সংস্থাকে কিভাবে চালাতে হয়, সমাজে কিভাবে সংস্থাকে একটা উচ্চতায় নিয়ে যেতে হয় শিখিয়েছিলেন প্রদ‍্যোৎবাবু। তাঁর হাত ধরেই আইএফএ একটা সময় মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে ছিল। সবাই সম্ভ্রম করত রাজ‍্য ফুটবলের নিয়ামক সংস্থাকে। ৩০ বছর হয়ে গেল প্রদ‍্যোৎবাবু নেই। কিন্তু তাঁর কাজ থেকে গিয়েছে। প্রদ‍্যুৎ দত্তর তাঁর অমর কীর্তি গুলির সবটা এই “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর মত ছোট্ট নিউজ পোর্টালে তুলে ধরা সম্ভব নয়। তবে প্র‍দ‍্যোৎবাবুকে শ্রদ্ধা জানিয়ে যতদুর সম্ভব তাঁর কিছু কাজ তুলে ধরার চেষ্টা করা হল।

সাতের দশকে বাংলার ফুটবলকে স্বর্ণযুগ বলা হয়। সেই সময় আইএফএতে কি সব ব‍্যক্তিত্ব ছিলেন। অতূল‍্য ঘোষ, হেমন্ত দে, রঘুনাথ দে, স্নেহাংশু আচার্য, অশোক মিত্র, পঙ্কজ গুপ্ত, এম দত্ত রায় (বেচু), অজিত সেনগুপ্ত, আদিত‍্য কাশ‍্যপ, বিশ্বনাথ দত্ত – তালিকাটা দীর্ঘ। বিশুবাবু যদি আইএফএ-র ভীত শক্ত করে থাকেন, তাহলে তাঁর ভাই প্রদ‍্যুৎবাবু সমাজে আইএফএকে একটা উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিলেন। এমন উদাহরণ একাধিক।

১৯৮৮ সাল। কলকাতার ‘হোটেল হিন্দুস্তান’-এর পাশের বাড়িতে থাকতেন জনৈক জয়ন্ত রায়। তখন সন্ধ‍্যা ছাড়িয়ে রাত। জয়ন্ত রায়ের বাড়ির সামনে পুলিশ বাহিনী। আর সেই বাড়ির বিপরীতে (রাস্তার ওপারে) একটা মারুতি ভ‍্যানে টেনশন নিয়ে বসে আছেন আইএফএ-এর তৎকালীন সচিব প্রদ‍্যোৎ দত্ত। তিনি অপেক্ষা করে বসে আছেন মূখ্যমন্ত্রী জ‍্যোতি বসুর সঙ্গে দেখা করার জন‍্য। শিলিগুড়িতে ভারত বিখ‍্যাত নেহেরু কাপ। কিন্তু ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীর নানান ‘প‍্যাঁচের খেলায়’ নো অবজেকশন লেটার পাননি প্রদ‍্যুবাবু। তিনি জেনে গিয়েছিলেন, সেই রাতে জয়ন্ত রায়ের বাড়ি যাবেন জ‍্যোতি বসু। তাই বাধ‍্য হয়েই তাঁর সঙ্গে দেখা করাটা খুব জরুরি ছিল। উল্লেখ্য, সেদিন রাতে মূখ‍‍্যমন্ত্রী যে বাড়িতে উঠেছিলেন সেই জয়ন্ত রায় ছিলেন জ‍্যোতিবাবুর আত্মীয়। সেই রাতে না পেলেও পরের দিন প্র‍‍দ‍্যুৎ দত্তকে নেহেরু কাপ খেলার ছাড়পত্র দিয়ে দিয়েছিলেন জ‍্যোতি বসু।

আইএফএ-র আপসহীন, ডাকাবুকো সচিব প্রদ‍্যুৎ দত্তর উপর ফুটবল নিয়ে কিছু নিজের সিদ্ধান্ত আইএফএর উপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিলেন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের রোটান্ডায় হওয়া এক মিটিংয়ে মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তীকে মুখের উপর প্রদ‍্যুৎবাবু বলে দিয়েছিলেন, তিনি সবার আগে আইএফএর স্বার্থ দেখবেন। মন্ত্রীর এই দাবি মানতে পারবেন না। তারপর থেকেই সুভাষ চক্রবর্তী -প্রদ‍্যোৎ দত্তর সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়। শিলিগুড়িতে নেহেরু কাপ করতে গিয়ে আইএফএ-র প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়। আর এই ক্ষতি করানোর ক্ষেত্রে নাকি ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী অদৃশ‍্য ‘কালো হাত’ ছিল বলে অভিযোগ। শুধু তাই নয়, অভিযোগ, মন্ত্রী সুভাষের মদতে শিলিগুড়ির সিপিএম পার্টির একটা বড় অংশ আইএফএ-এর প্রতি চূড়ান্ত অসহযোগিতা করেছিল। কয়েকটা ভাল স্পনসর বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। শুধু FEDERATION OF CHEMBERS OF COMMERCE AND INDUSTRY (ফোসিন) থেকে কয়েক লক্ষ টাকা পেয়েছিল আইএফএ। কিন্তু শুরুতেই অর্থাভাব। তবুও প্রদ‍্যোৎবাবুকে দমানো যায়নি। আইএফএ অফিস বন্ধক রেখে শিলিগুড়িতেই নেহেরু কাপ করেছিলেন প্রদ‍্যোৎ দত্ত।

শিলিগুড়ির ফুটবল উন্মাদনা সেই সাতের দশক থেকেই। কিন্ত নেহেরু কাপকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় ফুটবলের মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পেরেছিল শিলিগুড়ি। উত্তরবঙ্গের এই বাণিজ্যিক শহরে ফুটবলের অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা এই প্রদ‍্যুৎ দত্তর। তিনি নেহেরু কাপকে সামনে রেখে শিলিগুড়িতে করেছিলেন আজকের কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম। অতীতে এই স্টেডিয়াম ছিল না। ছিল একটা খোলা মাঠ। নাম ছিল ‘তিলক ময়দান।’ মাঠটা ছিল সেনাবাহিনীর অধিনে। ১৯৭৬-‘৭৭- এর দিকে ঠিক হল, এই তিলক ময়দানে তৈরি হবে স্টেডিয়াম। তৎকালীন ডিফেন্স মিনিস্টার বংশীলালের
অনুমতি পাওয়া গেল। সেই সঙ্গে তৎকালীন মূখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ও অনুমতি দিলেন। স্টেডিয়াম গড়ার জন‍্য তৈরি হল একটি কমিটি। সভাপতি হলেন শিলিগুড়ির ত‍ৎকালিন জেলা শাসক মণীশ গুপ্ত। সচিব কালী ঘোষ। কয়েক বছর পর ১৯৮০ সালে মাঠের একটা অংশে কাঠের গ‍্যালারি করে শুরু হয়েছিল শিলিগুড়ি কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে। পরে ১৯৮৫ সালে মেয়র বিকাশ ঘোষদের সাহায্য নিয়ে প্রদ‍্যোৎ দত্তর উদ‍্যোগে পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম তৈরি হয়। সেটাই ছিল উত্তরবঙ্গে প্রথম এবং শেষ কোনও পূর্ণাঙ্গ স্টেডিয়াম।

ওই সময় নেহেরু কাপের জন‍্য উত্তরবঙ্গের ব‍্যবসায়ী সংগঠন ‘ফোসিন’ – এর কাছ থেকে প্রায় ২১ লক্ষ টাকা নিশ্চিত করেছিলেন প্রদ‍্যোৎবাবু। কিন্তু একদিন ‘উত্তরবঙ্গ’ সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছিল। তাই দেখে ক্রীড়ামন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী তাঁর ডান হাত আশু করকে দিয়ে প্রদ‍্যোৎবাবুর কাছে খবর পাঠালেন, প্রকাশিত খবরের প্রেক্ষিতে তিনি যেন একটা রিজয়েন্ডার দেন। “আমি কিছুই বলিনি” -এই কথা বলতে হবে। না হলে সমস‍্যা হবে। সেই দিন ‘উত্তরবঙ্গ সংবাদ’-এর সেই সাংবাদিক প্রদ‍্যুৎবাবুর সঙ্গে ব‍্যক্তিগত সম্পর্কের খাতিরে আলোচনায় কিছু কথা বলেছিলেন। কিন্তু লেখার জন‍্য প্রদ‍্যুৎবাবু বলেননি। কিন্তু সেই সাংবাদিক প্রতিবেদনটি লিখে দিয়েছিলেন। সুভাষ চক্রবর্তীর ‘রিজয়ন্ডার’-এর নির্দেশের খবর পৌঁছে গিয়েছিল সেই সাংবাদিকের কাছে। তিনি খবর পেয়ে প্রদ‍্যুৎবাবুর কাছে ছুটে এসে বলেছিলেন,তিনি রিজয়েন্ডার দিলে তাঁর চাকরিটাই চলে যাবে। সেই ক্রীড়া সাংবাদিককে অভয় দিয়ে বলেছিলেন,”চিন্তা করো না। মন দিয়ে কাজ করো যাও।”

না, প্রদ‍্যোৎবাবু রিজয়েন্ডার দেননি। সাংবাদিকটির চাকরিও যায়নি। কিন্তু যেটা হয়েছিল, “ফোসিন” -এর একটা বড় অঙ্কের স্পনসরটা আটকে গিয়েছিল। শেষে আইএফএ অফিসটাকে ইউনাইটেড ব‍্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখে নেহেরু কাপ করেছিলেন প্রদ‍্যুৎ দত্ত। পরবর্তীকালে আইএফএ সভাপতি জাস্টিস অজিত সেনগুপ্তর সাহায্য নিয়ে ব‍্যাঙ্কের ইন্টারেস্ট মুকুব করে আইএফএ অফিস বন্ধক মুক্ত হয়।

আইএফএর স্বর্ণযুগ কার সময়? এই বিতর্ক উঠলে দাদা বিশ্বনাথ দত্তর আগে ভাই প্রদ‍্যুৎ দত্তর নামটাই আগে উঠে আসে। আইএফএ থেকে সিএবি, বিসিসিআই চলে গিয়েছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত। ক্রিকেটেও তিনি সফল। সিএবিতে নবজাগরণ এনেছিলেন বিশ্বনাথ দত্ত।
আর আইএফএ সচিব পদে বসে প্রদ‍্যোৎ দত্ত বাংলার ফুটবলে নবজাগরন এনেছিলেন। কি কি করেছিলেন তিনি?
১) তিনিই প্রথম ফুটবলে স্পনসর এনেছিলেন (চার্মস,ফিলিপস,লাইফবয়)। এই চার্মস কোম্পানি প্রদ‍্যুৎবাবু আনতে পেরেছিলেন মমতা ব‍্যানার্জির জন‍্যই। উল্লেখ্য, মমতা ব‍্যানার্জি প্রদ‍্যুৎবাবুকে দাদার মতো ভীষন শ্রদ্ধা করতেন।

২) প্রথম ফুটবল অ‍্যাকাডেমি শুরু করেছিলেন। হাওড়া ইউনিয়নের সাহায্যে ও পিয়ারলেসের পৃষ্ঠপোষকতায়। আইএফএ-র প্রথম অ‍্যাকাডেমমি শুরু হয়েছিল। পরে এই অ‍্যাকাডেমিকে সুব্রত দত্ত হলদিয়ায় নিয়ে গিয়েছিলেন।

৩) সব ক্লাবকে সমান অধিকার তিনিই দিয়েছিলেন।

৪) লিগের ম‍্যাচে মাঠে অ‍্যাম্বুলেন্স, ওয়াকিটকি ও জলের ব‍্যাবস্থা করা হয়।

৫) দলবদলে প্রথম টোকেন সিস্টেম তিনিই চালু করেন।

৬) ময়দানে অনেক ছোট ক্লাব ছিল যাদের ড্রেস করার জায়গা ছিল না। বিভিন্ন ক্লাব তাঁবুতে সেই সব ছোট ক্লাবের ড্রেস করার ব‍্যবস্থা করেছিলেন।

৭) প্রথম মহিলা ফুটবল,নার্সারি এবং সাবডিভিশন ফুটবল শুরু করেছিলেন।

৮) বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে গিয়ে সবুজ বাঁচাও আন্দোলন করে (মমতা ব‍্যানার্জি সহ সমাজের সকল স্তরের মানুষকে পাশে নিয়ে) রবীন্দ্র সরোবরকে বাঁচিয়ে ছিলেন।

৯) তাঁর জীবনের সেরা সাফল‍্য শিলিগুড়িতে কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম করে নেহেরু কাপ করা।

প্রদ‍্যুৎ দত্ত ছিলেন দাপুটে সচিব। মহমেডান স্পোর্টিংয়ের মতো টিমকে সাসপেন্ড করতে ভয় পাননি। দোর্দন্ডপ্রতাপ মীর মহম্মদ ওমরকেও শাসনে রেখেছিলেন। ওই সময় মহমেডানকে নির্বাসনে পাঠানো নিয়ে তুমুল বিতর্ক বাংলার ফুটবলে। তাঁর এমন সিদ্ধান্ত দেখে তৎকালীন মুখ‍্যমন্ত্রী জ‍্যোতি বসু একদিন প্রদ‍্যোৎবাবুকে বাড়িতে ডেকে বিষয়টা জানতে চেয়েছিলেন। শুনে জ‍্যোতিবাবু বলেন,”সবই বুঝলাম। ওরা অন‍্যায় করেছে। কিন্তু প্রচুর চাপ আসবে। মিস্টার দত্ত, আপনার সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে পারবেন?”
উত্তরে সেদিন প্রদ‍্যোৎবাবু বলেছিলেন, “স‍্যার, আপনার আশীর্বাদ থাকলে নিজের সিদ্ধান্তে অবিচল থাকতে পারবো।” কথাটি শুনে, কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে জ‍্যোতিবাবু বলেছিলেন,”গো অ‍্যাহেড”। তাঁদের এই কথোপকথনের সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন প্রদ‍্যুৎবাবুর ভাগ্নে দীপু বাবু। তাঁর মৃত‍্যুর এক বছর আগে দীপুবাবু একান্ত আলাপচারিতায় ‘ইনসাইড স্পোর্টস”কে ঘটনাটি বলছিলেন। এমন সব অপ্রকাশিত ঘটনা তাঁর আত্মজীবনী “ফুটবলের ক্রীড়াঙ্গন”-এ তুলে ধরা হয়েছে।

ক্রীড়া প্রশাসক হয়েও তিনি স্পোর্টস ম‍্যাগাজিন শুরু করেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন “খেলার কথা”। প্রদ‍্যুৎবাবু স্পোর্টস ম‍্যাগাজিনে তখন কাজ করতেন “আজকাল”-এর বর্তমান সম্পাদক অশোক দাশগুপ্ত, সরোজ চক্রবর্তী, রতন ভট্টাচার্য,বিপ্লব দাশগুপ্ত, নীরব রায়, মনোজিৎ চন্দরা। আটাত্তর সালে “খেলার কথা” সার্কুলেশন ছিল ৩৫ হাজার। ভাবা যায় না। আসলে প্রদ‍্যুৎবাবু যে কাজ করত, মন দিয়ে, একটা লক্ষ‍্য নিয়ে করতেন। আর যাদের দিয়ে কাজ করাতেন তাঁদের বিশ্বাস করতেন এবং কাজের স্বাধীনতা দিতেন প্রদ‍্যুৎবাবু।

কত ঘটনা আছে। লিখে শেষ করা যাবে না। এমন ডাকাবুকো আইএফএ সচিব আর বাংলা পাবে কিনা সন্দেহ আছে। তিনি কখনও রিপোর্টার ধরে নিজের ও আইএফএ-র প্রচার পাওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি কাজে বিশ্বাস করতেন। ১৬ নভেম্বর ১৯৯৪ সাল। রাত ১০ টা। সেই শীতের রাতে কলকাতা বিমানবন্দরের বাইরে হাজার হাজার মানুষ। কারও মুখে কোনও কথা নেই। দিল্লি থেকে নিয়ে আসা হচ্ছিল ৫৪ বছরের দীর্ঘকায় প্রদ‍্যুৎ দত্তর মরদেহ। তাঁর নিথর দেহটা বিমান বন্দরের বাইরে আনা হতেই, বিমানবন্দরের বাইরে অপেক্ষারত মানুষ হাউহাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আছড়ে পড়েছিলেন প্রদ‍্যুৎবাবুর নিথর দেহটির উপর। উচ্চশিক্ষিত, বিচক্ষন, আপসহীন, দোর্দ‍্যন্ডপ্রতাপ এবং চূড়ান্ত সফল আইএফএ সচিব প্রদ‍্যুৎ দত্তর মরদেহ দেখে দিশাহীন হয়ে পড়েছিলেন বাংলার ক্রীড়াপ্রেমিরা।
পরের দিন সকালে প্রদ‍্যুৎবাবুর মরদেহ নিয়ে মহানগরে যে মিছিল বেড়িয়েছিল তা নজির বিহীন। শুধু ক্রীড়া জগত নয়, সব মহলের মানুষ সেদিন পথে নেমেছিলেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। বাংলার ফুটবল সেদিন সুযোগ‍্য অবিভাবককে হারিয়েছিল। আজও তা টের পাওয়া যায়। আজ আইএফএ-এর কঠিন সময়ে সবার এগিয়ে আসা উচিত। একই সঙ্গে “ইনসাইড স্পোর্টস”-এর আবেদন, নতুন করে প্রদ‍্যুৎ দত্তর মূল‍্যায়ন শুরু হোক।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here