ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : গত বছর রায়গঞ্জের ঐতিহ্যবাহী কুলদাকান্ত শিল্ডে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল (কলকাতা লিগে অংশ নেওয়া ইস্টবেঙ্গল দল)। এই বছরও সেই কুলদাকান্তের শিল্ডে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু উত্তর দিনাজপুরের এই টুর্নামেন্টে শুরুতেই হেরে গেল। আর হারতে হল রায়গঞ্জের স্থানীয় বিধায়ক কৃষ্ণকল্যাণীর দল ‘কল্যাণী নেচার পিওর’-এর কাছে। আজ, রবিবার রায়গঞ্জের টাউন ক্লাবের মাঠেকল্যাণীর কাছে টাইব্রেকারে হেরে কুলদাকান্ত শিল্ড থেকে ছিটকে গেল ইমামি ইস্টবেঙ্গল।
৯১তম কুলদাকান্ত শিল্ডের সরাসরি সেমিফাইনাল থেকে শুর করেছিল ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু সেই শিল্ডের শেষ চারের লড়াই টপকাতে ব্যর্থ হল লাল-হলুদ ব্রিগেড। ম্যাচের প্রথমার্ধের গোলশূন্য থাকলেও দ্বিতীয়ার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় ইস্টবেঙ্গল। কিন্তু ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে গোল করে সমতায় ফেরে কল্যাণী নেচার পিওর। ট্রাইব্রেকার হারতে হল। গত বছর এই ইস্টবেঙ্গলের খেলা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন রায়গঞ্জের ফুটবল প্রেমিরা। কিন্ত ইস্টবেঙ্গলের এদিনের খেলা দেখে ওঁরা হতাশ। প্রসঙ্গত, জেলায় কলকাতার কোনও ফুটবল দল খেলতে এলে তাঁরা ভাল ফুটবল দেখার আশায় মাঠে ভিড় জমান। কিন্তু এই বছর জেলাবাসীদের মন ভরল না। দুই দিন আগেই এই কুলদাকান্ত শিল্ড থেকে প্রথম ম্যাচেই হেরে বিদায় নিয়েছে কলকাতা লিগের পুলিশ অ্যাথলেটিক ক্লাব। আর এদিন হেরে শিল্ড থেকেই ছিটকে গেল ইস্টবেঙ্গল। কার্যত হতাশ রায়গঞ্জবাসী।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জে খেলাধূলার চর্চা মূলত শুরুই হয়েছিল করোনেশন স্কুলের জন্যই। জানা যায়, স্বাধীনতার আগে করোনেশন স্কুলের শারীর শিক্ষক অরুণ চন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে সংগঠিতভাবে বিভিন্ন খেলার চর্চা শুরু হয়। আরও জানা যায়, একশো বছর আগে রায়গঞ্জের শ্মশান সংলগ্ন মাঠে ফুটবল খেলা শুরু হয়। পরবর্তীকালে একটা সময় প্রখ্যাত ফুটবলার সামাদ সাহেবও এই মাঠে ফুটবল খেলে গিয়েছেন। সেই সময় এই মাঠেই হত বিখ্যাত ‘সাহা ব্রাদার্স শিল্ড’। পরে যদিও বন্ধ হয়ে যায়। এই রায়গঞ্জে বেশ কয়েক বছর কাটিয়ে গিয়েছেন প্রাক্তন ফুটবলার প্রয়াত সুভাষ ভৌমিক।
করোনেশন স্কুলের পর এই ছোট্ট শহরের খেলাধূলার পরিচালনায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করে রায়গঞ্জ টাউন ক্লাব। এই ক্লাবটির প্রতিষ্ঠা হয় ১৯২৮ সালে। পরবর্তীকালে ১৯৩৯ সালে কয়েকটি সংগঠন মিলে তৈরি হয় রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউট। পরে এই রায়গঞ্জ ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত হয় টাউন ক্লাব। ১৯৩২-‘৩৩ সাল নাগাদ শুরু হয় কুলদাকান্ত শিল্ড। ১৯৩৯ সালের আগে পযর্ন্ত এই কুলদাকান্ত শিল্ড পরিচালনা করতকরোনেশন স্কুল। তখন এক মাস ধরে এই টুর্নামেন্ট হত। টাউন ক্লাবের সচিব অরিজিৎ ঘোষ ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলছিলেন, “আমরা সাতের দশকে এই টুর্নামেন্টের জনপ্রিয়তা দেখেছি। উৎসব চলত। মাঝখানে নানান সমস্যার জন্য টুর্নামেন্টটি বন্ধ ছিল। ২০১৪ সাল থেকে আবার শুরু করতে পেরেছি। হয়তো সেই সাতের দশকের মতো বড় করে পরিচালনা করতে পারি না। তবে যেভাবে করা হয় তাতে মাঠে প্রত্যেকদিন প্রচুর মানুষের ভিড় হয়। ভবিষ্যতে টুর্নামেন্টের পুরনো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। তারজন্য সবার সাহায্য চাই। গত বছর ইস্টবেঙ্গল চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আমাদের জেলার ফুটবল প্রেমিদের প্রত্যাশা বেড়ে গিয়েছিল। আজ মাঠে প্রচুর দর্শকও হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল হেরে যাওয়ায় বহু দর্শক হতাশ। কিছু করার নেই। এটা খেলার অঙ্গ। দর্শকরা যেভাবে মাঠে আসছে, আমরা খুশি। আশাকরি দ্বিতীয় সেমিফাইনাল ও ফাইনাল ম্যাচ ঘিরেও দশর্কদের উন্মাদনা থাকবে।”