◆কল্যাণ চৌবে◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন,৮ সেপ্টেম্বর : ভারতীয় ফুটবলের সামগ্রিক উন্নতি করতে হলে কোন দিকটায় তিনি বেশি জোর দিতে চান? রাজ্য না জাতীয় স্তর? অল ইন্ডিয়া ফেডারেশনের নবনিযুক্ত সভাপতি কল্যাণ চৌবের কাছে প্রশ্নটা করতেই তিনি বলে উঠলেন, “ভারতীয় ফুটবলের সামগ্রিক উন্নতি করতে হলে একটা দিক গুরুত্ব দিলে হবে না। রাজ্যের সঙ্গে জাতীয় স্তরকেও সমান ভাবে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। তা নাহলে ভারতীয় ফুটবল এগোবে না।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ, বৃহস্পতিবার মধ্য কলকাতার এক পাঁচ তারা হোটেলে সরকারিভাবে এই প্রথম সাংবাদিক সম্মেলন করলেন এআইএফএফের নতুন সভাপতি কল্যাণ। সচিব সাজি প্রভাকরণ, সহসচিব সুনন্দ ধর এবং এক্সিকিউটিভ মেম্বার ওড়িষার প্রতিনিধি অভিজিৎ মন্ডলকে পাশে নিয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার একটা ইঙ্গিত দেওয়ার চেষ্টা করলেন কল্যাণ। তিনি আগেই জানিয়েছেন, ফুটবলের রোড ম্যাপ কি হবে তার জন্য কল্যাণ ১০০ দিন সময় নিয়েছেন। তবু নানান প্রশ্নর উত্তর দিতে গিয়ে ভারতীয় ফুটবল পরিকল্পনা নিয়ে সভাপতি কল্যাণ আপাতত যা ইঙ্গিত দিলেন তা এই রকম –
(১) দেশের বয়স ভিত্তিক বেশ কয়েকটা টুর্নামেন্ট বন্ধ হয়ে গেছে তা আবার শুরু করা। ফেডারেশন কাপটা এখন সুপার কাপে বদলে গেছে। সেই গুরুত্বও নেই। ফেডারেশন কাপকেও ফেরাতে উদ্যোগী হচ্ছেন।
(২) সন্তোষ ট্রফিকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ভারতীয় ফুটলের প্রধান প্লাটফর্ম হচ্ছে সন্তোষ ট্রফি। নতুন করে সন্তোষ ট্রফিকে ফিরিয়ে আনতে বদ্ধপরিকর এআইএফএফ।
(৩) খুব শীঘ্রই রেফারিদের একটা অ্যাকাডেমি করা হবে।
(৪) ফুটবল উন্নয়নের জন্য ফিফা যে টাকা দেয় সেই অনুদান বেশিরভাগ রাজ্য ফুটবল সংস্থা পায় না। এবার থেকে সকল রাজ্য সংস্থার কোনও প্রজেক্ট খতিয়ে দেখে কিস্তিতে অনুদান দেওয়া হবে। তার জন্য প্রতিটি রাজ্য সংস্থার সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে নেওয়া হবে।
(৫) শুধু বিদেশি কোচরাই কাজের সুযোগ পাবেন এবার সেটা হবে না। যোগ্য দেশীয় কোচেরাও কাজ করার সুযোগ পাবেন।
(৬) ফুটবলের উন্নয়নের জন্য প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে চান এআইএফএফ সভাপতি। তার জন্য এই ১০০ দিনে সকল মুখ্যমন্ত্রীর কাছে দেখা করার জন্য আবেদন করবেন।
(৭) দেশের স্কুল ফুটবলকে বেশি করে গুরুত্ব দিতে চান কল্যাণ। তিনি তথ্য দিয়ে জানালেন,ভারতে প্রায় ১৬ ল লক্ষ স্কুল আছে। ছাত্রের সংখ্যা প্রায় ২৫ কোটি। দেশের ফুটবলের ভিত শক্তিশালী করতে হলে স্কুল ফুটবলে জোর দিতে হবে বেশি। কল্যাণ সেই লক্ষ্যেই এগোচ্ছেন।
(৮) এবার ‘অর্জুন’ ও ‘পদ্মশ্রী’র জন্য বাংলার দুই প্রাক্তন ফুটবলারের নাম সুপারিশ করবে এআইএফএফ।
(৯) ক্রীড়া সাংবদিকদের সমালোচনাকে স্বাগত জানিয়েছেন। পাশাপাশি ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্য সাংবাদিকরাও এআইএফএফকে পরামর্শ দিতে পারেন। তারজন্য ইতিমধ্যে আলাদা মেল আইডি ক্রিয়েট করে দেওয়া হয়েছে।
(১০) টেকনিক্যাল কমিটিই কোচ নির্বাচন করবেন। এই কমিটির সদস্যদের পূর্ণ স্বাধিনতা দেওয়া হয়েছে।
(১১) এআইএফএফে স্বচ্ছতার উপর জোর দেওয়া হবে। কোনও রকম দূর্নীতি চলবে না।
এদিন প্রশ্ন উঠে আসে, আইএসএলে না আছে প্রোমোশন,না আছে ডিমোশন। এই লিগ ভারতীয় ফুটবলকে শেষ করে দিচ্ছে। ফেডারেশনের নতুন কমিটির আইএসএল নিয়ে কি ভূমিকা থাকবে? উত্তরে কল্যাণ চৌবে জানালেন,”২০২৪ পযর্ন্ত ওদের সঙ্গে সরকারি ভাবে চুক্তি আছে। এই মুহূর্তে কিছুই করা যাবে না। চুক্তি শেষ হলে কি কি সংযোজন করা যায় তা নিয়ে এই কমিটি অবশ্যই গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করবে।”
এদিন আইএফএ-এর ভূয়সী প্রশংসা করে কল্যান বলেন,” আমি সভাপতি হওয়ার পরের দিন দিল্লিতে গিয়ে আইএফএ সচিব আমাকে অভিনন্দন জানিয়ে এসেছেন। আইএফএ সভাপতিও ছিলেন। আমার খুব ভাল লেগেছে। যে কোনও রাজ্য সংস্থার সঙ্গে ফেডারেশনের এই সম্পর্কটা থাকলেই ফুটবলের উন্নয়ন সম্ভব। আজও আমাদের এই সাংবাদিক সম্মেলনে আইএফএকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। আইএফএ সভাপতি অজিত ব্যানর্জি, চেয়ারম্যান সুব্রত দত্ত এসেছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাই।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত গত দুই দিন ধরে শারীরিক ভাবে অসুস্থ তাই এদিন তিনি ফেডারেশনের আমন্ত্রণ পেয়েও আসতে পারেননি।
কদিন আগে ‘দাফা নিউজ’ স্পনসর নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। দেখা গেল এদিনের এআইএফএফের সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠানের ডায়াসের পিছনে একাধিক লোগোর সঙ্গে ‘দাফা নিউজ’-এর লোগোও ছিল। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে এআইএফএফ সভাপতি কল্যাণ চৌবে পরিস্কার জানিয়ে দিলেন, “আইএসএলের মার্কেটিং টিম স্পনসর এনে থাকে। সব কিছু নিয়ম মেনেই হয়েছে। কোনও আইন বিরুদ্ধ কাজ হয়নি”