◆সন্দীপ দে◆
এবারের কলকাতা লিগের প্রিমিয়ার ডিভিশনের প্রতি ম্যাচে IFA ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর পুরস্কার মূল্য দিচ্ছে ২ হাজার টাকা। এই পুরস্কার মূল্য এত কম টাকার হওয়ায় ময়দানে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এমন ঘটনায় গুঞ্জন শুরু বাগানেও। তবে নিজেদের প্রতি ম্যাচে, ম্যান অফ দ্য ম্যাচকে ১০ হাজার টাকা দেওয়ার ভাবনা চিন্তা শুরু করেছেন মোহনবাগান কর্তারা।
এই বিষয়ে রবিবার সন্ধ্যায় ক্লাব তাঁবুতে বসে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন,”আমরা চিন্তাভাবনা করছি যাতে আমাদের ম্যাচের দিন ম্যান অফ দ্য ম্যাচকে ১০ হাজার টাকা দেওয়া যায়। এখনও চূড়ান্ত কিছু হয়নি। আমাদের কমিটি মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এমনটা হলে আপনারাই ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচন করবেন? উত্তরে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন,”একদমই নয়। আইএফএ যেমন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ নির্বাচন করছে, তারাই করবে। আইএফএ দুই হাজার টাকা দিচ্ছে দিক। ক্লাবের তরফে আমরা দশ হাজার টাকা দেওয়ার ভাবনা করছি। তাতে যদি আমাদের দলের ফুটবলার না হয়ে প্রতিপক্ষ দলের কোনও ফুটবলার ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হয়, তাহলে সেই ফুটবলার দশ হাজার টাকা পাবে। তবে আবার বলছি, বিষয়টা কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি। আলোচনা চলছে। কমিটি মেম্বারদের সঙ্গে কথা বলেই সব ঠিক হবে।”
হঠাৎ কি এমন হল যে, মোহনবাগান ক্লাবকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের জন্য আলাদা দশ হাজার টাকার পুরস্কার নিয়ে ভাবতে হচ্ছে? ভাবনাটা অবশ্য সঙ্গতই। রবিবার মোহনবাগান-ডালহৌসি ম্যাচের শেষে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস যখন ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার দিতে যাচ্ছেন তখন মাঠের ফেন্সিংয়ের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কিছু সমর্থক টিপ্পনি কাটতে থাকেন। টুটু বসু তখন ফেন্সিংয়ের ভিতরে বসেছিলেন। এত কম টাকার ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার নিয়ে অবশ্য প্রিমিয়ারের শুরুতেই ময়দানে গুঞ্জন চলছে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছর পযর্ন্ত কলকাতা লিগে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার মূল্য ছিল ৫ হাজার টাকা। হঠাৎ কমিয়ে কেন ২ হাজার টাকা করা হল? এই বিষয়ে IFA সচিব অনির্বান দত্তর প্রতিক্রিয়া জানতে গেলে তিনি ‘ইনসাইড স্পোর্টস’কে বলেন,”প্রথমত গত বছর এত ম্যাচই ছিল না। এবছর প্রিমিয়ার ‘এ’ ও ‘বি’ মিলে যাওয়ায় ম্যাচের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৯৯টি। আমরা সুপার সিক্স থেকে ম্যান অফ দ্য ম্যাচের পুরস্কার মূল্য ৫ হাজার টাকা ঠিক করেছি। ম্যান অফ দ্য ম্যাচের জন্য ইতিমধ্যে পদক তৈরির কাজের অর্ডার দেওয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই সেই পদকও দেওয়া শুরু হবে। আমি মনে করি ম্যান অফ দ্য ম্যাচের জন্য যে টাকাটা আমরা দিচ্ছি সেটা হল একটা ম্যাচে ফুটবলারদের উৎসাহিত করার জন্য ভাল খেলার স্বীকৃতি। এটা ফুটবলারের উপার্জন কখনই তা ভাববেন না। আমাদের প্রতি ম্যাচে পাঁচ হাজার টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই ভাববেন না। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না, আইএফএ-এর কোটি কোটি টাকা দেনা আছে। তারমধ্যেই সুষ্ঠুভাবে লিগ করতে হবে, ফুটবলারদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথাও আমাদের ভাবতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের দেনার টাকাটাও আস্তে আস্তে মেটাতে হবে। সব কিছুই ভারসাম্য রেখে,বাস্তবের মাটিতে পা রেখেই আমাদের এগোতে হবে। কাজেই সামর্থ্য অনুযায়ী আমরা সাধ্যমত করার চেষ্টা করছি।”
মোহনবাগান সচিব বলেছেন, তারাও দশ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা ভাবছেন। বিষয়টা কি ভাবে দেখছেন? জবাবে অনির্বান দত্ত বলেন,”খুব ভাল উদ্যোগ। বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে তিন প্রধানের বিরাট অবদান আছে। বহুবার অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। এই যে আমি আসার আগে, ২০২১ সালে সন্তোষ ট্রফিতে দল পাঠানোর জন্য আইএফএকে আর্থিক সাহায্য করেছিল মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গল এবং মহমেডান। বাংলার কথা তিন প্রধান ভেবেছিল বলেই তো পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। এটাই তো হওয়া উচিত। গত বছর যখন DTDC কে স্পনসর হিসেবে পাশে পেয়েছিলাম তখন সেই স্পনসরের টাকাতেই বাংলা সন্তোষ ট্রফি খেলতে গেছে। ম্যান অফ দ্য ম্যাচের জন্য মোহনবাগানের দশ হাজার টাকা দেওয়ার ভাবনাকে আমি সাধুবাদ জানাচ্ছি। তারা যদি সমস্ত ম্যাচেই এই টাকা দেয় তাহলে আরও ভাল। মোহনবাগান সচিবের এই ভাবনা চিন্তার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”