ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : বাগানে ফিরে এল উন্মাদনা। দুই বছর পর। মোহনবাগান দিবস উপলক্ষ্যে আজ,শুক্রবার মোহনবাগানে জনজোয়ার। উৎসবে মাতলেন সবুজ-মেরুন সদস্য-সমর্থকরা। গত দু’বছর অনুষ্ঠান করে মোহনবাগান দিবস করা যায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই এবার এই অনুষ্ঠান ঘিরে উন্মাদনা চোখে পড়ার মত। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হল মোহনবাগান দিবস।
এই মোহনবাগান দিবস অনুষ্ঠানে মূল আকর্ষণ ‘মোহনবাগান রত্ন’। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় প্রখ্যাত ফুটবলার শ্যাম থাপার হাতে ‘মোহনবাগান রত্ন’ তুলে দিলেন মোহনবাগান ক্লাবের সচিব দেবাশিস দত্ত। ১৯১১ সালের ২৯ জুলাইয়ের শিল্ড জয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে ‘মোহনবাগান রত্ন’ পাওয়ার পর আবেগাপ্লুত শ্যাম থাপা।
শ্যাম থাপা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমার কাছে মোহনবাগান রত্ন সম্মান বিরাট সম্মান। এর থেকে বেশি কোনও সম্মান হয় না। সাত বছর আমি মোহনবাগানে খেলেছি। ২২ নম্বর জার্সি পরে খেলতাম। ভাল লাগছে, ২০২২ সালেই আমি এই স্বীকৃতি পেলাম। ১৯৭৮ সালের গোলটাই আমাকে ভারতীয় ফুটবলে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আমার সঙ্গে যারা খেলেছেন, তাঁদের সহযোগিতা ছাড়া আমি শ্যাম থাপা হতে পারতাম না। আজকের দিনটা আমার কাছে বিশেষ একটা দিন।
এই বিশেষ সম্মান পেয়ে আমি অভিভূত।’
এদিন মোহনবাগানে প্রথম বছরই সেরা ফুটবলারের পুরস্কার পেয়ে উচ্ছ্বসিত লিস্টন কোলাসো। লিস্টন বলেন, ‘মোহনবাগানে এসেই এই স্বীকৃতি পেয়ে দারুণ লাগছে। এই সম্মান ভবিষ্যতে আরও উৎসাহিত করবে। নিজেকে উজাড় করে দিতে আরও সাহায্য করবে। এত সমর্থক দেখে খুবই ভাল লাগছে। আমরা সমসময় সাপোর্টারদের সামনে খেলতে চাই।’
এদিন ‘মোহনবাগান রত্ন’ পুরস্কারের পাশাপাশি সেরা অ্যাথলিটের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয় বাপি শেখকে। সুভাষ ভৌমিক নামাঙ্কিত সেরা ফরোয়ার্ডের স্বীকৃতি পেলেন আইএসএলে হ্যাটট্রিক বয় কিয়ান নাসিরি। অঞ্জন মিত্র নামাঙ্কিত সেরা সংগঠকের পুরস্কার পান গোকুলাম কেরলের ডিরেক্টর ভিসি প্রবীণ। সেরা ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে মোতি নন্দী পুরস্কার পান অশোক দাশগুপ্ত। অসুস্থতার জন্য অশোক দাশগুপ্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারেননি। সেরা ক্রিকেটার হন পিনাং দত্ত। নিজের নামাঙ্কিত পুরস্কার সেরা ক্রিকেটারের হাতে তুলে দেন খোদ অরুণ লাল। সেরা ফুটবলারের শিবদাস ভাদুড়ী পুরস্কার পান লিস্টন কোলাসো। লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড পান বলয় দে।
এদিন বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি মোহনবাগানের কাছে অনুরোধ করে বলেন, “মোহনবাগানকে কলকাতা লিগ খেলার জন্য অনুরোধ করব। ময়দানের ফুটবলটা শেষ করে দেবেন না। আমরা ছোটবেলায় র্যাম্পার্টে বসে খেলা দেখেছি। কোথায় কারা আইএসএলে খেলছে কেউ জানে না। সবাই ঠিক মতন খোঁজখবরও রাখে না। কলকাতা ফুটবলকে বাঁচিয়ে রাখতে ময়দানে খেলা ফিরিয়ে আনতে হবে। তাই কলকাতা লিগটা খেলুন।”
মোহনবাগান দিবস উপলক্ষ্যে প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে একটি প্রদশর্ণী ম্যাচ খেলা হয়। এক ছাদের তলায় তারকার সমাহার। কে নেই! রাজনৈতিক মহল থেকে ক্রীড়াক্ষেত্র, সব মিলে মিশে একাকার। মোহনবাগান দিবসে উপস্থিত ছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, শিশু ও নারী কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা, দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু, সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায়, ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ, বিধায়ক দেবাশিস কুমার। সপরিবারে ছিলেন ‘মোহনবাগান রত্ন’ শ্যাম থাপা। প্রাক্তনদের মধ্যে হাজির ছিলেন মানস ভট্টাচার্য, প্রদীপ চৌধুরী,,অমিত ভদ্র, শিশির ঘোষ, মনোজিৎ দাস,নিমাই গোস্বামী প্রমুখ। অমর একাদশের শিবদাস ভাদুড়ী, বিজয়দাস ভাদুড়ী, অভিলাশ ঘোষ, নীলমাধব ভট্টাচার্য, হীরালাল মুখার্জিদের পরিবারের সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও ছিলেন অরুণ লাল, সোমা বিশ্বাস, অভিষেক ডালমিয়ারা। হাজির ছিলেন আইএফএর সভাপতি অজিত ব্যানার্জি, সচিব অনির্বাণ দত্ত সহ দুই সহ-সভাপতি। পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও হয়। সঙ্গীত পরিবেশন করেন পৌশালী ব্যানার্জি ও চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ড। তবে এই অনুষ্ঠানের মাঝেও গ্যালারিতে বেশ কিছু মোহনবাগান সদস্য-সমর্থকদের ‘রিমুভ এটিকে’ স্লোগান দিতে দেখা যায়।