◆সন্দীপ দে◆
শুধু ডার্বি ম্যাচ ইস্যু নিয়েই নয়,মোহনবাগান ও IFA-এর সংঘাতটা শুরু হয়েছে কয়েক মাস আগে থেকেই। ছাই চাপা আগুনের মতো এতদিন ধিকধিক করে জ্বলছিল। এবার ডার্বি ম্যাচকে কেন্দ্র করে এই সংঘাত প্রকাশ্যে এসে গিয়েছে। কে ঠিক আর আর কে বেঠিক তাই নিয়ে ময়দানে চলছে বিশ্লেষন। গত তিন দিন ধরে মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত IFA সচিব অনির্বানের মুন্ডপাত করে চলেছেন। দেবাশিস প্রয়াত সচিব অঞ্জন মিত্রকে কোট করে মোহনবাগান বাংলা ছেড়ে ঝাড়খন্ডে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন। পাশাপাশি সচিব হিসেবে অনির্বানের দায়বদ্ধতা নিয়েই তুলেছেনে একাধিক প্রশ্ন। মোহনবাগান সচিবের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন IFA সচিব অনির্বান দত্ত। আর সেটাই তুলে ধরছে “ইনসাইড স্পোর্টস।”
প্রশ্নঃ সম্প্রতি ময়দানে আপনাদের বাগযুদ্ধের লড়াই দেখে চিত্র পরিচালক অঞ্জন দত্তর “দত্ত ভার্সেস দত্ত” ছবির নামটা মনে পড়ছে।
অনির্বান দত্তঃ সেটা আপনাদের ভাবনা। আপনারা মনে করছেন। আমি মনে করি না। এখানে ব্যক্তিগত লড়াইয়ের জায়গা নেই।
প্রশ্নঃ একটা ম্যাচকে কেন্দ্র করে এমন তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি হবে আপনি ভেবেছিলেন?
অনির্বান দত্তঃ লিগটা তো সুন্দর শুরু হয়েছিল। একটা ম্যাচের জন্য আটকে গিয়েছিল। যেটা ঘটেছে বা ঘটছে সেটা ঠিক নয়। কিন্তু আমি IFA এর সচিবের চেয়ারে বসে তো আর শুধু একটা ক্লাবের কথা ভাববো না। ৩০০ টি ক্লাব নিয়ে আইএফএ। সবার কথা আমাকে ভাবতে হবে।
প্রশ্নঃ বৃহস্পতিবার মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত বাংলা থেকে মোহনবাগান ঝাড়খন্ডে চলে যাওয়ার কথা বলেছিলেন। শুক্রবার কর্মসমিতির সভায় সেই বিষয়টাও তুলেছেন। সভার শেষে দেবাশিস সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবি করেছেন,কর্ম সমিতির সবাই নাকি একমত হয়েছেন যে,IFA-এর সঙ্গে আর কোনও সদ্ভাব রাখার প্রয়োজন নেই। আর বাংলা ছাড়ার ব্যাপারটাও তারা সিরিয়াসলি ভাবনা চিন্তা শুরু করে দিয়েছেন।
অনির্বান দত্তঃ তাঁদের কর্ম সমিতির সভায় কি হয়েছে সেই নিয়ে আমি কি বলব? তাঁরা তো আলোচনা করতেই পারেন।
প্রশ্নঃ আপনি নাকি বলেছেন,মোহনবাগান বাংলা ছেড়ে চলে যাক। এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন দেবাশিস দত্ত। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, আইএফএ কি সেটা আপনি জানেন না।
অনির্বান দত্তঃ মোহনবাগান বাংলা ছেড়ে চলে যাক – এই কথাটা আমি কখনই বলিনি। আমার এই বিবৃতি আপনি দেখাতে পারবেন? বৃহস্পতিবার আপনারাই আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, দেবাশিস দত্ত বলেছেন, মোহনবাগান বাংলা ছেড়ে ঝাড়খন্ডে চলে যেতে চায়ছে। আমি তখন বলেছিলাম,যদি তারা যেতে চায় যাবে। আমার বক্তব্যর ভুল ব্যাখ্যা করছেন। মিস কোট করা হচ্ছে।
প্রশ্নঃ আপনার অসহযোগিতার কারণ দেখিয়ে মোহনবাগান ঝাড়খন্ড চলে যেতে চায়ছে। দেবাশিস দত্ত সেটাই পরিস্কার করে বোঝাতে চেয়েছেন। আপনি কি বলবেন?
আনির্বান দত্তঃ দেখুন, বাংলা তথা ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগান হল অভিন্ন অংশ। কিন্তু তাঁরা যদি মনে করে অ্যাসোসিয়েশন তাদের নির্দেশ মতো চলবে তাহলে ভুল ভাবছেন। এই সিস্টেম মেনে নেব না। প্রায় ৩০০ টি ক্লাব আইএফএ-এর অ্যাফিলিয়েটেড ইউনিট। তাদের নিয়েই তো আইএফএ। শুধু একটি ক্লাবের স্বার্থ দেখতে পারব না। সচিব হয়ে আমাকে সব ক্লাবের স্বার্থ দেখতে হবে। সেই জায়গায় কেউ আঘাত হানলে আমি তো মেনে নেব না। আমি পক্ষপাতিত্ব করতে পারব না।
প্রশ্নঃ মোহনবাগান যদি না খেলে তাহলে সামনের বছর লিগ জমবে?
অনির্বান দত্তঃ গত বছর মোহনবাগান লিগ খেলেনি। তার আগের বছরও লিগ খেলেনি। লিগ হয় নি? হয়েছে তো।
প্রশ্নঃ মোহনবাগানের দাবি ছিল ৩০ তারিখের ম্যাচ টা পিছিয়ে পরে করতে। রাজি হলেন না কেন?
অনির্বান দত্তঃ রাজি হওয়া সম্ভব নয়। একটা ম্যাচের জন্য লিগটা শেষ করতে পারছিলাম না। ওরা বলছে এক মাস পর ম্যাচটা করতে। এটা সম্ভব? লিগের ব্রডকাস্টাররা প্রচন্ড বিরক্ত। ভুলে গেলে চলবে না,ব্রডকাস্টারদের টাকাতেই লিগটা চলছে। এমন করলে তো ভবিষ্যতে কোন ব্রডকাস্টার,স্পনসর কেউই এগিয়ে আসবে না। তার দায় কে নেবে?
প্রশ্নঃ আপনি আগেও তো মোহনবাগানের অনুরোধ শুনেছেন।
অনির্বান দত্তঃ হ্যা, শুনেছি। ওরা বেশ কয়েকবার বলেছিলেন ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। আমরা সেটা সাধ্যমত করেছি। এখন যদি আমাদের কথা না ভেবে যদি ওরা নিজেদের স্বার্থটাই বেশি করে দেখে, ম্যাচ পিছনোর ব্যাপারে গোঁ ধরে থাকেন তাহলে কি করে হবে? আপনি বলুন তো, পৃথিবীর কোথাও কোন টুর্নামেন্ট বা লিগ হয়, যেখানে দলের পছন্দ মতো ম্যাচ হয়? এর পর যদি আমাদের বিভিন্ন ডিভিশনের সব ক্লাবগুলি নিজেদের পছন্দ মতো তারিখে ম্যাচ খেলতে চায় তাহলে তো লিগ করাই যাবে না।
প্রশ্নঃ ডার্বি ম্যাচ নিয়ে মোহনবাগান আপনাকে চিঠি দিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে বসতে চেয়েছিলেন। আপনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইস্টবেঙ্গল কর্তা দেবব্রত সরকার আপনাকে ফোন করে আলোচনায় বসার অনুরোধ করেছিলেন। দেবব্রত সরকারের কথাও শোনেননি।
অনির্বান দত্তঃ দেবব্রত সরকার ফোন করেছিলেন একথা সত্যি। তাঁকে বুঝিয়েছিলাম। আমাদের ডার্বি ম্যাচের সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল। তখন আর কোনও বৈঠক করার মানে হয় না।
প্রশ্নঃ কি প্রস্তুতি নিয়েছিলেন? ডার্বি ম্যাচের টিকিটই তো আপনারা ছাপেননি?
অনির্বান দত্তঃ ঠিকই বলছেন। আমরা টিকিট ছাপিনি। ম্যাচটা ওপেন টু অল করে দিয়েছিলাম। কারণ, ম্যাচটার গুরুত্ব ছিল না। আর বড় কারণ হল, ৩০ তারিখ ম্যাচ না খেলা নিয়ে মোহনবাগান পরিস্থিতিটাই অনিশ্চিত করে দিয়েছিল। এখন টিকিট ছাপার পর দর্শকরা মাঠে এলেন। অথচ খেলা হল না। তখন তো সেই টিকিটের মূল্য ফেরত দিতে হবে। এতবড় ঝুঁকি নিতে চাইনি।
প্রশ্নঃ মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব দলের লিগ ম্যাচ আগেই শেষ করে দিয়েছেন। এই নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে।
অনির্বান দত্তঃ দেখুন, লিগের শুরুতে ইস্টবেঙ্গল বলেছিল তারা রিজার্ভ টিম খেলাবে। আর মোহনবাগান বলেছিল লিগের জন্য জুনিয়র টিম নামাবে। তাদের দলের ডেভেলপমেন্টের জন্য। সাপ্লাই লাইনের জন্য। আর মহমেডান কিন্তু পূর্ণ শক্তির টিম নামিয়ছিল। ওই টিমটাই আই লিগে খেলছে। মহমেডান অনুরোধ করেছিল আই লিগ শুরুর আগেই যেন তাদের লিগের ম্যাচ শেষ করে দেওয়া হয়। এবার আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হলে মহমেডান আইএসএলে খেলবে। এই সুযোগটা আমি দেবো না!
প্রশ্নঃ দেবাশিস দত্তর অভিযোগ, লিগ চলাকালীন ইস্টবেঙ্গল অন্য টুর্নামেন্ট খেলেছে। অথচ গভর্নিং বডির অনুমতি নেয়নি। IFA-এর সংবিধানের ৩৩ নম্বর ধারা উল্লেখ করে এই অভিযোগ করেছেন দেবাশিস।
অনির্বান দত্তঃ প্রথম উনি যে ৩৩ নম্বর ধারার কথা বলেছেন সেটা ভুল ব্যাখ্যা করেছেন। ওটা ম্যাচ পরিচালনার কথা বলা আছে। যে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে সেটা ৩২ নম্বর ধারায় আছে। এবং লিগ চলাকালীন কোনও ম্যাচ খেলতে গেলে গভর্নিং বডির সভার অনুমতি প্রয়োজন সেইরকম উল্লেখ নেই। অ্যাসোসিয়েশনের অনুমতির প্রয়োজন বলা আছে। এই ক্ষেত্রে অ্যাসোসিয়েশনের সচিব অনুমতি দিতে পারে। একটা ব্যাপার ভাবুন, অ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ৩০০ টি ক্লাব আছে। প্রত্যেকটা ক্লাব যদি টুর্নামেন্ট খেলতে যায় তাহলে ৩০০ টি গভর্নিং বডির সভা ডাকতে হবে? এটা বাস্তবে সম্ভব?
প্রশ্নঃ দেবাশিস দত্তকে এড়িয়ে যাচ্ছেন কেন? কয়েক মাস আগে আপনি বলেছিলে, ফুটবল নিয়ে কথা বলবেন শুধু বিনয় চোপ সঙ্গে। কেন? দেবাশিস বাবু তো তারপর থেকে আরও ক্ষেপে গিয়েছেন। তিনিও তো গভর্নিং বডির সদস্য?
অনির্বান দত্তঃ মোহনবাগান সুপার জায়েন্টর পক্ষ থেকে আমাদের চিঠি পাঠিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, ফুটবল সংক্রান্ত নিয়ে যাবতীয় কমিউনিকেট করবেন বিনয় চোপড়া। তাই আমরা বিনয় বাবুর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করে চলি। এতে আমাদের তো কিছু করার নেই।