◆সন্দীপ দে◆
১০ মাস হয়ে গেল তিনি মোহনবাগান ক্লাবের সচিব পদে এসেছেন। নিজের নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে চলেছেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত। মোহনবাগানের একজন সাধারণ সদস্য থেকে সচিবের মসনদে পৌঁছে গিয়েছেন তিনি। প্রায় তিন দশকে মোহনবাগানে সদস্য, কনভেনর, ম্যানেজার, অর্থ সচিব থেকে ক্লাবের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পদ সচিব হয়েছেন ধাপে ধাপে। কতটা কঠিন ছিল তাঁর সেই উত্তরণের পথ? তিনি কি সরকারের সমর্থনেই সচিব হয়েছেন? রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে ‘ঘর’ করতে কোনও সমস্যা হচ্ছে? হঠাৎ কেন বসু পরিবার সরে গেল? ময়দানের ‘বীরু-জয়’ (পড়ুন দেবাশিস-সৃঞ্জয়) জুটি ভেঙে গেল কেন? সমর্থকদের ‘এটিকে রিমুভ’ আন্দোলনের ঢেউ সামলাতে পারবেন? কলকাতা লিগে না খেলাটা কি ঐতিহাসিক ভুল? পরপর দুই বছর লিগে অংশ না নেওয়ায় শাস্তি পেতে চলেছে মোহনবাগান? শাস্তি হলে কি পদক্ষেপ করবেন তিনি? সোমবার আইএফএ শৃঙ্খলারক্ষা কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে। তাহলে কি বড় ধরনের শাস্তি পেতে চলেছে মোহনবাগান? ‘ইনসাইড স্পোর্টস’-র এক ঝাঁক প্রশ্নর খোলামেলা উত্তর দিলেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত।
প্রশ্নঃ প্রায় তিন দশক আগে আপনি মোহনবাগান ক্লাবের একজন সাধারণ সদস্য ছিলেন। মাঠে বসে দলের অনুশীলন দেখতেন। সেই জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ সচিব পদে এলেন। আপনার এই জার্নিটা কতটা কঠিন ছিল? মোহনবাগানের সচিব হবেন তা কোনও দিন ভাবতে পেরেছিলেন?
দেবাশিস দত্তঃ সবার আগে আমি একজন মোহনবাগান ক্লাবের সমর্থক,সদস্য। এটা আমার কাছে ভীষনই গর্বের বিষয়। এই গর্ব সারা জীবন থাকবে। ২০০৫ সাল থেকে অর্থ সচিব পদ সামলেছি। তার আগে কনভেনর,ম্যানেজার ছিলাম। সত্যি কথা বলতে কী,সচিব হব কোনও দিন ভাবিনি। আসলে সেই লক্ষ্যটাই আমার ছিল না। ক্লাবকে ভালবেসে মোহনবাগানে এসেছিলাম। মোহনবাগান আমার কাছে একটা প্যাশন।
প্রশ্নঃ এই জায়গাটায় পৌঁছতে তো অনেক স্যাক্রিফাইস করতে হয়েছে?
দেবাশিস দত্তঃ কিসের সাক্রিফাইস? এটা যারা বলেন তারা ভুল বলেন। আমি ক্লাবে সময় দিয়েছি ভাল লেগেছে বলে। পরিবারে একটু কম সময় দিয়েছি। বেশি সময় দিয়েছি মোহনবাগান ক্লাবে। তাতে আমি আনন্দ পেয়েছি। মানসিক শান্তি পেয়েছি। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে নিজেকে তৈরি করার ক্ষেত্রে মোহনবাগান ক্লাবের বিরাট অবদান আছে। কাল আমি সচিব নাও থাকতে পারি কিন্তু মোহনবাগানকে ভালবেসে যাব আর পাঁচটা সাধারণ সদস্য-সমর্থকদের মতোই।
প্রশ্নঃ এই ১০ মাসে সচিব হিসেবে নিজের কাজে আপনি কতটা সন্তুষ্ট?
দেবাশিস দত্তঃ অবশ্যই সন্তুষ্ট। যা যা পরিকল্পনা করেছিলাম সবটাই প্রায় করে ফেলতে পারছি। অসম্পূর্ণ ক্লাব তাঁবুর কাজ শেষ করা গিয়েছে। স্পোর্টস লাইব্রেরি হচ্ছে, আধুনিক জিম হচ্ছে। প্রয়াত চুনী গোস্বামী নামাঙ্কিত গেট হচ্ছে। স্পোর্টস অ্যাকাডেমি হচ্ছে। হকি টিম ফিরে আসছে। ক্লাবের সঙ্গে ক্রিকেটারদের সঙ্গে লিগাল চুক্তি করা হতেছে,যা আগে এই ব্যবস্থা ছিল না। ক্লাবের পরিকাঠামোয় আমূল পরিবর্তন এসে গিয়েছে।
প্রশ্নঃ সচিব হিসেবে তো এই দশ মাসে বাজিমাত করে দিয়েছেন।
দেবাশিস দত্তঃ একটা কথা জেনে রাখবেন, ক্লাবে বা কোনও অ্যাসোসিয়েশনে কারও একার পক্ষে কিছু করা অসম্ভব। টুটুদার হাত ধরে ক্লাবে এসেছিলাম। পরে অঞ্জনদার সঙ্গে আমার সখ্যতা বেশি হয়েছিল। ওঁদের কাজ থেকে কাজ শিখেছি। গজুদা,বীরুদার কাছ থেকেও শিখেছি। আমরা কমিটির সবাই এক হয়ে কাজ করছি। কুনালদা,বাবুন,সন্দীপন, উত্তম,অসিতদা সবাই একটা টিম হিসেবে কাজ করছি।
প্রশ্নঃ সচিব হওয়ার ক্ষেত্রে আপনার জার্নিটা কতটা কঠিন ছিল?
দেবাশিস দত্তঃ টুম্পাই (সৃঞ্জয় বসুর ডাক নাম) সরে যাওয়ার পর সচিব হওয়ার জন্য আমার কাছে প্রস্তাব দেন ক্লাবেরই বেশ কিছু কর্তা। সচিবের কাজ আমার কাছে নতুন নয়। টুটুদা-অঞ্জনদা ও টুম্পাইয়ের সময় কিন্তু ক্লাবের সব কাজই আমি করতাম। কাজেই সচিবের কাজটা আমার কাছে নতুন নয়। সচিব শব্দটা আমার নামের সঙ্গে ট্যাগ হয়েছে মাত্র। পরিবর্তন বলতে সচিব হওয়ার পর আমার কিছু শত্রু বেড়ে গিয়েছে। যারা আমার বন্ধু ছিল তারা আমাকে এখন শত্রু ভাবে।
প্রশ্নঃ শত্রু ভাবছে কেন? তারা তো আপনার বন্ধু ছিল বলছেন!
দেবাশিস দত্তঃ ময়দানে সবাই জানে অন্যায়ের সঙ্গে আমি কখনও সমঝোতা করি না। আমি স্পষ্ট কথা বলে ফেলি। মুখের উপর সত্যি কথাটা বলে দিই। এভাবে কথা বলতে অনেকে নিষেধ করেন। আমি পারি না। আমি মনে করি, ক্লাবটা রাজনীতি করার জায়গা নয়। দলাদলি তো সব জায়গায় আছে। থাকবেও। কিন্তু শত্রুতাটা এমন পর্যায়ে না পৌঁছয় যাতে ক্লাবের ক্ষতি হোক। মতান্তর হোক, মনান্তর হোক চাই না।
প্রশ্নঃ একটা সময় বাবুন ওরফে স্বপন ব্যানার্জি স্লোগান তুলেছিলেন,”দেবাশিস দত্ত হটাও, মোহনবাগান বাঁচাও।” কিন্তু কোন জাদুবলে সেই স্বপন ব্যানার্জিকে আপনার প্যানেলে ঢুকিয়ে নিলেন?
প্রশ্নঃ বাবুনের মনটা খুব ভাল। ও ওপর থেকে সব দেখে। বাবুনকে ভুল বোঝানো হয়েছিল। ক্লাবে যারা জায়গা পাচ্ছিল না তারা এসব করে আসছিল। প্র্যাকটিক্যালি, তারা আজ হারিয়ে গিয়েছে। বাবুনকে সবাই বুঝিয়েছিল,ও যেটা করছিল সেটা ভুল। পরে ও ভুল বুঝেছে। বাবুনের সঙ্গে আমার এখন খুব ভাল সম্পর্ক।
প্রশ্নঃ আপনার বিরুদ্ধে নিন্দুকদের একটা অভিযোগ আছে। সেটা হল, ইস্টবেঙ্গলের দেবব্রত সরকার যেমন অজিত ব্যানার্জিকে ধরে রেখে ক্লাবে বহাল তবিয়তে টিকে আছেন। তেমনি আপনি নাকি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সমর্থন নিয়ে মোহনবাগান ক্লাবের সচিব পদে বসেছেন? অর্থাৎ সরকারের সমর্থন আপনি পেয়েছেন। এটা কি সত্যি?
দেবাশিস দত্তঃ আপনার এই প্রশ্নর উত্তর দেওয়ার আগে ইতিহাসে ফিরে যেতে চাই। পরে মিলিয়ে নেবেন। ধীরেন দের যথেষ্ট রাজনৈতিক ক্ষমতা ছিল। ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল ধীরেন দে-র। তাঁর জমানায় যতীন চক্রবর্তী ক্লাবে এসে বসে থাকতেন। ভূপেন দের সঙ্গে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বিধান চন্দ্র রায়ের সঙ্গে দারুন সখ্যতা ছিল। ‘দে’জ’ মেডিকেল প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিধানবাবুর বড় ভূমিকা ছিল। সেই সূত্র থেকেই মোহনবাগানের সঙ্গে বিধানবাবুর খুব ভাল সম্পর্ক ছিল।
এবার আসুন টুটু বসুর কথায়। তিনি একটা সময় জ্যোতি বসুর কাছের মানুষ ছিলেন। অঞ্জন মিত্র ছিলেন বিমান বসু,অনিল বিশ্বাসের কাছের লোক। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে অঞ্জনদার অবাধ যাতায়াত ছিল। পল্টু দাস বরাবরই সৌমেন মিত্রর ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আজ পল্টুদা, পল্টু দাস হয়েছেন সৌমেন মিত্রর জন্য। আমার পরিস্কার বক্তব্য হল, মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গলের মতো ক্লাব চালাতে গেলে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। তাদের সঙ্গে লড়াই করে ক্লাব চালানো যায় না। ময়দানের অতীত কাল থেকে এভাবেই চলে আসছে।
প্রশ্নঃ তার মানে কি ধরে নেব,আপনি রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সাহায্য নিয়েই সচিব হয়েছেন?
দেবাশিস দত্তঃ এই প্রশ্ন উঠছে কেন? টুটুদা, টুম্পাই এমপি ছিল। তখন তো মোহনবাগানের ওরা সভাপতি, সচিব ছিল। তার মানে মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছেন বলেই ক্লাব চালিয়েছে। তারা তো তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিল। তখন তো কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। তাহলে আমার ক্ষেত্রে এই প্রশ্ন উঠছে কেন? আমি কোনওদিন সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করিনি। কিন্তু সবার সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক ছিল,আছে। অনেকেই আগে তা জানত না। এখন জেনে প্রশ্ন তুলছে। আমাকে ক্লাব চালাতে হলে সরকারের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে চলতে হবে। সহজ ব্যাপার। এখন অনেকেই নিতুদাকে দোষ দিয়ে বলছে,ষষ্ঠীদাকে (অজিত ব্যানার্জি) ধরে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পৌঁছে গিয়েছে। তাহলে পল্টুদার সময় কেন এই প্রশ্ন তোলা হয়নি? দেখুন ভাই, সবাই সবাইকে সাপোর্ট দিয়ে এসেছে। আমরা এখন সুসম্পর্ক রাখছি বলে অন্যায় করে ফেলেছি?
প্রশ্নঃ আপনি এমন একটা সময় সচিব হলেন যখন মোহনবাগান ক্লাবে একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি। আপনার কাজ করতে সমস্যা হয় না?
দেবাশিস দত্তঃ না, সমস্যা হয় না। আমাদের দেশের খেলাধূলার জগতের দিকে লক্ষ্য করুন। যেমন, বাংলায় আইএফএ, বিওএ, বক্সিং,হকিসহ একাধিক সংস্থায় টিএমসির লোক আছে। আবার দিল্লিতে দেখুন আইওএ সহ একাধিক সংস্থায় বিজেপির লোক আছে। এই কালচারটা গত পাঁচ-সাত বছর হল এসেছে। আগে কংগ্রেসের সময় প্রিয়দা এআইএফএফে ছিলেন। বিজেপি,টিএমসি,সিপিএম, কংগ্রেস – আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, যারা আসছে তাদের কতটা যোগ্যতা আছে। কতটা সময় দিতে পারবে। সংস্থাকে কতটা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। এই যোগ্যতা থাকলে পার্টির লোক হলে সমস্যা কোথায়?
প্রশ্নঃ ময়দান বদলে গেছে। একাধিক ক্লাবে,অ্যাসোসিয়েশনে এখন রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ভিড়। তাদের অতি সক্রিয়তা ময়দানের পরিবেশ আগের মতো যে নেই সেটা আপনি মানবেন?
দেবাশিস দত্তঃ মানি। সমাজ তার নিজের গতিতে চলবে। নদী এপার ভাঙে, ওপার ভাঙে। এভাবেই নদী এগিয়ে যায়। ময়দানকে যদি নদী ভাবেন, সেই গতিকে নিয়ন্ত্রণ করবে। দেখুন ভাই,শুধু খেলাধূলার জগত কেন, নাটক, সিনেমা সবেতেই রাজনৈতিক ব্যক্তিরা এসেছেন। সর্বত্র। সব সময় খারাপ তা কিন্তু নয়। এর ভাল দিকও আছে। সমাজই তো নিয়ে আসছে। আমি, আপনি আটকাতে পারব না। যদি আবার কখনও নিজের গতিতে অন্যদিকে ঘোরে তখন ঘুরবে।
প্রশ্নঃ এই মূহুর্তে সমর্থকদের ‘এটিকে রিমুভ’ আন্দোলন, অন্যদিকে রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি? সচিব হিসেবে কোনটা আপনার কাছে চাপের বিষয়?
দেবাশিস দত্তঃ রাজনৈতিক প্রশ্নের উত্তর আগেই দিয়েছি। সুসম্পর্ক থাকলে কাজের কোন চাপ নেই। আর এটিকে রিমুভ ব্যাপারটা আমিও চাই। আমি, টুম্পাই আগেও চেষ্টা করেছি। এখনও চেষ্টা করে চলেছি। আশাকরি এটিকে নামটা সরে যাবে। তবে একটু তো সময় লাগবেই। আর চাপের কথা বলছেন। মোহনবাগান,ইস্টবেঙ্গলে চাপ থাকবে না, এটা হতে পারে না। চাপ থাকবেই। ১৯৯৭ সাল থেকে এই চাপ নিয়ে আসছি। এর মধ্যেই কাজ করতে হবে।
প্রশ্নঃ একটা সময় ময়দানে দেবাশিস দত্ত ও সৃঞ্জয় বসুকে ‘বীরু-জয়’ জুটি বলা হত। সেই জুটি ভেঙে গেল। কারণটা বলা যাবে?
দেবাশিস দত্তঃ (একটু ভেবে নিয়ে বললেন) ক্লাব থেকে সরে যাওয়ার ক্ষেত্রে টুম্পাইয়ের ব্যক্তিগত কারণ ছিল। ক্লাব চালানোর ক্ষেত্রে যে জুটির কথা বলছেন সেটা হয়তো নেই। তবে ব্যক্তিগত সম্পর্ক আগের মতোই আছে। সময়ে সময়ে কখনও সখনও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়। টুটুদা-অঞ্জনদা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিলেন। কেউ ভাবতে পেরেছিল? ভবিষ্যতে হয়তো আবার আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে দেখাও যেতে পারে।
প্রশ্নঃ কলকাতা লিগ না খেলাটা কি আপনাদের ঐতিহাসিক ভুল?
দেবাশিস দত্তঃ কোনও ঐতিহাসিক ভুল করিনি। এটা কলকাতা লিগ হচ্ছে? একটা দল ১২-১৪ টা ম্যাচ খেলে এক নম্বরে থাকল। আর অন্য একটা ক্লাব তিনটে ম্যাচ খেলে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল। হাস্যকর ব্যাপার। ছোট ছোট ক্লাবগুলো কত কষ্ট করে টাকা জোগার করে দল গড়ে লিগ খেলে। ফুটবলাররা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে লড়াই করে গেল। অথচ তার দাম পেল না। এটা লিগ? আপনি আমাকে একটা প্লেয়ারের নাম বলুন, গত পাঁচ বছরে কলকাতা লিগ খেলে আইএসএলে স্টারের মর্যাদা পেয়েছে। আমরা বলেছিলাম অনূর্ধ্ব-২৩ লিগ করতে। করেনি।
প্রশ্নঃ আইএফএ সব সময় চেয়েছে তিন প্রধান সিনিয়র দল নিয়ে লিগ খেলুক।
দেবাশিস দত্তঃ কি হবে খেলে? ছোট দল গুলি ১২-১৪টা ম্যাচ খেলবে। আমরা তিনটি ম্যাচ খেলে চ্যাম্পিয়ন হব? এতে ফুটবলের উন্নতি হবে?
প্রশ্নঃ আপনারা আইএসএলে না খেললে অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে লিগ করার পরামর্শ দিতেন?
দেবাশিস দত্তঃ অবশ্যই দিতাম। ফুটবলার তুলে আনতে হলে এটাই করতে হবে। শুধু কলকাতা কেন্দ্রিক লিগ কেন হবে। পরিস্থিতি বদলেছে। কেন এই লিগে জেলার দল গুলি খেলবে না। জেলা ও কলকাতার অনূর্ধ্ব-২৩ দল নিয়ে বেঙ্গল লিগ করুক।
প্রশ্নঃ তিন প্রধান যদি সিনিয়র দল না খেলায় তাহলে তো স্পনসর আসবে না।
দেবাশিস দত্তঃ টাকা তোলাটাই কি মূল লক্ষ্য? তাই যদি হয় তাহলে তিন প্রধানকে নিয়ে দুর্গাপুর,শিলিগুড়ি ও কলকাতায় সিরিজ খেলানো হোক। স্পনসর আসবে। সমস্যা নেই তো।
প্রশ্নঃ আপনারা আইএফএ-এর কাছ থেকে ১২ লক্ষ টাকা নিলেন অথচ লিগটা খেললেন না। এটা খারাপ বার্তা যাচ্ছে।
দেবাশিস দত্তঃ বকেয়া টাকা চাইতে পারব না? টাকা না দিলে লিগ খেলব না তা কখনই বলিনি। আমরা একাধিকবার চিঠি দিয়ে আমাদের সমস্যার কথা জানিয়েছি। এএফসি ম্যাচের জন্য আমরা কোন সময়ে খেলতে পারব তার উল্লেখ করে চিঠি দিয়ে জানিয়েছিলাম। আইএফএ প্রথমে রাজি হয়েছিল। পরে ওরা করে উঠতে পারেনি। টাকার কথা বলছেন, ইস্টবেঙ্গল প্লেয়ারদের টাকা না দেওয়ায় তাদের ব্যান করে দিয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল যদি শাস্তি পেতে পারে তাহলে একই কারণে আইএফএ-র শাস্তি হবে না কেন? আইএফএকে কে দেবে শাস্তি? আমি প্রাপ্য টাকা চেয়ে অন্যায় করে ফেলেছি?
প্রশ্নঃ আগামীকাল (সোমবার) লিগে না খেলার জন্য আইএফএ শৃংখলা রক্ষা কমিটির জরুরি সভা ডেকেছে। শোনা যাচ্ছে, আপনাদের শাস্তি দিতে পারে। আপনারা কি পদক্ষেপ করবেন?
দেবাশিস দত্তঃ গঠন মূলক আলোচনা না করে ওরা শুধু শাস্তি নিয়ে ভাবে। আপনি একটু আগে একটা প্রশ্ন করেছিলেন, নিতুদা, ষষ্ঠীদাকে নিয়ে চলেন। ঠিকই। ষষ্ঠীদা একজন আইএফএ-এর সভাপতি। তিনি ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১৮ ঘন্টা ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে থাকেন। ষষ্ঠীদাকে সম্মান করি। এরপর আপনি বলুন, সেই আইএফএ-এর উপর মোহনবাগান আস্থা রাখতে পারবে? আইএফএ,সিএবি পেরেন্ট বডি। এই পেরেন্ট বডির পদাধিকারীদের এসবের উর্দ্ধে থাকতে হয়। সোমবার আইএফএ কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে তা দেখে আমাদের কোম্পানি বোর্ড সদস্যরা আলোচনায় বসব। তারপর সিদ্ধান্ত নেব।
প্রশ্নঃ তার মানে আইএফএ-এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন।
দেবাশিস দত্তঃ আমি প্রদ্যোৎ দত্তকে সম্মান করতাম। প্রদ্যোৎ দত্ত বেঁচে থাকলে বাংলার ফুটবলের এই হাল হত না। আমাদের দুর্ভাগ্য উনি কম সময়ে চলে গিয়েছেন। উনি যদি এআইএফএফের সভাপতি হতেন ভারতীয় ফুটবলের চেহারাটাই বদলে দিতেন। প্রদ্যোৎ দত্তর দ্বিতীয় সংস্করণ আর হবে না।
প্রশ্নঃ এই মুহূর্তে আপনি আইএফএ-এর সচিব হলে মোহনবাগানকে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নিতেন?
দেবাশিস দত্তঃ মোহনবাগান সচিবের সঙ্গে আলোচনায় বসতাম। ফুটবলের স্বার্থে সবাই এগিয়ে আসুন। এএফসি খেলছেন। খেলুন, পরের বছর লিগ খেলুন। তিন প্রধান সহ অন্য ক্লাব কতাআদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি কমিটি গড়তাম। লক্ষ্য ফুটবলের উন্নয়ন।
প্রশ্নঃ পরের মরসুমে কলকাতা লিগ খেলবেন?
দেবাশিস দত্তঃ অবশ্যই খেলব। তবে আমরা অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলাব।
প্রশ্নঃ শেষ প্রশ্ন করছি, প্রায় তিন দশক ধরে মাঠ করছেন। ময়দানে আপনার গড ফাদার কে? টুটু বসু নাকি অঞ্জন মিত্র?
দেবাশিস দত্তঃ প্রভু জগন্নাথ