মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজের জের, ময়দানের ৪ প্রাচীণ ক্লাবকে ছাড়তে হচ্ছে নিজস্ব তাঁবু

0

◆সন্দীপ দে ◆

পার্ক স্ট্রিট থেকে ধর্মতলা পযর্ন্ত যে মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজ শুরু হচ্ছে,তার জন‍্য গড়ের মাঠের ৪ প্রাচীন ক্লাবকে নিজেদের স্থায়ী তাঁবু ছাড়তে হচ্ছে। মেট্রো রেলের তরফ থেকে এই চারটি ক্লাবকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ইতিমধ‍্যে জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। শতাব্দী প্রাচীন ক্লাব খিদিরপুর স্পোর্টিং(প্রতিষ্ঠিত ১৯১৭), রাজস্থান ক্লাব (প্রতিষ্ঠিত ১৯১৮), কেনেল ক্লাব ( প্রতিষ্ঠিত ১৯০৬) ও ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবকে (প্রতিষ্ঠিত ১৯৩২) তাদের নিজস্ব তাঁবু ছেড়ে দিতে হচ্ছে।

তাহলে এই চারটি ক্লাব কোথায় যাবে? কোথায় হবে তাঁদের নতুন ঠিকানা? সেই ব‍্যবস্থাও করেছে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। কালীঘাট ক্লাব ও রাজস্থান মাঠের একটা অংশে উন্নতমানের সিট দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে এই চার ক্লাবের অস্থায়ী তাঁবু। যতদিন মেট্রো রেল সম্প্রসারণের কাজ চলবে (অনুমান করা যায় দুই থেকে তিন বছর) ততদিন এই চার ক্লাবের আস্তানা হবে কালীঘাটের মাঠেই।

একেকটা ক্লাবের চাহিদা মতো অস্থায়ী তাঁবুর একাধিক কন্টেইনার দেওয়া হচ্ছে। যেমন শোনা যাচ্ছে ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাব পেতে চলেছে তিন থেকে চারটি কন্টেইনার। খিদিরপুর পাচ্ছে দুটি। রাজস্থান সম্ভবত দুই থেকে তিনটি পাবে। আর কেনেল পাচ্ছে একটি কন্টেইনার। যতদিন কাজ চলবে ততদিন কালীঘাট মাঠে খেলা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে রাজস্থান মাঠে খেলা হবে।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, খিদিরপুর ক্লাবটির স্থায়ী তাঁবু হল ধর্মতলার গ্র‍্যান্ড হোটেলের উল্টো দিকের রাস্তার ধারে। অর্থাৎ ময়দান মার্কেটের পাশে। এই ক্লাবের সঙ্গে আছে জনপ্রিয় খাবারের দোকান (ক‍্যান্টিন)। এই মহুর্তে ক‍্যান্টিনকে উঠতে না হলেও কিছুদিন পর বন্ধ করে দিতে হবে। তবে খিদিরপুর ক্লাব কর্তাদের সম্ভবত এই জুন মাসেই স্থায়ী তাঁবু ছেড়ে দিতে হবে।

বাকি তিনটি ক্লাব পার্ক স্ট্রিট থেকে মেও রোডের ধারে পরপর থাকা ক‍্যালকাটা পুলিশ, কেনেল ক্লাব এবং রাজস্থান ক্লাব। ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত ক‍্যালকাটা পুলিশ ক্লাবের ফুটবল ও ক্রিকেট টিম আছে। কলকাতার গড়ের মাঠে এই কেনেল ক্লাব প্রতিষ্ঠিত ১৯০৬ সালে। এই ক্লাব কোনও খেলাধূলার সঙ্গে যুক্ত নয়। ব্রিটিশ আমল থেকে মূলত কুকুর প্রদর্শনীর (ডগ শো) জন‍্য এই কেনেল ক্লাবের শুরু। প্রসঙ্গত, ১৮৫৯ সিলে ইংল‍্যান্ডের বার্মিংহামকে প্রথম কুকুর প্রদশর্নী (ডগ শো) স্বীকৃতি পায়। পরবর্তীকালে এই ডগ শো বিভিন্ন দেশে ছড়ায়। কাজেই কলকাতার কেনেল ক্লাব মূলত ডগ শো কেন্দ্রিক।

শতাব্দী প্রাচীন রাজস্থান ক্লাব একটা সময় খুব ভাল ফুটবল ও ক্রিকেট টিম গড়ত। এখনও তারা সিএবি ও আইএফএ লিগে অংশ নেয়। এই রাজস্থান ক্লাব থেকে একাধিক নাম করা ফুটবলার খেলে গিয়েছেন। তাঁদের মধ‍্যে অন‍্যতম হলেন জার্নেল সিং।

খিদিরপুর স্পোর্টিং মানেই ভারতীয় ফুটবল দলের একদা সাপ্লাই লাইন ছিল। সাত, আটের দশকে এই খিদিরপুর থেকেই জাতীয় দলে এক সঙ্গে সুযোগ পেতেন ৬ থেকে ৮ জন ফুটবলার। এই খিদিরপুর ক্লাব থেকেই উঠে এসেছেন ভারতের বহু তারকা ফুটবলার। তালিকাটি দীর্ঘ।

সব মিলিয়ে এই চারটি ক্লাবকে উঠে যেতে হলেও মেট্রোরেল সম্প্রসারণের কাজের শেষে তাদের স্থায়ী তাঁবুতেই ফিরে আসতে পারবে। জানা গেল, এই চারটি ক্লাবের মাটির নিচ দিয়ে মেট্রোর কাজ হবে। তাই কাজ শেষে সংশ্লিষ্ট চার ক্লাবকে নতুন করে তাঁবু তৈরি করে দেবে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। প্রসঙ্গত, শুধু এই চার ক্লাব নয়, উঠে যেতে হবে ময়দান মার্কেটকেও। কাজের শেষে নতুন করে ময়দান মার্কেট তৈরি করে দেওয়া হবে। দোতালাও করে দেওয়ার কথা চলছে। এই ময়দান মার্কেটে মাসে কয়েক কোটি টাকার ব‍্যবসা হয়। উঠে যেতে হলে কোথায় যাবে? কোথায় হবে মার্কেটের নতুন ঠিকানা? এখনও নিশ্চিত নয়। তবে শোনা যাচ্ছে, প্রেস ক্লাবের পিছনে মাউন্টেইন পুলিশের যে বড় মাঠ আছে সেখানে ময়দান মার্কেকট স্থানান্তরিত হতে পারে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here