◆আইএফএ সচিব অনির্বান দত্তর হাত থেকে নবাব কাপ নেওয়ার পর বিএফএ- ফুটবলাররা। রবিবার লালবাগে◆
ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : তিন বছর পর শুরু হয়ে সুষ্ঠুভাবেই শেষ হল মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল টুর্নামেন্ট নবাব কাপ। রবিবার মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরের আস্তাবলের মাঠে নবাব কাপের ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল রাজ্য সরকারের একমাত্র বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি ও কলকাতার বিধাননগর মিউনিসিপাল স্পোর্টস ফুটবল অ্যাকাডেমি।
ফাইনালে বিধাননগরকে ২-০ গোলে হারিয়ে নবাব কাপ চ্যাম্পিয়ন হল বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমি। এই অ্যাকাডেমির ফুটবলাররা নিয়ম করে অনুশীলন করলেও টুর্নামেন্ট খেলত না। কিন্তু অ্যাকাডেমির চিফ কোচ অনন্ত ঘোষ মনে করেন, ফুটবলাররা টুর্নামেন্ট না খেললে ফুটবল মাঠে ফুটবলারদের সঠিক বিকাশ ঘটবে না। তাই ক্রীড়ামন্ত্রীর অনুমতি নিয়েই জেলার সুসংগঠিত টুর্নামেন্টে খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কোচ অনন্ত ঘোষ। ডিসেম্বরেও রায়গঞ্জের (উত্তর দিনাজপুর) প্রাচীন টুর্নামেন্ট ‘কুলদাকান্ত শিল্ড’-এ অংশ নিয়ে ভাল ফুটবল উপহার দিয়েছিল রাজ্য সরকারের এই অ্যাকাডেমির ছাত্ররা। সব কিছু ঠিক থাকলে বেঙ্গল ফুটবল অ্যাকাডেমির এই ফুটবলাররাই আগামী মরসুমে কলকাতা লিগ খেলবে।
এদিন ফাইনাল ম্যাচে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইএফএ সচিব অনির্বান দত্ত, আইএফএ সহসভাপতি ও মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি। লালবাগের ফুটবল পরিবেশ দেখে খুশি আইএফএ সচিব। ফোনে তিনি বলেন,”মুর্শিদাবাদের ফুটবলকে ঘিরে উজ্জ্বল ইতিহাস আছে। এই জেলায় হুইলার শিল্ড, নবাব কাপ খুব বিখ্যাত টুর্নামেন্ট। খবর নিয়ে জেনেছি, বহরমপুর শহরে হিন্দ ক্লাব ও ফ্রেন্ডস ইউনিয়নের মধ্যে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগানের মতো রেষারেষি আছে। জেলার ফুটবলকে বাঁচাতে হলে এই ফুটবল ঐতিহ্যকে বাঁচাতে হবে। সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
মুর্শিদাবাদ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সচিব বিশ্বজিৎ ভাদুড়ি এই মুহূর্তে আইএফএ-এর সহসভাপতি। তিনি বলেন,”মুর্শিদাবাদের ফুটবলকে পুরনো জায়গার ফেরানোর খুব চেষ্টা হচ্ছে। সংস্থার সকল সদস্য ছাড়াও বেশ কিছু ক্লাব কর্তারাও এগিয়ে আসছেন। আমাদের জেলার হুইলার শিল্ড বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু লালবাগের শতাব্দী প্রাচীন বান্ধব সমিতি এখনও নবাব কাপটা চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। এরজন্য পুরো কৃতিত্ত্ব বান্ধব সমিতির কর্তাদের।”
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, ১৯০২ (মতান্তরে ১৯১৬) মুর্শিদাবাদের লালবাগ শহরে শুরু হয়েছিল এই নবাব কাপ। ট্রফিটা পুরোটাই রুপোর তৈরি। জনপ্রিয় এই নবাব কাপ শুর করেছিলেন মীরজাফরের বংষধর নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা। তিনি যখন ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করছিলেন সেই সময় ইংল্যান্ডের রানী নবাবের নৈপুন্যে খুশি হয়ে এই রূপোর ট্রফিটি উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। যার একদিকে ব্রিটিশ প্রতীক খোদায় করা আছে। দেশে ফিরে নবাব ওয়াসেফ আলি ট্রফিটির অপর প্রান্তে নবাবের বাসস্থান ‘ওয়াসেফ মঞ্জিল’ -এর প্রতীক খোদায় করেন। তারপর লালবাগ শহরের আস্তাবল মাঠে ‘নবাব কাপ’ নামে ফুটবল টুর্নামেন্ট শুরু করেছিলেন।
স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ দলগুলি এই নবাব কাপে অংশ নিত। ১৯৪৬ সালে নবাব ওয়াসেফ আলি মির্জা এই নবাব কাপের দায়িত্ব তুলে দিয়েছিলেন লালবাগ শহরের প্রাচীন ক্লাব বান্ধব সমিতির হাতে। এই বান্ধব সমিতির প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ১৯১৯ সালে। এই নবাব কাপ ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে ফের শুরু হয়। কিন্তু কোভিডের কারণে তিন বছর এই টুর্নামেন্ট করা যায়নি। সব বাধা কাটিয়ে এই বছর আবার মুর্শিদাবাদের ঐতিহ্যবাহী নবাব কাপ সুষ্ঠুভাবেই করতে পেরেছেন বান্ধব সমিতির কর্তারা।
বান্ধব সমিতির সচিব পার্থ বনিক জানান,”এই টুর্নামেন্ট আমরা উদ্যোগ নিয়ে করি ঠিকই কিন্তু এলাকার সকল স্তরের মানুষ পাশে না থাকলে সম্ভব হত না। আসলে নবাব কাপ আমাদের জেলার ঐতিহ্য। তাকে রক্ষা করতে সবাই এগিয়ে এসেছেন। ভবিষ্যতে যাতে নবাব কাপ বন্ধ না হয়ে, কিভাবে আরও ভালভাবে এবং বড় করে করা যায় সেই বিষয়ে আমরা ভাবনা চিন্তা করছি। সব কিছুই নির্ভর করছে সবার পাশে থাকার উপর। আশাকরি আগের মতোই সবাই পাশে থাকবেন।”