ইনসাইড স্পোর্টসের প্রতিবেদন : মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ক্রীড়া ব্যক্তিত্বদের বিদেশ সফর সম্ভবত এই প্রথম। প্রথমে ঠিক ছিল ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলির সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে স্পেন যাবেন ফুটবলার সুনীল ছেত্রী। কিন্তু সদ্য পুত্র সন্তানের বাবা হওয়ায় সুনীল স্পেন যাচ্ছেন না। তবে কলকাতার তিন প্রধানের তিন কর্তাদের সঙ্গে নিয়ে গেলেন মমতা।
এবার স্পেনেও কি ‘খেলা হবে?” বিদেশ থেকে লগ্নি আনার চেষ্টায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পেন গেলেন। কিন্তু বানিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে স্পেন সফরে হঠাৎ সৌরভ গাঙ্গুলি সহ কলকাতার তিন প্রধান ক্লাবের কর্তাদের সঙ্গী কেন করলেন মুখ্যমন্ত্রী? এমন প্রশ্ন কদিন ধরেই উঠছিল? সেই প্রশ্নের অস্পষ্ট উত্তর পাওয়া গিয়েছে সোমবার নবান্নে। সাংবাদিক সম্মেলন করার সময় মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন,কিছু তো একটা হবে। সবটাই এখন বলে দিলে চমকটাই আর থাকবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মাদ্রিদ ও বার্সেলোনা শহর থেকে দুবাই হয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর কলকাতায় ফিরবেন। স্পেনের যে দুটি শহরে মমতা সহ এক ঝাঁক বাঙালি থাকবেন সেই দুটি শহরেই ফুটবলের শহর হিসেবেই বিশ্বে পরিচিত। এখনও পযর্ন্ত যা খবর তা হল, ১৪ সেপ্টেম্বর মাদ্রিদ শহরে স্পেনের সর্বোচ্চ লিগ ‘লা লিগা’র সভাপতি হাভিয়ার তেভাজের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে থাকবেন সৌরভ সহ তিন প্রধান ক্লাবের তিন কর্তা। বাংলার ফুটবলের স্বার্থে লা লিগার সঙ্গে একটা মৌ স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা আছে। লা লিগা থেকে বাংলা ঠিক কি ধরনের সুবিধা পেতে পারে সেটা জানা যাবে ১৪ সেপ্টেম্বর।
মোহনবাগান থেকে দেবাশিস দত্ত, মহমেডান থেকে ইসতিয়াক আহমেদ মুখ্যমন্ত্রীর সফরসঙ্গী। কিন্তু ইস্টবেঙ্গল থেকে কে যাবেন সেটা নিয়েও বিস্তর সমস্যায় পড়ে গিয়েছিলেন ছিলেন ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের কর্তারা। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সফরসঙ্গী হিসেবে দেবব্রত সরকারের নামটাই অটোমেটিক চয়েস ছিল। কিন্তু আইনি জটিলতা থাকায় এই মুহুর্তে বিদেশে যেতে পারবেন না দেবব্রত সরকার।
তাহলে ক্লাব থেকে কে স্পেন যাবেন? প্রথমে ক্লাবের অভিজ্ঞ কর্তা রজত(রাজা) গুহর কথা ভাবা হয়। কিন্তু তিনি এক মাস আগেই উত্তরবঙ্গে ব্যবসায়িক এনগেজমেন্ট আছে। যেতে পারবেন না। সচিব কল্যাণ মজুমদারের শরীর মোটেও ভাল নয়। ক্লাব সভাপতি ডাঃ প্রণব দাশগুপ্ত পেশাগতভাবে ব্যস্ত। তিনিও যেতে পারবেন না জানিয়ে দিয়েছিলেন। ফুটবল সচিব সৈকত গাঙ্গুলিও কাজে আটকে আছে। অবশেষে ক্লাবের সহসচিব (আদি বাড়ি ত্রিপুরা) সেই স্বর্ণব্যবসায়ীর কপালে শিকে ছিঁড়ল। দেবাশিস দত্ত বা ইসতিয়াক আহমেদ দীর্ঘদিন ধরে ক্লাব সংগঠন করছেন। তাঁদের একটা অভিজ্ঞতাও আছে। মাদ্রিদে গিয়ে ইস্টবেঙ্গলের এই সহসচিবের সামনে যদি বাংলার ফুটবল নিয়ে বিশ্লেষণ করার সুযোগ আসে,তাহলে তিনি কি বিশ্লেষণ করবেন? গড়ের মাঠেই এমন প্রশ্ন উঠছে।
অবাক কান্ড হল, পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ফুটবল নিয়ামক সংস্থা আইএফএকে স্পেন সফর থেকে কেন বিরত রাখা হল জানা যায়নি। বাংলার ফুটবলে উন্নয়নে তিন প্রধান ক্লাব কোনও দিনই গঠন মৃলক কাজ করতে পারেননি বা করেননি। ডার্বি ম্যাচে জয় পাওয়া আর ট্রফি জেতার লক্ষ্য নিয়েই পড়ে থাকেন তিন প্রধানের কর্তারা। সমাজ, সময় বদলালেও এই কর্তাদের মানসিকতা এখনও বদলায়নি। কাজেই এই স্পেন সফরে মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে ফুটবলের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিতে পারেন সৌরভ গাঙ্গুলি। ইদানিং সৌরভও ফুটবল নিয়ে ভাবনা চিন্তা করেন। ইন্টারন্যাশনাল সেলিব্রিটি, দক্ষ সংগঠক, স্পোর্টস মার্কেটিং বিষয়টা খুব ভাল জানেন। চার বছর আগে জেলা ফুটবলের স্বার্থে ওয়েষ্ট বেঙ্গল ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস ফেডারেশনকে মোটা টাকার স্পনসর এনে দিয়েছিলেন এই সৌরভ। গত বছর ইস্টবেঙ্গলের স্পনসর সমস্যা মেটানোর জন্য এই স্পেনের মাধ্যমেই এগিয়ে এসেছিলেন তিনি। এই সফরে বাংলার ক্রীড়া জগতে সেরা মুখ বা প্রতিনিধি হচ্ছেন সৌরভ গাঙ্গুলিই।
পাশাপাশি বিদেশের মাটিতে এবং রাজ্যের স্বার্থে সৌরভকে মমতার সঙ্গে দেখা গেলে তা ‘রাজনৈতিক বার্তা’ দেবে বলেও অনেকে মনে করছেন। প্রসঙ্গত, সৌরভ, বৌ- মেয়ের সঙ্গে লন্ডনে আছেন। লন্ডন থেকে সরাসরি মাদ্রিদ পৌঁছবেন সৌরভ।